কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ
ফুল দিয়ে বিদায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ বরন করে নিচ্ছেন নব নির্বাচিত কমিটির কর্মকর্তাদের

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত কার্যকরী পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। গত মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) সমিতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ী কমিটির কর্মকর্তারা নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

দায়িত্ব হস্তান্তর উপলক্ষ্যে বিদায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন আইনজীবী সমিতি ভবন মসজিদের ইমাম মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত। এরপর নব নির্বাচিত কমিটির ১৭জন আইনজীবীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক ও সহ সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম টিপু’র যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে নব নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী বলেন, তিনি একটি নির্ধারিত প্যানেলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হলেও তিনি এখন সবার প্রতিনিধি। তাই সকল আইনজীবীর হয়ে আইনাঙ্গনের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কাজ করবেন।

অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আইনজীবীদের মর্যাদায় আঘাত হানে, পেশার মান ক্ষুন্ন হয়, সমাজে ভুল ম্যাসেজ যায়, এমন নেতিবাচক কাজ থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে তিনি “জিরো টলারেন্স” নীতি অবলম্বন করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বিদায়ী সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর মেয়াদকালে আইনজীবীদের কল্যানের জন্য তিনি সাধ্যমতো মেধা, সময়, শ্রম দেওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মেয়াদকালে তাকে সবাই সহযোগিতা করায় তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতিতে সুষ্ঠু ও সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিয়ে সমিতির ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা রক্ষ করায় বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক নির্বাচন কমিশন সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার তাঁর দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হতে গিয়ে যাঁরা নির্বাচিত হতে পারেননি, তিনি তাঁরা সহ সকলকে সাথে নিয়ে, সবার সাথে পরামর্শ করে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

নব নির্বাচিত সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, সমিতির কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও আইনজীবী বান্ধব করতে সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেজন্য, তিনি সবার সক্রিয় সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করেন।

সম্পাদকীয় ও কর্মকর্তা পোস্টে সর্বোচ্চ ৬১৯ ভোটে আপ্যায়ন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়া অ্যাডভোকেট শেফাউল করিম রানা সকল আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সবসময় নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবো।

পাঠাগার ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়া অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সমিতির লাইব্রেরীকে সমৃদ্ধ করতে, সমিতির সকল কার্যক্রম আধুনিকায়ন করে তথ্য প্রযুক্তির আওতায় আনতে সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

সিনিয়র সদস্য ক্যাটাগরীতে নির্বাচিত চার বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম শাহজালাল চৌধুরী কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতিকে দেশের একটি মডেল ও আইনজীবী বান্ধব বার হিসাবে গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারী অনু্ষ্ঠিত কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ মনোনীত প্যানেলের অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী-অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার প্যানেল ১৭টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ মোট ১৪টি পদে ধ্বস নামানো বিজয়ের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম-অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা প্যানেল সিনিয়র সহ সভাপতি সহ মাত্র ৩টি পদে বিজয় লাভ করে।

বিএনপি, জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মনোনীত অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী-অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার প্যানেলের নির্বাচিতরা হলেন-সভাপতি-অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী (প্রাপ্ত ভোট-৪৪২), সাধারণ সম্পাদক-অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার (প্রাপ্ত ভোট-৪৩৫), সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন, (প্রাপ্ত ভোট-৫০৭), সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, (প্রাপ্ত ভোট-৫২৭), সহ সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) অ্যাডভোকেট কলিম উল্লাহ, (প্রাপ্ত ভোট-৪২২), পাঠাগার ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, (প্রাপ্ত ভোট-৪৫৮), আপ্যায়ন, ক্রীড়া সাংস্কৃতিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেফাউল করিম রানা, (প্রাপ্ত ভোট-৬১৯)। একই প্যানেলের সিনিয়র নির্বাহী সদস্য ক্যাটাগরীতে অ্যাডভোকেট এ.কে.এম শাহজালাল চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট-৪৮৬), অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আমির হোসাইন-২ (প্রাপ্ত ভোট-৪১২) এবং অ্যাডভোকেট আবদুল কাইয়ুম (প্রাপ্ত ভোট-৪১২) নির্বাচিত হয়েছেন। জুনিয়র নির্বাহী সদস্য ক্যাটাগরীর ৪টি পদের মধ্যে ৪টিতেই একই প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন-অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবদুল খালেক (প্রাপ্ত ভোট-৪৯৯), অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ জুবাইরুল ইসলাম (প্রাপ্ত ভোট-৪৮২), অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ফায়সাল মোশারফ (প্রাপ্ত ভোট-৪৭৪) এবং অ্যাডভোকেট শাহা আলম (প্রাপ্ত ভোট-৪৩২)।

সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষে নব নির্বাচিত কমিটির কর্মকর্তাদের বরন করে নিচ্ছেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী
সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষে নব নির্বাচিত কমিটির কর্মকর্তাদের বরন করে নিচ্ছেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্যানেলের নির্বাচিতরা হলেন, সিনিয়র সহ সভাপতি-অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান (প্রাপ্ত ভোট-৪৪৭), সিনিয়র নির্বাহী সদস্য পদে এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল এবং অ্যাডভোকেট শওকত বেলাল (প্রাপ্ত ভোট-৪২৬)।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির মোট ৯২৭ জন ভোটারের মধ্যে ২টি ভোট কেন্দ্রে ৮৭৭ টি ভোট ভোট কাস্ট হয়েছে। এরমধ্যে, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন কেন্দ্রে ৮০২ ভোট এবং চকরিয়া উপজেলা ভোট কেন্দ্রে ৭৫ ভোট কাস্ট হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়।

নির্বাচনে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকের-প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ফেরদাউস-সহকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শফিউল হক, অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ-৪, অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমদ, অ্যাডভোকেট নুর আহমদ-২, অ্যাডভোকেট আবু ছিদ্দিক এবং অ্যাডভোকেট সিরাজ উল্লাহ কমিশনার হিসাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার পরবর্তী ৩দিনের মধ্যে নতুন কার্যকরী কমিটির কাছে পুরাতন কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তর করার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। বিদায়ী কমিটি ৩দিনের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরবর্তী ৪র্থ দিনে নতুন কার্যকরী কমিটি আপনাআপনি দায়িত্ব পেয়েছেন বলে গণ্য হবে। অপরদিকে, একইদিন বিদায়ী কমিটির দায়িত্ব শূন্য হয়ে গেছে বলে গণ্য করা হবে।