বিচার বিভাগীয় তদন্ত: মজলুমের বিরুদ্ধে একতরফা অস্ত্র
অ্যাডভোকেট এম. মাফতুন আহমেদ

‘বিচার বিক্রি ডাকাতির চেয়েও খারাপ’

এম.মাফতুন আহমেদ : অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে আপনি কিছু বলবেন না। আমি বলবো না। কাউকে না কাউকে দেশ-জাতির জন্য তর্জনী উচিয়ে হককথা বলতে হবে। জাতির মুক্তির নিনাদ বাজাতে হবে। বলতে হবে খামোশ! বন্ধ করো এসব রং তামাশা। আপনি কী চান এদেশ সিরিয়া, সোমালিয়া এবং দক্ষিণ সুদান হোক। এসব রাষ্ট্রের মতো দুর্নীতিতে ফাস্ট হোক, একটি জাতি রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যাক। যদি না চান তাহলে কেন বলতে পারেন না এক্ষুণী দুর্নীতির ডালী গুটিয়ে ফেলুন। কেন বলতে পারেন না আপনি দেশপ্রেমিন নন। জাতীয় শত্রু, বেঈমান।

বলবেন মাথার ওপর আইন খড়গ ঝুুলছে। কে জেল হাজতের ভাত খাবে? সেটাও কথা। তবে আইনতো মানুষের জন্যে। আইন ও সংবিধান কী বলছে কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না? আপনাকে বলতে হবে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়ঃ

“……বল বীর –
আমি চির-উন্নত শির!
আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
আমি দুর্ব্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!
আমি মানি নাকো কোনো আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি,আমি টর্পেডো,আমি ভীম,
ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
বল বীর –
চির উন্নত মম শির!”

কবে ছিল না এদেশে ঘুষ, দুর্নীতি। দুর্নীতি দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে এদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি চলছে। অতঃপর ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। প্রায় দু’হাজার বছর আগে মনুস্মৃতি সংকলিত হয়। দু’জন মার্কিন অধ্যাপক মনুস্মৃতি সপ্তম অধ্যায়ের ১২৩ ও ১২৪ অনুচ্ছেদের নিম্নরূপ ইংরেজি অনুবাদ করেছেন।

(123) For the men who are appointed by the king to protect (his subjects)generally who take the property of others and he must protect those subjects from them.(124) The king should banish and confiscate all the property of those evil- minded men who take money from parties to law suitsÓ. (D0niger, Wendy and smith, Brian. k., The Laws  of Manu

Source: New Delhi, Penguin Book India 1991)P.141)

অর্থাৎ- (১২৩) প্রজাদের রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে রাজা যাঁদের নিয়োগ করেন তাঁরাই ভণ্ডামি করে অন্যদের সম্পত্তি গ্রাস করে এবং রাজাকে এ ধরনের কর্মকর্তাদের হাত থেকে প্রজাদের রক্ষা করতে হবে। (১২৪) রাজার দায়ি হল যে সব দুষ্ট লোক মামলার বিভিন্ন পক্ষ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে তাদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া এবং তাদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মত বাংলাদেশেও ব্যাপক দুর্নীতি ছিল। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে দুর্নীতির জীবন্ত বর্ণনা রয়েছে। ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরাম লিখেছেনঃ

“সরকার হইলা কাল খিল ভূমি লিখে লাল
বিনা উপকারে খায় ধূতি”

সরল ভাষায় এর অর্থ “রাজস্ব কর্মকর্তা (সরকার) অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনাবাদি জমিকে কর্ষিত জমি গণ্য করছে (যার ফলে অতিরিক্ত খাজনা দিতে হবে) এবং ধূতি ঘুষ নিয়েও কাজ করছে না। মুকুন্দরামের লেখা পড়ে মনে হয় ঘুষ দেওয়াতে তার দুঃখ নেই। তার দুঃখ হলো ধূতি উৎকোচ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ষোড়শ শতকের বাঙ্গালি কবি ও ক্যারিটের বর্ণিত পাঞ্জাবী ঠিকাদারের নালিশ একই”।
মলুয়া লোকগীতিতে স্থানীয় কাজী সম্পর্কে নিম্নরূপ বর্ণনা দেখা যায়

“বড়ই দুরান্ত কাজী ক্ষেমতা অপার
চোরে আশ্রা দিয়া মিয়া সাউদেরে দেয় কার
ভাল মন্দ নাহি জানে বিচার আচার
কুলের বধু বাহির করে অতি দুরাচার”

