একজন বিদেশি আইনজীবী হয়ে খালেদা জিয়ার বিষয়ে কথা বলা চরম ধৃষ্টতা বলে মন্তব্য করেছেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলা বা হস্তক্ষেপ করা যে কোনো আইনজীবীর চরম বেয়াদবি।
খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর আপিলসহ পৃথক তিনটি আপিলের ওপর শুনানির জন্য আগামী ৮ জুলাই হাইকোর্ট দিন ঠিক করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (৩ জুলাই) এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্রিটিশ আইনজীবী ও লর্ড কার্লাইলের বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তাদের পক্ষে আইনি লড়াই করবেন এমন খবর প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়, দিল্লিতে এসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে লবিং করবেন প্রবীণ ব্রিটিশ আইনজীবী ও হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড কার্লাইল। ঢাকা থেকে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীর সেখানে তার সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। দিল্লির সাউথ এশিয়া ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব (এফসিসি) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
খালেদা জিয়াকে যে অভিযোগে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক গণ-মাধ্যমের কাছে তুলে ধরতে লর্ড কার্লাইল বেছে নিয়েছেন এফসিসিকে।
জানা গেছে, দিল্লির মথুরা রোডে অবস্থিত এফসিসি মিলনায়তনেই আগামী ১৩ জুলাই লর্ড কার্লাইল ও বিএনপি নেতাদের সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও লর্ড কার্লাইলের ভিসা শেষ মুহূর্তে প্রত্যাখ্যান হতে পারে- এ আশঙ্কায় ওই সংবাদ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র এখনও গণমাধ্যমে পাঠানো হয়নি।
এর আগে ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার কিছুদিন পরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় ঘোষণা করেন, লর্ড কার্লাইলকে তাদের নেত্রীর আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ‘নিয়োগ’ যে লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগ্রহ ও নির্দেশেই, সে কথাও অবশ্য গোপন ছিল না।
আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হলেও লর্ড কার্লাইল বাংলাদেশের আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে সওয়াল করতে পারবেন না, বিএনপির অবশ্য তা জানাই ছিল। এর আগে জামায়াতে ইসলামী যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের নেতাদের হয়ে আদালতে লড়াই করার জন্য লন্ডনের সুপরিচিত ব্যারিস্টার টোবি ক্যাডম্যানকে নিয়োগ করেছিল, তখনও তাকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়া হয়নি। এমনকি তিনি ঢাকায় আসার জন্য ভিসাও পাননি।
লর্ড কার্লাইলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে, এটা ধরে নিয়েই তারেক রহমান এ নিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তার বিশ্বাস ছিল, খালেদা জিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লর্ড কার্লাইল মুখ খুললে তা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হবে। কারণ এ বিখ্যাত আইনজীবীর কথার একটা আলাদা ওজন আছে। সোজা কথায় আইনজীবী না হলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার ভূমিকা হবে একজন ‘লবিস্টের’।
নিয়োগের কিছুদিন পরই লর্ড কার্লাইল আল জাজিরার সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে একটি সাক্ষাৎকারও দেন। যেখানে তিনি ব্যাখ্যাও করেন, কেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজনৈতিক কারণে সাজানো বলে তিনি মনে করছেন।
এখন লর্ড কার্লাইল যে ঢাকায় আসতে পারবেন না, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। কাজেই খালেদা জিয়ার হয়ে পরামর্শ করার জন্য বেছে নিয়েছে পাশের দেশ ভারতকে। ভারত যে একজন প্রবীণ ও সিনিয়র ব্রিটিশ এমপির ভিসা প্রত্যাখ্যান করবে না, এটা ধরে নিয়েই দিল্লিকে ভেন্যু হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে বলে দলের এক সিনিয়র নেতা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনকে আরও ‘ওজনদার’ করে তুলতে ঢাকা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আইনজীবী নেতাদের দিল্লিতে নেয়ারও পরিকল্পনা চলছে।
গত মাসেই দিল্লিতে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যমে তুমুল চর্চা হয়েছে। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ব্রিটিশ এমপি লর্ড কার্লাইল ও অন্য সিনিয়র নেতাদের সেই দিল্লির বুকে হাজির করে আবার একটা তোলপাড় ফেলার চেষ্টা করছে সংসদের বাইরে থাকা এ বিরোধী দল।