জনস্বার্থের মামলায় বাড়ি ছাড়ার রায় বিরল : সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী

খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেছেন, জনস্বার্থের মামলায় বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার রায় বিরল। এর আগে কখনো উচ্চ আদালত এরকম রায় দেননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ি তিন মাসের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, কোনো উপযুক্ত আদালত এর আগে সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে কোনো রায় দেননি। সরাসরি হাইকোর্টে এসে বাড়ি নিয়ে জনস্বার্থে মামলা করলেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এ ধরনের রায় বিরল। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।

এর আগে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি তিন মাসের মধ্যে ছাড়তে হবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সালাম মুর্শেদীকে গুলশানের বাড়ি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালত রায়ে বলেছেন, দুদকসহ অন্যান্য সংস্থার তদন্ত রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে সালাম মুর্শেদী গুলশানের যে বাড়িতে বসবাস করছেন সেটা সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। সালাম মুর্শেদীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

গত ৩ মার্চ খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে শুনানি শেষ হয়।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছিলেন, রাজউকের ও দুদকের হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে গুলশানে সালাম মুর্শেদী যে বাড়িতে বাস করছেন সেটা রাষ্ট্রের সম্পত্তি। এ বাড়িতে তিনি এখন এক মুহূর্তও থাকতে পারেন না।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, মানুষ অপহরণের মতো সালাম মুর্শেদী গুলশানের বাড়ি অপহরণ করে বাস করছেন। এ বাড়িতে তিনি প্রতি সেকেন্ড অবৈধভাবে বাস করছেন।

এসময় হাইকোর্ট রাজউকের আইনজীবীকে প্রশ্ন রেখে বলেন, সেটেলমেন্ট কোর্টের অর্ডার ছাড়া এ সম্পত্তি কীভাবে সালাম মুর্শেদীর কাছে হস্তান্তর করা হলো?

গত ৮ ফেব্রুয়ারি দাখিল করা খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জালিয়াতির ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সালাম মুর্শেদীর বাড়িকে কেন্দ্র করে জাল জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, এটা দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ বাড়ি নিয়ে মামলা হয়েছে, তদন্তে জানা যাবে কার কতটুকু দায় আছে।

এর আগে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও মামলার এফআইআর হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। তবে আদালত তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে বাড়ি সংক্রান্ত যাবতীয় নথি চেয়েছেন। আদালত বলেছেন, এ বাড়ির চেইন অব টাইটেল আমাদের দেখাতে হবে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ১৭ জানুয়ারি খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে দুদককে অনুসন্ধান প্রতিবেদন ৮ ফেব্রুয়ারি দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন (দুদক)।

গত বছরের ১৬ জানুয়ারি খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি সংক্রান্ত মূল নথি ও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন অ্যাফিডেভিট করে এক সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

তারও আগে সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে রিট করা হয়। গত ৬ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ রিট দায়ের করেন। রিটে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।