বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলাম : বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী

স্বনির্ভর দেশ গড়তে শিক্ষার বিকল্প নেই : বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী। বিচারিক দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িত রয়েছেন তিনি। বিশেষ করে শিক্ষার বিকাশে জোরালো ভূমিকা রেখে চলেছেন এই বিচারপতি।

কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ গতিশীল করতে নিজ গ্রাম কুষ্টিয়ার মিরপুরে একটি কৃষি ইনস্টিটিউটও করেছেন। চালু করেছেন জাস্টিস আবু জাফর সিদ্দিকী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বৃত্তি’।

সম্প্রতি এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষা পরিদর্শনে এসে শিক্ষা নিয়ে নিজের অনেক স্বপ্নের কথা গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী।

বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, আমার জন্ম কুষ্টিয়ার মিরপুরে। আমার স্বপ্ন ছিল এই অঞ্চলের মানুষকে যাতে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা যায়। পেশাগত জায়গা থেকে অনেক জায়গায় অবদান রাখার সুযোগ নেই। সে কারণে শিক্ষার কথা ভেবেছি।

তিনি বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের চিন্তা ছিল দেশের মানুষকে গড়ে তুলবে, স্বনির্ভর করবে। এটা করতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। সে কারণে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, সমগ্র দেশের জন্য ভাবনা থাকলেও সীমিত পরিসরে আমি শুরু করেছি যাতে প্রথমে আমার গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা সর্বপরি সারা দেশে যাতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আমার চিন্তার সাথে অনেকে উৎসাহিত হয়ে যাতে গ্রামে প্রতিষ্ঠান করে সেই চিন্তা থেকেই এই আয়োজন। এ সময় তিনি বলেন, এলাকার সব মানুষ আমার সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।

বৃত্তি অনুষ্ঠান নিয়ে বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, আমাদের একটি ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন আছে। সেই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু বৃত্তি নয় এই অঞ্চলের গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমরা সহযোগিতা করে থাকি। দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াই, একই সাথে অভাবগ্রস্ত মানুষ যারা চিকিৎসা সেবা নিতে পারে না তাদেরকে সহায়তা করি। একটা নীতিমালার মাধ্যমে আমরা এটা করি। মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

বিচারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এমন জনবান্ধব কাজে সমন্বয়ন কিভাবে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন বিচারক হিসেবে এখানে মনোনিবেশ করা দুরূহ ব্যাপার। তারপরও যতটুকু সময় পাই তাদেরকে পরামর্শ দেই। আমার সাথে যারা আছেন তারা অত্যন্ত কর্মঠ এবং উদ্যোমী। যারা এই প্রতিঠান পরিচালনা করছেন সেই শিক্ষকবৃন্দ অত্যন্ত ভালো। এই ক্ষুদ্র প্রয়াস থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেতে চাই।

বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, কুষ্টিয়াতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা আমাদের স্বপ্ন রয়েছে। সেটারও কাজ চলছে। আমি এই অঞ্চলের মানুষের কাছে দোয়া চাই যেন সবার সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সমাজকে গড়ে তুলতে পারি, মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে পারি।

শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমার বাল্যজীবন, শৈশব এখানে কেটেছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এখানে একটা বড় গাছ ছিল যাতে আমরা ৭ মার্চ পতাকা টানিয়েছিলাম। এপ্রিলের ৩০ তারিখ প্রথম কুষ্টিয়া মুক্ত হয় সেই যুদ্ধে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। সে সব ইতিহাসে নেই কিন্তু ইতিহাস ইতিহাসের জায়গায় আমরা যা করেছি সেটা আমাদের কাছে।

সারাজীবন মানুষের জন্য করেছেন ভবিষ্যতেও করে যেতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, বিচারক হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি এর পাশাপাশি যতটুকু সময় পাই গ্রামে আসি। গ্রামে আসার কারণ হলো- এই যে বৃত্তির আয়োজন কোমলমতি শিশুরা অনুপ্রাণিত হবে। শিশুদের বড় করে গড়ে তোলার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা।

উল্লেখ্য, ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১১শ শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত, আপ্লুত। ভবিষ্যতে আমি আশা করি কুষ্টিয়ায় যতো শিক্ষার্থী আছে তারা আসবে, একটি মিলন মেলা হবে; সেটি আমি আশা করছি।