যারা জনগণের আমানতকে খেলা মনে করে তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত: আদালত

যারা জনগণের আমানতকে খেলা মনে করে তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত: আদালত

যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করে তাদের মৃত্যুণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত। হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, হলমার্কের ঘটনা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করে তাদের মৃত্যুণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত মর্মে অত্র আদালত মনে করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।

আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আদালত।

এদিকে দণ্ডের পাশাপাশি তানভীর মাহমুদ ও জেসমিন ইসলামকে ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২৫ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন– প্রতিষ্ঠানটির সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহম্মেদ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগণ গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি আব্দুল মালেক এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান। যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

অপরদিকে সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ সাত কর্মকর্তা– প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, সাবেক জিএম ননী গোপাল নাথ, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক জিএম মীর মহিদুর রহমান, ডিএমডি মাইনুল হক, উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ, এজিএম কামরুল হাসান খান ও সোনালী ব্যাংক ধানমণ্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা মেরীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারকে এক ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস নামে ভুয়া কোম্পানির হিসাবে সুতা রপ্তানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রপ্তানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়, যা পরে তানভীর ও তার স্ত্রী তুলে নেন।

২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুদক। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাৎ মামলাটি দায়ের করেন।