ভীতিহীন পরিবেশে শিশুদের বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : কক্সবাজারের জেলা জজ
শিশু আইন ২০১৩ বিষয়ক কক্সবাজারে লিগ্যাল এইড আইনজীবীদের প্রশিক্ষণে বক্তব্য রাখছেন কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন

ভীতিহীন পরিবেশে শিশুদের বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : কক্সবাজারের জেলা জজ

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী: কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবীদের “শিশু আইন-২০১৩” বিষয়ক ২ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “স্ট্রেংদেনিং ক্যাপাসিটি অব জুডিসিয়াল সিস্টেম ফর চাইল্ড প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ” প্রকল্পের আওতায় ২২ সেপ্টেম্বর ও ২৩ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে শুক্রবার ও শনিবার কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে এ প্রশিক্ষণ চলে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা UNICEF (United Nations International Children Emergency Fund) এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির ব্যবস্থাপনায় এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন সভাপতি হিসাবে প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, আইনের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া শিশুদের নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ও ভীতিহীন পরিবেশে ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। যাতে শিশুদের আইনানুগ অধিকার সুরক্ষা ও সমুন্নত রাখা যায়।

কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান, বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন ২ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ শিশু আইন বিষয়ে আরো অধিকতর ধারণা অর্জন, আদালতের কর্মকর্তা হিসাবে আদালতকে ন্যায়ানুগ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহ শিশু সম্পৃক্ত মামলা সমুহ দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এ গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে এবং মেধা ও মননকে আরো উজ্জীবিত করবে। চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে আরো সুক্ষ ও গভীরভাবে মনোযোগী হওয়ার খোরাক জোগাবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বিচারপ্রার্থীদের বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানসহ ন্যায় বিচার প্রাপ্তির অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। বিচার প্রার্থী জনগণের বিচারপ্রাপ্তির এই অধিকারকে সমুন্নত রাখার জন্য বার ও বেঞ্চের সমন্বয়ে আইনের সঠিক শুদ্ধচর্চা ও ন্যায়ানুগ প্রয়োগের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করতে হবে।

কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন আরো বলেন, এ প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহনকারীদের পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া, এ প্রশিক্ষণের কারণে কক্সবাজারের বিচারপ্রার্থী জনগণ এবং আইনের আশ্রয় নেওয়া শিশুগণ উপকৃত হবেন।

প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে UNICEF কক্সবাজার অফিসের চাইল্ড প্রটেকশন ম্যানেজার মি. প্যাট্টিক হালটন স্বাগত বক্তব্য দেন।

কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন, কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, ২ ও ৩ এর বিচারক (জেলা জজ) যথাক্রমে মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, নুর এ আলম ও মোহাম্মদ আবু হান্নান, কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, ইউনিসেফ এর জাস্টিস ফর চিল্ড্রেন চাইল্ড প্রটেকশন সেকশন এর ন্যাশনাল এক্সপার্ট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন রিসোর্স পারসন হিসাবে প্যানেল আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেন। ২ দিন ব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশিক্ষণ প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯ টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত চলে।

প্রশিক্ষণের প্রধান সমন্বয়কারী, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি, সিনিয়র সহকারী জজ ও জেলা জজশীপের ইনচার্জ জজ ওমর ফারুক প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রশিক্ষণে UNICEF কক্সবাজার অফিসের চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিষ্ট সুন্দর খানাল, চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার আসমা আনোয়ার তন্দ্রা, চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার শতাব্দী খাস্তগীর, জাস্টিস ফর চিল্ড্রেন এর প্রোগ্রাম অফিসার সাইদুল ইসলাম, জাস্টিস ফর চিল্ড্রেন প্রোগ্রাম এর ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর জাবেদ হোসেন, কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের নাজির বেদারুল আলম, নায়েব নাজির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রশিক্ষণে কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মোক্তার আহমদ, অ্যাডভোকেট এস. এম শাহীনুল হক, অ্যাডভোকেট আবদুশ শুক্কুর, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মোঃ আবু সৈয়দ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মফিজুল আলম, অ্যাডভোকেট শুভেন্দু বিকাশ সাহা, অ্যাডভোকেট হামিদা বেগম মুন্নী, অ্যাডভোকেট জাবেদুল আনোয়ার, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এবিএম মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, অ্যাডভোকেট এ.কে.এম এরশাদুল উল্লাহ মিল্টন, অ্যাডভোকেট ফিরোজ আলম, অ্যাডভোকেট সেলিম উদ্দিন রাজু, অ্যাডভোকেট শামসুল হক, অ্যাডভোকেট সোমেন দেব, অ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ আমানু, অ্যাডভোকেট খালেদুল কবির, অ্যাডভোকেট আয়াতুল্লাহ হোমিনি, অ্যাডভোকেট রিদুয়ান হাসান, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলম, অ্যাডভোকেট শাহ আলম প্রমুখ অংশ নেন।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া অ্যাডভোকেট আবদুশ শুক্কুর বলেন, প্রশিক্ষণে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী শিশুর অধিকার সুরক্ষা, সবসময় সর্বক্ষেত্রে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থকে প্রধান্য দেয়া, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী সর্বাত্মক সুবিধা নিশ্চিত করা, সর্বোপরি জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নে ব্যাপক অভিজ্ঞতা ও ধারনা পাওয়া গেছে।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, প্রশিক্ষকদের অতিকথন ও আবেগ পরিহারে সর্বোচ্ছ সতর্কতা এবং শতভাগ পেশাদারীত্ব ছিল লক্ষনীয়। ছিলনা একটুখানিও বিরক্তি কিংবা আলসেমির ছাপ। এককথায় সবকিছু মিলিয়ে প্রশিক্ষণটি ছিল নিঃসন্দেহে একটি পরিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সময়োপযোগী চমৎকার প্রশিক্ষণ।

অ্যাডভোকেট খালেদুল কবির বলেন, মাষ্টার ট্রেইনারদের সুমধুর ও প্রাঞ্জল উপস্থাপনা, স্পষ্ট ও নান্দনিক বাচনভঙ্গী, হৃদ্যতাপূর্ণ ও বন্ধুসুলভ আচরন, স্বাভাবিক ও সাদামাটা প্রশ্নোত্তর, পরস্পর দারুন বুঝাপড়া, শেখানো ও বোঝানোর প্রানান্ত প্রচেষ্টা, খুনসুঁটি ও হালকা রসিকতাতে ২ দিনের পুরো প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি হয়ে উঠেছে অনন্য, অসাধারণ ও স্মৃতিময়।

অ্যাডভোকেট এ.বি.এম মহিউদ্দিন বলেন, বাস্তবতার নিরিখে তথ্যসমৃদ্ধ কেস স্টাডি ও পক্ষসমুহের দায়িত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দেয়া ছিল প্রশিক্ষণের অন্যতম বৈশিষ্ট।

অ্যাডভোকেট শামশুল হক বলেন, প্রশিক্ষণে শিশু আইন ২০১৩ এর যথাযথ প্রয়োগ, এই আইনের ছোটখাঁট ত্রুটি, পূর্বেকার আইনের সাথে এই আইনের সামজ্জস্যতা, সকলের করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত ও চুলচেরা আলোচনা হয়।