'দ্রুত ন্যায়বিচার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে'
কক্সবাজার বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে সভাপতির স্বাগত বক্তব্য রাখছেন জেলা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন

‘দ্রুত ন্যায়বিচার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে’

বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে কক্সবাজারের জেলা জজ

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেছেন, দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা গেলে মানুষের মৌলিক অধিকারও নিশ্চিত হয়। একইসাথে সামাজিক শান্তি, শৃংখলা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিও সাধিত হয়।

কক্সবাজার জেলা বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে সভাপতির স্বাগত বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে জেলা জজশীপের উদ্যোগে শনিবার (৪ নভেম্বর) এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন আরো বলেন, বিচার পাওয়ার অধিকার, সার্বজনীন মৌলিক অধিকার। দেশের সংবিধানে আর্টিকেল ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৫ এ বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। সকল নাগরিকের জন্য বিচার প্রাপ্তির এ অধিকার সুনিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট সকলের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত রেখেই বিচারক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আদালতে কিংবা থানায় মামলা দায়ের, মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়া, সাক্ষ্য গ্রহণ, মামলা নিষ্পত্তি সহ সবকিছু এ দায়িত্বের অংশ। তাই বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সকল স্টেক হোল্ডারদের সক্রিয় ও কার্যকর অংশ গ্রহনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত ও নাগরিকদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন আরো বলেন, বিচার বিভাগীয় সম্মেলন কাউকে দোষারোপ বা দায় চাপানো উদ্দেশ্য নয়। জনগণের প্রত্যাশিত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ যেসমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হন, সেসমস্ত সমস্যা পক্ষ গণের মধ্যে পরস্পর আলাপ আলোচনার মাধ্যমে চিহ্নিত করে উত্তরণের উপায় বের করাই হচ্ছে, বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের মূখ্য উদ্দেশ্য। একইসাথে কক্সবাজােরের স্থানীয় জনগোষ্ঠী, জেলায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা এবং এখানে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করে সকলের প্রাপ্ত আইনী সুবিধা নিশ্চিত করাই হচ্ছে জেলা বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

এ সম্মেলনে আলোচনার মাধ্যমে উপনীত হওয়া যৌক্তিক ও গঠনমূলক সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরানো মামলার জট নিরসন এবং এ অঞ্চলের মানুষের বিচার প্রাপ্তির সকল অধিকার সুনিশ্চিত হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এর স্বাগত বক্তব্যের পর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম ও ইউনিসেফ এর চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার পেট্টিক হালটন বক্তব্য রাখেন। এরপর সম্মেলনে উপস্থিত সকলে উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

সিনিয়র সহকারী জজ সায়মা আফরিন হীমা’র সঞ্চালনায় সম্মেলনে জেলা জজশীপের বিচারকদের মধ্যে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) মো: নুরে আলম, ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ আবু হান্নান, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা-১ এর বিচারক মহিউদ্দিন মুরাদ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আবদুল কাদের, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৪ এর বিচারক মো: মোশারফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা-৫ এর বিচারক নিশাত সুলতানা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-১ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-২ মোছা: রেশমা খাতুন, সিনিয়র সহকারী জজ সুশান্ত প্রাসাদ চাকমা, সিনিয়র সহকারী জজ মৈত্রী ভট্টাচার্য, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি, সিনিয়র সহকারী জজ (চকরিয়া) জিয়া উদ্দিন আহমদ ও সিনিয়র সহকারী জজ মো: ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।

কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর বিচারকদের মধ্যে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খন্দকার, মহেশখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: শোয়েব উদ্দিন খান, চকরিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহেদ হোসাইন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজীন, কুতুবদিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাঈদীন নাহী, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো: আসিফ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তার।

কর্মকর্তাদের মধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. বিপাশা খীসা, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডা. মং টিং ঞোঁ, ৩৪ বিজিবি’র মেজর মো: আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জসিম উদ্দিন, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনমুন পাল, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মো: সরওয়ার আলম, সহকারী বন সংরক্ষক (উত্তর) ড. প্রান্তোষ রায়, কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র সালাহউদ্দিন সেতু, কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেলার শওকত হোসেন মিয়া, দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: নছরুল্লাহ হোসাইন, সিডিআর এর এসটিএ মো: সামশুল হক, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মো: নাজমুল ইসলাম, সমাজসেবা কার্যালয়ের ডিডি হাসান মাসুদ, কোর্ট ইন্সপেক্টর সাঈদুর রহমান, কুতুবদিয়া থানার ইন্সপেক্টর কানন সরকার, টেকনাফ থানার ইন্সপেক্টর আবদুর রাজ্জাক, বন মামলা পরিচালক টি.এম আলী নেওয়াজ, পিবিআই এর ইন্সপেক্টর এনামুল হক চৌধুরী, সিআইডি’র ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম, পেকুয়া থানার ইন্সপেক্টর সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য, মহেশখালী থানার ইন্সপেক্টর তাজ উদ্দিন, কক্সবাজার সদর ইন্সপেক্টর দুর্জয় বিপ্লব, পেকুয়া থানার ইন্সপেক্টর সীমা বিশ্বাস, উখিয়া থানার ইন্সপেক্টর নাছির উদ্দিন মজুমদার, ঈদগাহ থানার ইন্সপেক্টর নোমান সিদ্দিকী, চকরিয়া থানার ইন্সপেক্টর অরূপ কুমার চৌধুরী, রামু থানার ইন্সপেক্টর আবুল কাউসার, ইউনিসেফ এর আনোয়ার থানবা সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিবৃন্দ সম্মেলন ও আলোচনায় অংশ নেন।

সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, অ্যাডভোকেট সব্বির আহমদ, অ্যাডভোকেট আ.জ. মঈন উদ্দিন, স্পেশাল পিপি-১ অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সিকদার, অ্যাডভোকেট আখতার উদ্দিন হেলালী, অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্ধু, দুদকের প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বেঞ্চ সহকারী মফিজুর রহমান, গীতা পাঠ করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বেঞ্চ সহকারী প্রনব কান্তি শর্মা, ত্রিপিটক পাঠ করেন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বেঞ্চ সহকারী সেতু বড়ুয়া।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আববাস উদ্দিন জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে ২ পর্বে বিচার বিভাগীয় এ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এর সভাপতির স্বাগত ভাষনের পর দেওয়ানী ও ফৌজদারী মোকদ্দমার বিচার নিষ্পত্তিতে উদ্ভূত সমস্যা ও বিলম্বের কারণ সমূহ চিহ্নিতকরণ এবং উল্লেখিত সমস্যা হতে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে আমন্ত্রিত অতিথি সহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দের উম্মুক্ত আলোচনা এবং সুপারিশমালা প্রণয়নের মাধ্যমে প্রথম পর্ব দুপুর ১ টায় সমাপ্ত হয়।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আববাস উদ্দিন আরো জানান, মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় শনিবার বেলা ২ টায়। এ পর্ব শুধুমাত্র বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে “উপস্থাপিত প্রতিবেদন সহ দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্ভুত সমস্যা সমূহ চিহ্নিতকরণ ও উহার সমাধানের লক্ষ্যে উম্মুক্ত আলোচনা” এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একইদিন বিকেলে সভাপতি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এর সমাপনী ভাষনের মাধ্যমে দিনব্যাপী এই বিচার বিভাগীয় সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম, নায়েব নাজির রাসেল পাল সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।