পরিবার (ছবি সংগৃহীত)

‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালার’ খসড়া প্রস্তুত

কোনো সন্তান তার মা-বাবাকে সঙ্গে রেখে ভরণ-পোষণ করতে না পারলে সরকারি-বেসরকারি ‘পরিচর্যা কেন্দ্রে’ রেখে পরিচর্যার সুযোগ রেখে ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালার’ খসড়া করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

তাতে বলা হয়েছে, কোনো মা-বাবার সন্তান জীবিত না থাকলে বা তাদের ভরণ-পোষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকলে ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ কমিটি’ তাদের পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠাবে। পরিচর্যা কেন্দ্রে তাদের কীভাবে রাখা হবে তা ঠিক করা হবে নীতিমালা করে।

সরকারি অনুদানের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি সহায়তা নিয়ে ভরণ-পোষণ তহবিল নামে একটি তহবিল গঠনের রূপরেখাও বিধিমালায় দেওয়া হয়েছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও সংস্থা) রূপন কান্তি শীল গণমাধ্যমকে বলেন, “অংশীজনদের মতামত নিয়ে শিগগিরই বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।”

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, খসড়া বিধিমালা নিয়ে মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্টদের মতামত পাওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।

২০১৩ সালে করা ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন’ এর নির্দেশনা অনুসারে ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালা’র এই খসড়া তৈরি করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২৫ পৃষ্ঠার এই খসড়া বিধিমালায় পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিয়ে সাতটি কমিটি প্রস্তাব করে তাদের কার্যবলী ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। পিতা-মাতার আচরণবিধির পাশাপাশি সন্তানের আচরণবিধি নির্ধারণ করে দিয়ে খসড়া বিধিমালায় পিতা-মাতার জন্য সন্তানদেরকে কী কী করতে হবে আর কী করা যাবে না- সেসব বিষয় বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সন্তান তার পিতা-মাতাকে সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করবে। সন্তান একাধিক হলে মা- বাবা কার কাছে থাকবেন, সে বিষয়ে তাদের ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সন্তান একজন হলে এবং কোনো উপযুক্ত কারণে একত্রে বসবাস করা সম্ভব না হলে আলোচনার মাধ্যমে বা ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ কমিটি’ নির্ধারিত অর্থ মা- বাবাকে দিতে হবে।

একাধিক সন্তান থাকলে এবং উপযুক্ত কারণে তারা একত্রে বসবাস না করলে পিতা-মাতার দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনীয় অর্থ নির্ধারণ করে প্রত্যেক সন্তান সম্মিলিতভাবে তা পিতা-মাতাকে দেবে।

কোনো মা-বাবার সন্তান জীবিত না থাকলে কিংবা ভরণ-পোষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে সংশ্লিষ্ট সহায়ক কমিটি তাদের পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠাতে পারবে।

খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাবিত কমিটিগুলো হল- সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে পিতামাতার ভরণ-পোষণ বিষয়ক জাতীয় কমিটি, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে শহর কমিটি, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পৌর কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউনিয়ন কমিটি এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সদস্যের নেতৃত্বে সহায়ক কমিটি।

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ তহবিল নামে স্থায়ী ও চলতি তহবিল থাকবে জানিয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, স্থায়ী তহবিল গঠনের পর সরকার তাতে অনুদান হিসেবে অর্থ দেবে।

স্থায়ী তহবিলে ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। দানপত্রে কোনো নির্দিষ্ট মা-বাবার নাম উল্লেখ থাকলে ওই অর্থে আগে তাদের প্রয়োজন মেটানো হবে, এরপর অর্থ উদ্বৃত্ত থাকলে সরকার তা ব্যয় করতে পারবে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত দান ও অনুদান, বিভিন্ন অর্থলগ্নীকারী বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা, লটারি; সমাজের বিত্তবান, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া অনুদান; প্রবাসী ও বিদেশিদের আর্থিক সহায়তা এবং বিদেশি উন্নয়ন সংস্থার অনুদান নিয়ে চলতি তহবিল গঠন করা হবে।

পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্র
পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করে তার আলোকে পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করবে।

সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে যে কোনো সময় যে কোনো ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠানকে পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্র হিসেবে প্রত্যয়ন করতে পারবে।

এছাড়া কয়েকটি শর্ত পূরণ করলে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে বেসরকারি পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে।

সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্রে দিবাপরিচর্যা কেন্দ্র ও রাত্রিকালীন আশ্রয় কেন্দ্র নামে আলাদা কর্নার রাখতে হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, যে সন্তান তার পেশাগত বা অন্য কোনো কারণে দিনে পিতা-মাতার পরিচর্যা করতে সক্ষম হবে না, তিনি তার পিতা-মাতাকে দিবাপরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারবেন।

