পিরোজপুর বারে পাল্টাপাল্টি কমিটির পর অচলাবস্থা, নির্বাচনের দাবি

পিরোজপুর বারে পাল্টাপাল্টি কমিটির পর অচলাবস্থা, নির্বাচনের দাবি

পিরোজপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি গঠন করায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দুই পক্ষের কমিটি গঠনের এক মাস পর অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ আইনজীবীরা।

আইনজীবী সমিতির সদস্য খায়রুল বাশার বলেন, আইনজীবী সমিতিতে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করায় সমিতির কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরে সমিতি থেকে আইনজীবীদের বোনাস দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সাধারণ আইনজীবীরা চান, দুই পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে অচলাবস্থার নিরসন করুক।

সাধারণ আইনজীবীরা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আইনজীবী সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি মো. আলাউদ্দিন খান ভারতে অবস্থান করায় নির্দিষ্ট সময়ে সমিতির নির্বাচন হয়নি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি আলাউদ্দিন খান মুলতবি সভা ডাকলে সভার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কয়েকজন আইনজীবী।

এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দুই ভাগে বিভক্ত আইনজীবীরা দুটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এতে সমিতির কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হয়।

এরপর দ্বন্দ্ব নিরসনে ১২৭ জন আইনজীবী দুই পক্ষের কমিটির কাছে একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়ে অচলাবস্থা দূর করার দাবি জানান। পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়। এতে আওয়ামী লীগের দুটি প্যানেল থেকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬ জন নির্বাচিত হন।

দুটি প্যানেলের মধ্যে পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-ইন্দুরকানি) আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের অনুসারী আইনজীবীরা ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’–এর ব্যানারে ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের অনুসারী আইনজীবীরা ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’–এর ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এ ছাড়া বিএনপি–সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ তিনজন নির্বাচিত হন। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণের আগে নির্বাচন দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি।

সমিতির নেতারা জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি আলাউদ্দিন খান নির্বাচন না দিয়ে মুলতবি সভা ডাকেন। এ সময় তিনি সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি অ্যাডহক কমিটি ঘোষণার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে সাধারণ সম্পাদক পক্ষের কয়েকজন আইনজীবী প্রশ্ন তুললে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়।

একপর্যায়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সমিতির ভেতরে ঢুকে সাধারণ সম্পাদক পক্ষের অনুসারীদের ওপর হামলা করেন। এতে তিনজন আহত হন। তাঁদের দেখতে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীরা আইনজীবী সাঈদুর রহমানের ওপর হামলা করে। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রাজ্জাক খান আহত হন।

এ ঘটনায় ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন খানকে প্রধান আসামি করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। পরে আবদুর রাজ্জাক খানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি কমিটি করে সাধারণ সম্পাদক পক্ষ। অন্যদিকে জালাল উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করে সভাপতি পক্ষ।

সরকারি কৌঁসুলি সরদার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা তলবি সভা করে আবদুর রাজ্জাক খানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করেছি। আমি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। আমাদের কমিটি নিয়ম মেনে করা হয়েছে। অন্য কমিটি মুলতবি সভা ডেকে করা হয়েছে। মুলতবি সভা করে কমিটি গঠন করা অবৈধ।’

তবে অন্য পক্ষের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মুলতবি সভা করে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই। সবকিছু মেনেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও একটি পক্ষ আলাদা কমিটি ঘোষণা করেছে। দুটি কমিটি হওয়ায় সমিতির কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, আইনজীবীদের বোনাস কীভাবে দেওয়া যায়, সে জন্য তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সব পক্ষ আন্তরিক হলে সংকট নিরসন করা সম্ভব।