(বড় দুরান্ত কাজীর অপার ক্ষমতা রয়েছে। সে চোরকে আশ্রয় দেয়, সাধুকে দেয় কারাবাস, ভাল মন্দ বা আচার বিচার জানে না। সে এতই খারাপ যে কুলের বধুদের ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসে।)

ইউলিয়াম পিট ১৬৬৬ সালে হাউস অব লর্ডসে মন্তব্য করেছিলেন,“Where Law ends tyranny begins”. অর্থাৎ-যেখানে আইনের প্রয়োগ শেষ সেখানে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু।

সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা বা দুর্নীতির দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি কিনা জানি কিনা। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই। তবে ১৭ কোটি জনগণ ভাল বলতে পারবেন। তবে একজন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই প্রতিটি বিষয় সহনীয় পর্যায়ে থাকা উচিত। তা না হলে সে জাতির পতন অবশ্যম্ভবী। মানবিকতা তলানীতে বলেই দুর্নীতি আজ সর্বগ্রাসী। সন্তান পিতার কাছে ঘুষ চায়। কারণ সন্তানের মধ্যে মানবিকতা,নৈতিকতা অবলুপ্ত হয়েছে। যার ফলে সোজা পথে না চলে বাঁকা পথে হাটছে।

জজ চলে বাদুরঝুলে, নাজির চলে টেক্সিতে

আমি কে, কী আমার পরিচয়, কী আমার পেশা? এসবের সাথে ব্যক্তির কোন কিছুর এখন মিল নেই। মায়া, ভালবাসা বলে পরস্পরের মধ্যে কিছুই নেই। সম্পর্ক শুধু টাকা আর টাকা। লুকোচুরির কিছুই নেই। এসব এখন ওপেন সিক্রেট। অফিস-আদালতে চেয়ার টেবিল পর্যন্ত এখন ঘুষ চায়। লাজ-লজ্জা সব উঠে গেছে। ঘুষের কাছে সব দেওয়ানা। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের রচিত “গুড়িরাম মুচি পেশকার” বইটি’র কাহিনীকে আজকের চলমান সমাজ ব্যবস্থায় হার মানিয়ে দিয়েছে।

ঘটনাটি অলৌকিক নয়, বাস্তব। সাবেক পাকিস্তান আমল। ঢাকা জজ কোর্ট আঙ্গিনার কথা। “মুন্সেফ কোর্টে মামলার নথিপত্র থাকে সেরেস্তাদারের কাছে। শুনানীর আগে মুন্সেফের টেবিলে মামলার নথি উপস্থাপন, মামলার পরবর্তী তারিখ বাদী-বিবাদীকে জানিয়ে দেওয়াসহ অনেক কাজই করে থাকে সেরেস্তাদার। মমিন চৌধুরি সেরেস্তাদার। এসব কাজে বাদি-বিবাদী উভয়ের কাছ থেকে তিনি টাকা পয়সা নেয়। সে কখনও বাসে চড়ে না। তাঁর চলাচলের বাহন রিক্সা বা বেবিটেক্সি। সে কোর্টে যাতায়ত করে বেবিটেক্সিতে।

ঢাকা জজ কোর্টের মুন্সেফ কোয়ার্টার আজিমপুর কলোনীতে। এখান থেকেই মুন্সেফগণ পুরাণ ঢাকায় কোর্টে যাতায়াত করতেন বাসে। কারণ তাদের জন্য সরকারী যানবাহন বরাদ্দ ছিল না। মমিন চৌধুরিকে বেবিটেক্সিতে চড়ে কোর্টে যাতায়ত করতে দেখেছেন তার মুন্সেফ। কোনও কাজ উপলক্ষে এক সন্ধ্যায় মমিন চৌধুরি আজিমপুরে তার বস মুন্সেফের বাসায় যায় আমাকে সঙ্গে নিয়ে। আমি সাংবাদিক জেনে তিনি বললেন, ‘দেখুন তো নাজীর সাহেব, আমি মুন্সেফ কোর্টে যাই বাসে বাদুরঝোলা হয়ে। আর আমার কোর্টের সেরেস্তাদার মমিন চৌধুরী ইকবাল হল থেকে কোর্টে যাতায়াত করে বেবিটেক্সিতে। বলুন ত টাকা পায় কোথা থেকে। মোমিন চৌধুরীর চোখমুখ লাল হয়ে ঊঠল। মুন্সেফ সাহেব হেসে বিষয়টি হালকা করে দিলেন”। সূত্রঃ (আহমদ নজীর,‘কালের যাত্রা’, পৃঃ ২৫৮)

