চুরি করতে গিয়ে নারী আইনজীবী হত্যা, দুই আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড
দণ্ড পাওয়া দুই আসামি সোলাইমান রবিন ও রাসেল জমাদ্দার

চুরি করতে গিয়ে নারী আইনজীবীকে হত্যা, দুই আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড

ঢাকার মিরপুরে ১১ বছর আগে রওশন আরা আক্তার নামে এক নারী আইনজীবীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার দায়ে দুই আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার (১১ জুন) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক এম আলী আহমদ এ রায় দেন।

দণ্ড পাওয়া দুই আসামি হলেন সোলাইমান রবিন ও রাসেল জমাদ্দার। রায় ঘোষণার আগে দুই আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সৈয়দ শামসুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চুরি করতে গিয়ে হত্যার দায়ে দণ্ডবিধির ৩৯৪ ধারায় এই রায় আসে। এই ধারার সর্বোচ্চ সাজাই আসামিদের দেওয়া হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুল হক বাদল।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাদিয়া আফরিন বলেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দুজন নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা পরিকল্পিতভাবে চুরির উদ্দেশ্যে ওই বাসায় ঢোকেন। চুরিতে বাধা দেওয়ায় রওশন আক্তারকে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যান তাঁরা।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

পরিবার নিয়ে মিরপুরের এক বাসায় থাকতেন অ্যাডভোকেট রওশন আক্তার। দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি তার বাসায় নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। টাকার জন্য তারা চুরির পরিকল্পনা করতে থাকেন।

চুরি করতে গিয়ে নারী আইনজীবী হত্যা, দুই আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড
আইনজীবী রওশন আক্তার

২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারা একটি বালিশের কভার নিয়ে অ্যাডভোকেট রওশন আক্তারের বাসার সামনে যায়। রওশন আক্তার দরজা খুললে তারা জানতে চায়, বালিশের কভারটি তার কি না। রওশন আক্তার বলেন, এটা তার না।

এ কথা বলার এক পর্যায়ে আসামিরা তাকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। বিছানার ওপর নিয়ে চাদর দিয়ে তার পা বেঁধে ফেলে। ছুরি বের করে তাতে ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেদের হাত কেটে ফেলে। পরে ওড়না পেঁচিয়ে রওশন আক্তারকে তারা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। বাসা থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে তারা চলে যায়।

এ ঘটনায় রওশন আক্তারের স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মাহবুব ই সাত্তার পরদিন মিরপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই দুই নিরাপত্তাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। মোট ১৫ জনের সাক্ষ্য শুনে রোববার তাদের দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলেন বিচারক।

রায়ের পর দণ্ডিতদের কোনো ভাবান্তর দেখা য়ায়নি। নিহতের জামাতা মাহমুদুল হাসান রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বলেছেন, দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় বিচার হলে ‘ভালো হত’।