আসামির সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ, রাষ্ট্রপক্ষের ৪ আইনজীবী প্রত্যাহার
দিনাজপুর আদালত

আসামির সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষের ৪ আইন কর্মকর্তা প্রত্যাহার

আসামির সঙ্গে যোগাযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে দিনাজপুর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত এবং সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের চারজন সরকারি কৌঁসুলিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাহার আদেশ বলবৎ থাকবে।

পাবলিক প্রসিকিউটর রবিউল ইসলাম (রবি) স্বাক্ষরিত পৃথক চারটি চিঠিতে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিষয়টি জানানো হয়। ওই চিঠিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর- সলিসিটির/জিপি-পিপি দিনাজপুর কার্যালয়ের স্মারক নম্বর ০৫.৫৫.২৭০০.০০৮.০৪.০০১.২০-১৮৮(৭০) এর কথা উল্লেখ করা হয়।

প্রত্যাহারকৃতরা হলেন- অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-৪ এর অতিরিক্ত পিপি দেলোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-৪ এর এপিপি মেহেরুল ইসলাম, অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২ এর এপিপি হাসনে ইমাম নয়ন এবং সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক আদালত-৩ এর এপিপি রনি চন্দ্র রায়।

পাবলিক প্রসিকিউটর রবিউল ইসলাম (রবি) স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়মিত কোর্টে উপস্থিত থেকে মামলা পরিচালনা না করা, রাষ্ট্রপক্ষের স্বার্থ বাদ দিয়ে আসামির সঙ্গে যোগযোগ রেখে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করাসহ দল বিরোধী নানা কার্যক্রমে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট ও গুরুতর অভিযোগ থাকায় এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পাবলিক প্রসিকিউটর রবিউল ইসলাম (রবি) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আগামী ৮ এপ্রিল জেলা আইনজীবী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের একটি প্যানেল হয়েছে এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের একটি প্যানেল হয়েছে।

রবিউল ইসলাম বলেন, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট তহিদুল হক সরকার জেলা আইনজীবী পরিষদের সভাপতি হয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের বিপক্ষে একটি প্যানেল দিয়েছেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আ ন ম হাবিবুল্লাকে সেক্রেটারি (সাধারণ সম্পাদক) করে এ প্যানেল দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার এপিপি সঙ্গে সরকারি যারা আইন কর্মকর্তা আছেন, তাদের নিয়ে মিটিং করেছি। তাদের বলা হয়েছে, আপনারা সরকার এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বে আছেন। যদি আলাদা প্যানেল করতে হয়, তবে পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তারা পদত্যাগ করেননি। এ মর্মে চারজনকে আমি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করেছি।

এ বিষয়ে কথা হলে এপিপি মেহেরুল ইসলাম বলেন, আদালতে নিয়মিত উপস্থিত হই না বা রাষ্ট্রপক্ষের স্বার্থ বাদ দিয়ে আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিই, এটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ।

তিনি বলেন, আসন্ন জেলা আইনজীবী পরিষদ নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় আমরা বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের পক্ষে অবস্থান নেইনি। আমরা রাষ্ট্রের কাজ করি। দিনাজপুর আইনজীবী পরিষদ ও আইনজীবীদের উন্নয়নের জন্য আসন্ন নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট তহিদুল হক সরকারের পক্ষে কাজ করেছি। তাই তারা এমন অভিযোগ করেছে।

এপিপি রনি চন্দ্র রায় বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সামনে আমাদের আইনজীবী পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আমাদের প্রতিপক্ষ প্যানেলের পরাজয় হবে, তাই তারা এ ধরনের অভিযোগ করেছেন। আগামী ৮ তারিখের নির্বাচন হয়ে গেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

অতিরিক্ত পিপি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাকে অতিরিক্ত পিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমি যোগদান করিনি। আমি রাষ্ট্রপক্ষের কোনো মামলা পরিচালনা করিনি। আমি নারী ও শিশু আদালতের পিপি ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এ ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২ এর এপিপি হাসনে ইমাম নয়নের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সূত্র : বাংলানিউজ