চলমান অফিস-আদালতে তল্লাসী করে দেখেন এ রকম তথ্যবহুল ঘটনা বহু আছে। কেরানী সাহেবদের কথায় অনেকে উঠে আর বসে। কারণ (!)। জাতি আর কী আসা করতে পারে? ঔপনিবেশিক শাসন আমলে কেরানী সাহেবদের কথায় বড় সাহেবরা শুনেছি উঠতেন আর বসতেন। সেটা তো ভিন্ন কথা। এটাতো আজকে স্বাধীন দেশ। এ জন্যে এদেশের মানুষ সেদিন জাতির পিতার নির্দেশে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করেননি। বড় সাহেব থেকে শুরু করে কেরানী সাহেবরা শহরে-গ্রামে প্রসাদপম ক’টি করে বাড়ী করেছে,গাড়ী করেছে। এসব দেখভালের কেউ কী নেই এই স্বাধীন বাংলাদেশে? স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন রয়েছে। তাদের কাজ কী? না তাদের হাত বাধা?

জজদের বিচার বিক্রি ডাকাতির চেয়েও খারাপ

বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। নির্লোভ, নির্মোহ, সহজ, সরল উঁচুমাপের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ছিলেন। যখন তিনি আইনপেশায় তখন ঢাকার মগবাজার চেম্বারে বসতেন। দূর অতীত নয়, কাছে থেকে তাঁকে দেখেছি। স্পষ্টভাষী লোক। ঘুষ, অনিয়ম নামীয় শব্দটি তাঁর মেমোরিতে আছে কিনা জানি না। থাকলে বিচারপতি হবার আগে দেশের চলমান বিচার ব্যবস্থার ওপর অনেক কথা দৃঢ়তার সাথে বলতে শুনেছি।

বিচার বিক্রি করলে বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : প্রধান বিচারপতি

সম্প্রতি “বিচার বিক্রি করা বিচারক ডাকাতের চেয়েও খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। একই সঙ্গে যে জজ বিচার বিক্রি করবে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহনের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। ঝিনাইদহে ১২ এপ্রিল ২০২৩ আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় দুর্নীতিকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের কেউ দুর্নীতি করলে তাকে রাখা হবে না”। বিচার বিভাগের নির্বাহী হয়ে প্রধান বিচারপতি মহোদয় অভিজ্ঞতা এবং চলমান বাস্তবতাকে উপলব্দি করে সাহসী এই মন্তব্যটি তিনি করেছেন। “বিচার বিক্রি করা বিচারক ডাকাতের চেয়েও খারাপ”। আমজনতার বক্তব্য প্রধান বিচারপতি যথার্থই মন্তব্য করেছেন। তবে বিচার যদি আঁধারে বিক্রি হয় একজন মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়। তাঁর শেষ ঠিকানা কোথায় কেউ জানে না। দূর্ভেদ্য দুর্নীতি আল্লাহ’র ওরস পর্যন্ত কেপে উঠে। এসব দুর্নীতিবাজদের বেঁচে থাকার চেয়ে আত্মহত্যা করা অনেক শ্রেয়।

আরও পড়ুনবিচার বিক্রি করলে বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : প্রধান বিচারপতি

ডাকাতের ধর্ম আছে। তথাকথিত ঘুষখোর দুর্নীতিবাজদের কোন ধর্ম নেই। তাদের সাথে সম্পর্ক অবৈধ টাকার। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন আমলে সমাজের একজন নিকৃষ্ট ব্যক্তিরও আদর্শ ছিল। দেশত্ববোধ ছিল। সুন্দর চিন্তা-চেতনা ছিল। তারা দেশ-জাতিকে নিয়ে চিন্তা করতেন। সর্বসাধারনের মঙ্গল কামনায় দিনরাত গুজরান করতেন। নিজের অর্জিত ধন-সম্পদ জনগনের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন।

