হাইকোর্ট পারমিশনের লিখিত পরীক্ষা সংগ্রহ করা যাবে অনলাইনে
বার কাউন্সিল ও আইনজীবী

বার কাউন্সিল ভাইভা প্রস্তুতি

দেবব্রত চৌধুরী লিটন: এমসিকিউ, রিটেন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধন পরীক্ষার সবচেয়ে সহজ ধাপ হল ভাইভা পরীক্ষা। এই পরীক্ষা গতকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ২ মার্চ ২০২৪ ইংরেজি পর্যন্ত।

আইনজীবী হবার জন্য আপনি যথেষ্ট ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ও বিনয়ী কিনা তাই যাচাই করে নিবে ভাইবা বোর্ড। আইনপেশা চর্চা নির্ভর, তাই আপনি কত কি জানেন সেটা বোর্ড খুঁজতে যাবেনা।

কোন প্রশ্ন না পারলে ভয় পাবেন না, বিচলিত হবেন না। আপনি না পারায় মূহূর্তটা কিভাবে উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে সামলে নিবেন সেটাই বোর্ডের কাছে দেখার বিষয়। ভাইবা বোর্ডে প্রশ্ন সিলেবাস থেকে আসবে এমনটা আশা করা অনভিপ্রেত।

প্রথমবার যারা ভাইবা দেন তাদের ভেতর অনেক সংকোচ ও উৎকন্ঠা দেখা যায়। এছাড়াও ভাইভা মেনার সম্পর্কে ধারনা না থাকায় অনাকাঙ্খিত-অনভিপ্রেত ঘটনার স্বীকার হয়ে ব্যর্থতার বলি হতে হয় অনেককে।

ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের আগে ও পরে ●───

◼ যারা সিলেট সহ দেশের অন্যান্য জেলা থেকে ঢাকায় ভাইবা দিতে যাবেন তারা ১/২ দিন আগেই ঢাকায় যাবেন। দরকারি সমস্ত সার্টিফিকেট, মার্কসিট, প্রবেশপত্র প্লাষ্টিকের সাদা রঙের ফাইলে করে নিয়ে যাবেন।
◼ ভাইবা পরীক্ষার আগের দিন অবশই ভালো একটা ঘুম দিবেন। ভাইভা বোর্ডে মুঠোফোন না নেয়াটাই শ্রেয়।
◼ আপনার পোশাক যেন মার্জিত হয়। ছেলেরা সাদা শার্ট , কালো প্যান্ট, কালো কোট, লাল টাই এবং সু জুতো (কালি করা) পড়বেন । মেয়েরাও আদালতের জন্য নির্ধারিত পোশাক পড়ে যাবেন।
◼ ভাইবা বোর্ডে প্রবেশের আগে বোর্ডের প্রবেশদ্বারে বোর্ড সদস্যদের নাম সম্বলিত কম্পিউটার প্রিন্ট করা কাগজ দেখতে পারবেন। বোর্ডে আপনার ডাক পরলে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নিন। অনুমতি দিলে রুমে ঢুকে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে ধীর পদক্ষেপে হেটে বোর্ডের সামনে গিয়ে সালাম দিবেন। বোর্ডের পাশের টেবিলে বসা একজন করনিক আপনার সকল সার্টিফিকেট মার্কসিটসহ যাবতীয় কাগজপত্র দেখে নিবেন। বোর্ডের সদস্যরা সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বললে আপনি বসবেন, না বললে ১০ সেকেন্ডের মত দাঁড়িয়ে থাকার পর বসার অনুমতি পেলে বসবেন।
◼ ভাইভা বোর্ডে থাকা চেয়ার অঘোচালো অবস্থায় পরে থাকতে পারে আপনি নিঃশব্দে চেয়ার সঠিক অবস্থায় রেখে বসবেন। চেয়ারের হাতলে বা টেবিলে কোন অবস্থায়ই হাত রাখবেন না। সোজা ও সাবলীলভাবে চেয়ারে বসবেন।
◼ আত্মবিশ্বাস ও বিনয়ের সমন্বয়ে ভদ্রোচিত একটা ভাব বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। চেহারায় উদ্ধত, গম্ভীর কিংবা ভয়ার্ত ভাব আনবেন না। প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা, প্রশ্ন ও উত্তরের ভাষাগত সাদৃশ্য (অর্থাৎ, যে ভাষায় প্রশ্ন হয়েছে, সে ভাষায় উত্তর) বজায় রাখা, ধীরস্থির থাকার চেষ্টা করবেন। ভাইবা বোর্ডে ছটপট করা, নখ ছিড়া, নাকে হাত দেওয়া, বারবার কাশির মত শব্দ করা, নাক টানাসহ সকল প্রকার মুদ্রাদোষ পরিহার করতে সচেষ্ট থাকবেন।
◼ যারা ভাইভা নিতে আসেন তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে মনে প্রশ্ন আনবেন না। বোর্ড সদস্যদের বোকা ভেবে কোন প্রকার আলগা চালাকি, মিথ্যা তথ্য দেওয়া, তর্কে লিপ্ত হওয়া হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক প্রশ্নে নিজের উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিন।
◼ উত্তর দেয়ার সময় এমন কোন শব্দ/ টার্ম ব্যবহার করবেন না, যে সম্পর্কে আপনি সম্যক অবহিত নন। চেষ্টা করবেন যেসব টপিকে আপনার ভাল দখল আছে, সে টপিক রিলেটেড শব্দাবলি ব্যবহারের। কারন, আপনার মুখে উচ্চারিত যেকোন একটি শব্দকে বেইজ করে পরের প্রশ্ন হওয়ার চান্স ৯০%। আমার ভাইবায় এমনটাই হয়েছিল।
◼ যা বলবেন স্পষ্টভাবে বলবেন, কথা বলার সময় হাত নাড়াবেন না ,তাড়াহুড়ো করবেন না, সময় নিয়ে একটু চিন্তা করে উত্তর দিন। ২-১ টা প্রশ্ন পারা না পারাতে কিছু যায় আসেনা। তবে আপনি যদি একদম সামান্য বিষয় যা সবাই জানে, তা উত্তর দিতে না পারেন সেটা আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
◼ ভাইভা বোর্ডে গিয়ে অনেকে সব কিছু গুলিয়ে ফেলে। যে যত সহজ থাকবে তার ভাইভা ভালো হবার সম্ভাবনা তত বেশি । অনেক সময় স্যাররা ঘাবড়ানোর বা রাগানোর চেষ্টা করতে পারেন, এতে কোন ভাবেই বিচলিত হওয়া যাবেনা। মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তর দিবেন। যেমন, আপনাকে প্রশ্ন করতে পারেন সার্টিফিকেট কতো টাকা দিয়ে কিনেছো?, ওমুক ভার্সিটি তো সার্টিফিকেট বিক্রি করে। এসব প্রশ্নে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিন।
◼ বাংলায় প্রশ্ন করলে বাংলায় এবং ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দিন। বোকার মত প্রশ্ন করবেন না যে স্যার বাংলায় নাকি ইংরেজিতে বলবো ?
◼ কেউ ভাইভা শেষ করে বের হবার সাথে সাথে মৌমাছির মত তার পেছনে ছুটে অনেকে প্রশ্ন জানার জন্য। এটা একদমই করবেন না, কারন একেকজন বের হয়ে একেক কথা বলবে, মিথ্যা বলবে। ”বোর্ডে অনেক কঠিন প্রশ্ন ধরে, আরে ভাই অমুক স্যার প্রাইভেট/পাবলিক পাইলে সিলেবাসের বাইরে ধরে।” এগুলা শুনে আপনার RAM অটো স্লো হয়ে যাবে।
◼ দুয়েকটা প্রশ্নের উত্তর করতে না পারলেও ঘাবড়ে যাবেন না। বিনয়ের অবতার সেজে বলুন, ‘স্যরি স্যার, এই প্রশ্নটির উত্তর আমার জানা নেই’। নিজেকে উৎসাহী শ্রোতা হিসেবে উপস্থাপন করুন।
◼ অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে প্রাকটিস রিলেটেড জ্ঞান জাহির করুন। আপনার এলাকার প্রথিতযশা আইনজীবী, বিচারপতি, এটর্নী, সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য সম্পর্কে ধারনা রাখুন।
◼ রাজনৈতিক বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ ইস্যু নিয়ে পজিটিভ উত্তর দিন। ধর্মীয় পোশাকে কোনো বাধা নেই।পরিপাটি হয়ে ভাইবা বোর্ডে যাবেন। বলার সময় যদি হঠাৎ তোতলাতে থাকেন কিংবা খেই হারিয়ে ফেলেন, তাহলে একটু থেমে এরপর আবার উত্তর করা শুরু করবেন। বোর্ড থেকে বের হবার সময় সালাম ও মুচকি হাসি দিতে ভুলবেন না।

ভাইবা বোর্ডে অংশ গ্রহণ করা সকলের প্রতি অফুরান শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।

লেখক: অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, সিলেট। ইমেইল: debobrothaliton@Gmail.com