মামলা ফাইলিংয়ের চেয়ে নিষ্পত্তির হার বেড়েছে : প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

একার হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে সব কাজ করা সম্ভব না: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ক্ষমতা যদি কারো একার হাতে পুঞ্জীভূত থাকে-কেন্দ্রীভূত থাকে তাহলে কোনভাবেই তার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব না। যদিনা, তার সাথে কিছু সমমনা লোক কাজ না করে।’

আজ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট মেডিয়েশন সেন্টার ও কোর্ট প্রযুক্তি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

এসময় হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি হবার পরপরই আমি যেটা ভাবি সেটা হচ্ছে, ক্ষমতা যদি কারো একার হাতে পুঞ্জীভূত থাকে-কেন্দ্রীভূত থাকে তাহলে কোনভাবেই তার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব না। যদিনা, তার সাথে কিছু সমমনা লোক কাজ না করে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আমি প্রধান বিচারপতি হবার পর দেশের ৮টা বিভাগের জন্য ৮ জন বিচারপতিকে দিয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করি। পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সে বিচারপতিরা উল্কার মত বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। এছাড়া ভার্চুয়ালি বিভিন্ন জেলার বিচারকদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শুনেছেন এবং সমাধানের চেষ্টা করেছেন। ফলে বিভিন্ন জেলার মামলা নিষ্পত্তির হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হারে বেড়েছে।’

একার হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে সব কাজ করা সম্ভব না: প্রধান বিচারপতি

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি একটি গতিশীল জুডিশিয়ারি ব্যবস্থা গঠন করার লক্ষ্য জ্ঞাপন করেন এবং তা বাস্তবায়নে তাঁর উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি নতুন মেডিয়েশন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মামলার জট কমার আশা ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়নের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন।

বক্তব্যের একপর্যায়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখের হলো, আজকে একটা সংস্কৃতি ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেটা হচ্ছে বিচারাধীন মামলা ব্যাপারে বক্তব্য দেয়া এবং মামলার বিষয়বস্তু (মেরিট) বিবেচনা ছাড়াই মন্তব্য করা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন। এই স্বাধীনতাকে কার্যকর করার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছু কিছু ব্যক্তি আছেন যারা তাদের সঙ্গীয় কাউকে বিচার করতে গেলেই স্টেটমেন্ট দেয়া শুরু করেন। এটা বিচার বিভাগকে অপমান করার সামিল। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা কেউ আইনের উর্ধ্বে নই। সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার নিমিত্তে এরকম স্টেটমেন্ট দেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য অনুরোধ করছি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: মমতাজ উদ্দিন ফকির ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী।

বিচারপতি ওবাইদুল হাসান নবগঠিত মেডিয়েশন সেন্টার এর সফলতার জন্য আইনজীবীদের সহায়তা করার আহ্বান জানান।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার বলেন, প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি মধ্যস্থতার মাধ্যমে (মেডিয়েশন) বিচার নিষ্পত্তি বিচার প্রার্থীদের জন্য সহায়ক হবে এবং অর্থ ও সময়ের অপচয় কমবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আরবিট্রেশন আইন (Arbitration Act) কে আরোও যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আজকের উদ্যোগ কার্যকর হবে। তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর বিচার ব্যবস্থা সহজিকরণের ইচ্ছার কথা তুলে ধরেন।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় সুপ্রীম কোর্ট মেডিয়েশন সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ফিতা কাটার মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের এই নতুন বিকল্প বিচার ব্যবস্থা সেন্টার এর উদ্বোধন করেন।

একার হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে সব কাজ করা সম্ভব না: প্রধান বিচারপতি

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি ৯টি নতুন কোর্ট প্রযুক্তির উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি তিনি নতুন নথি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (DMS বা Document management system) কাজের উদ্বোধন করেন।

উল্লেখ্য, এই নতুন ডিএমএস ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টে প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫০টি বা পাঁচ কোটি পাতার (২০০০ সাল ২০২০ সাল পর্যন্ত) নথিপত্র আর্কাইভ করা হয়েছে। যেখানে থেকে ডাউনলোড (download) অপশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নথি ডাউনলোড (download) করা যাবে।

আজকের অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।