১৭৯২ সালের শেষদিকের কথা। খুলনা-বাখরগঞ্জ এলাকায় একবার প্রজা বিদ্রোহ হয়েছিল। সে যুগের রবীনহুড আবদু ডাকাতের কাহিনী ইতিহাসবেত্তাদের কাছে আজও শোনা যায়। ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়। এই আবদু ডাকাত অত্যাচারি সরকার ও জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ডাকাতি করে টাকা পয়সা করেছেন। তবে এসব টাকা পয়সা তিনি ভোগ করেননি। সব অর্থ-সম্পদ গরীব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন। বিখ্যাত রাজনীতিক অশ্বিনী কুমার দত্ত তাই লিখেছেন,‘আমি যেন পর জন্মে আবদু ডাকাতের ছেলে হয়ে জন্মলাভ করতে পারি’। কী ছিল তাদের অনুপম আদর্শ। কী ছিল তাদের দেশত্ববোধ? আর আমি,আপনি! আঁখের গোছানোর ধান্ধায় ব্যস্ত। সূত্রঃ (অ্যাড. এম.মাফতুন আহমেদ,‘জনতার জবানবন্দী’,পৃঃ ৫৪)

আবারও বলছি প্রধান বিচারপতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন দুর্নীতিবাজ জজ, বিচারকদের বিরুদ্ধে অশনি সংকেত দিয়েছেন। চোখের সামনে বিশেষ করে অধঃস্তন আদালতে এসব দুর্নীতিবাজরা লেবাসী পোশাক পরে ঘুর ঘুর করছে। বিচার বিক্রি করছে। আকাশে-বাতাসে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে শোনা যাচ্ছে। কেউ বলবেন ওসব রিউমার।

মনে পড়ে গেলো সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক প্রধান লতিফুর রহমানের কথা। তিনি লিখেছিলেন-“বিচার আঙ্গিনায় সংশ্লিষ্ট কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাকে ঔই পদে আর থাকা উচিত নয়। যা ঘটে তা কিছুটা হলেও রটে”। সূত্রঃ (বিচারপতি লতিফুর রহমান,‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিচারক জীবনের দিনগুলি’) বইটি পড়লে এ বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানা যাবে।

ঘুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। প্রত্যাশিত ফলোদয় কতটুকু হচ্ছে জানি না। তাই অনেকে বলেন ঘুষের বিরুদ্ধে দরখাস্ত দিয়ে প্রতিকার কী? ক্ষোভে অনেকে বলেন কার কাছে প্রতিকার চাইবো? কোন কাজতো হতে দেখি না।

প্রসঙ্গত সাড়ে চার হাজার বছর আগে রচিত এক মিশরীয় কবির ফরিয়াদ করে তিনি একটি কবিতা লিখেছিলেনঃ

“আমি আজ কাকে বলবো?
ভাইয়েরা মন্দ।
আজকের বন্ধুদের হৃদয়ে প্রেম নেই।
আমি আজ কাকে বলবো?
মানুষের হৃদয় তস্কর সুলভ।
প্রতিবেশীরা প্রতিবেশীদের মাল গ্রাস করছে।
আমি আজ কাকে বলবো?
সজ্জনেরা লোপ পাচ্ছে।
নির্লজ্জরা সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে
আমি আজ কাকে বলবো?
কেউ তার কু-আচারনে অন্যের ক্রোধের উদ্রেক করলে
সবাই হাসছে যদিও এই অন্যায় আচারণ আক্রোসপূর্ণ”।

আজকে প্রধান বিচারপতি ঘুষের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুশিয়ারী উচ্চরণ করেছেন। প্রকাশ্য বলেছেন “বিচার বিভাগের কেউ দুর্নীতি করলে তাকে রাখা হবে না”। শুধু অভয় বাণী নয়, বিচার প্রার্থীদের ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একটি জায়গা করে দিয়েছেন। মনে হয় মনুস্মৃতির সপ্তম অধ্যায়ের। “(124) The king should banish and confiscate all the property of those evil- minded men who take money from parties to law suits”. অর্থাৎঃ (১২৪) রাজার দায়ি হল যে সব দুষ্ট লোক মামলার বিভিন œপক্ষ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে তাদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া এবং তাদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা। প্রধান বিচারপতি মহোদয় এরকম একটি কঠিন বাণী হয়তবা উচ্চারণ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ। এসব দুর্নীতিবাজদের কারনে ধ্বংস হতে পারে না। এরা কারা? এদেশের আমজনতা ভাল জানেন। ফার্সি কবিতার কথা মনে পড়ে, “গুরবা কুমতান শব-ই- আউওয়াল”(বিড়াল মারো প্রথম রাতে)। এক্ষুণি সময় সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে। দুর্নীতিবাজদের প্রথম রাতেই মারতে হবে। এটা সময়ের দাবি।আম জনতার প্রানের দাবি।

লেখক: আইনজীবী ও সম্পাদক আজাদবার্তা