সুপ্রিম কোর্টে তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার নির্দেশ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালত চত্বরকে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ ঘোষণায় প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালত চত্বরে ফলজ গাছের ডাসা ফল সংগ্রহে বিধি-নিষেধ আরোপ করে পশু-পাখিদের প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের নিশ্চয়তায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে আজ সোমবার (১৫ মে) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম আরিফ মন্ডল স্ব-প্রণোদিত হয়ে এ আবেদন জানান। তিনি নিজেই ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রধান বিচারপতির প্রতি করা ওই আবেদনে আইনজীবী আরিফ মন্ডল বলেন, “সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমি স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই মর্মে আপনাকে অবহিত করছি যে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ বাংলাদেশের সমস্ত আদালত চত্বরে বিভিন্ন ফলদ গাছ রয়েছে। ঋতু বিশেষে ফুলে-ফলে আদালত চত্বরে সুগন্ধ বিরাজ করে।

গাছে গাছে ফুল ফোঁটার পর থেকে ফল পাকা অবধি বুলবুলি, টিয়া, কাক, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। আর বানর, কাঠবিড়ালী, বাদুর, শিয়ালের মত পশুদের আদালত চত্বরে পাকা ফলের সুমিষ্ট গন্ধে গাছের আশে পাশে বিচরণ করতে থাকে, আর এভাবেই দিনের পর দিন পশুপাখিরা ফলগুলো পাকার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।

সপ্তাহের বিচারিক কার্যক্রম চলাকালীন দিনগুলোতে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও বিচারসংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের পদচারণার কারণে গাছে গাছে পাখিদের কিচির মিচির সীমিত থাকে। কিন্তু রাত হলেই নির্জন আদালত চত্বরে পশুপাখিরা তাদের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে পায়। এভাবেই আদালত চত্বরের গাছে বসবাসকারী পশুপাখিদের জীবনচক্র চলতে থাকে।

পশুপাখিরা সাধারণত পাকা ফল খেয়ে জীবন ধারণ করে। অনেক সময় দেখা যায় চত্বরে গাছের ডাসা ফলগুলো আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঠিক তত্ত্বাবধাণের অভাবে রাত্রী বেলা হারিয়ে যায়! ফলশ্রুতিতে আদালত প্রাঙ্গণে উন্মুক্তভাবে বেড়ে ওঠা পশুপাখিগুলো তাদের ন্যায্য প্রাকৃতিক খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের খাদ্যচক্রের ব্যাঘাত ঘটছে।

জীববৈচিত্র রক্ষায় আদালত চত্বরে গাছের ফলমূলগুলো সংশ্লিষ্ট পশুপাখিরা যাতে একচ্ছত্রভাবে খাবার হিসেবে খেতে পারে তা নিশ্চিত করা আমাদেরই দায়িত্ব। দেশের অধস্তন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত বিদ্যমান পরিবেশ বিষয়ক আইনগুলো কার্যকর করতে সময় সময় বিভিন্ন আদেশ, রায়, নির্দেশনা দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জীব সম্পদের খাদ্যচক্র নিশ্চিত করা আমাদের বিচার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরও দায়বদ্ধতা আছে। আদালত চত্বরে বেড়ে উঠা পশুপাখির জীবন যাতে অযাচিত হুমকির সম্মুখীন না হয় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।

জীববৈচিত্র রক্ষণা বেক্ষণে আদালত চত্বরকে ‘সংরক্ষিত এলাকা বা বিশেষ এলাকা’ ঘোষণা করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি-২০১৮’ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে- প্রজাতিগত ও প্রতিবেশ বৈচিত্র সংরক্ষণে আমাদের কার্যকর পদক্ষপ গ্রহণ করা উচিত। জীববৈচিত্রের ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আদালত চত্ত্বরে সতর্কতামূলক নীতি গ্রহণ আবশ্যক।

‘বাংলাদেশ জীব বৈচিত্র আইন-২০১৭’ এর ধারা- ৩২ অনুযায়ী দেশের সকল আদালত চত্বরকে ‘জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যগত স্থান’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি রাখে। এর ফলে আদালত চত্বরে গাছে বসবাসকারী প্রাণীগুলোটিকে থাকবার সক্ষমতা অর্জন করবে। আদালত প্রাঙ্গণ সংশ্লিষ্টদের গাছ থেকে কাঁচা ফল অপরিকল্পিতভাবে আহরণ থেকে বিরত রাখা আবশ্যক।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এবং জেলা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ-কর্মচারীগণ আদালত চত্বরে গাছের পাকা ফল প্রাকৃতিকভাবে পশুপাখিরা যাতে খেতে পারে তা সঠিকভাবে তদারকি করতে হবে। এর ফলে এ চত্বর সংশ্লিষ্ট প্রাণীদের খাদ্যচক্রে কিছু অংশে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

অতএব, মহোদয় সঠিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে আদালত চত্বরেকে ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ বান্ধব চত্বর’ ঘোষণার লক্ষ্যে আদালত প্রাঙ্গণের ফলাদি গাছেই সংরক্ষণপূর্বক পশুপাখিদের খাদ্যচক্র নিশ্চয়তার সঠিক নির্দেশনা আবশ্যক। প্রতিবেশ বৈচিত্র রক্ষায় জীববৈচিত্রের খাদ্যচক্র বাধাহীনভাবে রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সকল জেলার আদালত চত্ত্বরে ফলাদি আহরণে বিধি-নিষেধের আদেশ দানে মর্জি হয়, যার জন্য অত্র দরখাস্তকারী আইনজীবী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।”