আর যে সন্তান তার পেশাগত ব্যস্ততা, পিতা-মাতার বিশেষ রোগগ্রস্ততা বা অন্য কোনো কারণে রাতে পিতা-মাতার পরিচর্যা করতে পারবে না, তিনি রাত্রিকালীন আশ্রয়কেন্দ্রে পিতা-মাতার পরিচর্যা নিশ্চিত করবেন।

তবে পরিচর্যাকেন্দ্রে পাঠিয়ে পিতা-মাতার পরিচর্যাকে ‘সর্বশেষ উপায়’ হিসেবে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে খসড়ায়।

‘বাস্তবতা মেনে ব্যবস্থা’
জাতীয় সমাজসেবা একাডেমির অধ্যক্ষ এম এম মাহমুদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রবীণদের কীভাবে রাখা যাবে তা নীতিমালা করে ঠিক করা হবে।

কোনো সন্তান তার বাবা-মাকে সঙ্গে না রাখতে পারলে তার জন্য পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

“বাধ্যবাধকতার কোনো জায়গা পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের নেই এবং এটা রাখা যাবে না। কেবল পিতামাতা লিখিত অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কমিটি তা আমলে নিতে পারবে।

“কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত সন্তান না মানলে কমিটি মা-বাবাকে আদালতে অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারবে, তখন আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে।”

মাহমুদুল্লাহ বলেন, “এখনও বাংলাদেশে যে পারিবারিক বন্ধন, তাতে সন্তনরা যদি এক বেলা না খেয়েও থাকে, এরপরেও মা- বাবাকে ত্যাগ করে না। এই সংখ্যাই সব থেকে বেশি। তারপরেও যুগের প্রয়োজনে একজন, দুজন বা পাঁচজনও যদি হয় সেই পাঁচজনকে অ্যাড্রেস করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের রয়ে গেছে। সেই বিষয়গুলো আমাদের চিন্তা করতে হয়েছে।

“কোনো মা-বাবা হয়ত ওই সময়ের অনুভূতি থেকে কোনোভাবে লিখিত অভিযোগ দিল, কিন্তু তারা যখন শুনবেন যে তার সন্তানকে কোর্টে হাজির করেছে বা জেলখানায় ভরেছে, তিনি যদি নড়তেও না পারেন কারও মাধ্যমে কোর্টে গিয়ে করজোড় করে বলবেন, হুজুর আমি কিচ্ছু চাই না আমার ছেলেটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, ওই সময় আমি ভুল করেছিলাম, আমি আমার ছেলেকে চাই। এই অবস্থাটা মাথায় রেখে খসড়া বিধিমালা তৈরি করতে হয়েছে।”

যদি আদালতে যেতে হয়
পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোর ন্যূনতম মানদণ্ড কী হবে- তা নির্ধারণ করে দিয়ে সেখানে মা-বাবাদের কীভাবে রাখতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে খসড়ায়।

বলা হয়েছে, সন্তান ভরণ-পোষণ নিশ্চিত না করলে বাবা-মা নিজে বা তার প্রতিনিধির মাধ্যমে আদালতে অভিযোগ করতে পারবেন।

অভিযোগের ভিত্তি থাকলে আদালত পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ সহায়ক কমিটিকে বিষয়টি জানাবে। এরপর সহায়ক কমিটি বিষয়টি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ এবং পিতা-মাতা ও সন্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে।

আলোচনার পর সহায়ক কমিটি মা-বাবাকে অভিযোগ দাখিলের পরামর্শ দিতে পারবে জানিয়ে খসড়ায় বলা হয়, অভিযোগ পাওয়ার পর আদালত তা আমলে নিয়ে নিষ্পত্তি অথবা আপস নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবে।

আদালত আপস নিষ্পত্তির জন্য উভয় পক্ষকে নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থানে হাজির হতে নোটিস দেবে। আদালত প্রয়োজনে ভরণ-পোষণ সহায়ক কমিটির সহায়তা নিতে পারবে।

কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে আপস নিষ্পত্তি করে এর ফলাফল বাবা-মা ও সন্তানদের সইসহ সংশ্লিষ্ট আদালতকে লিখিতভাবে জানাবে।

আপস নিষ্পত্তিতে ক্ষুদ্ধ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট আদালতে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।

আর আদালত থেকে নিষ্পত্তি করা অভিযোগের বিষয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ক্ষেত্রমতে জেলা ও দায়রা জজ অথবা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।

পিতা-মাতার আচরণ বিধি

  • নিজেদের প্রয়োজন ও অনুভূতিগুলো সন্তানদের একত্রিত করে অথবা আলাদাভাবে অবহিত করবেন।
  • উদ্ভূত কোনো সঙ্কটের ক্ষেত্রে সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
  • আলোচনায় সঙ্কটের সুরাহা না হলে পরিবার, বর্ধিত পরিবারের সদস্য বা স্থানীয় ভরণ-পোষণ সহায়ক কমিটির সহায়তা নেবেন।
  • পরিবারের সব সদস্যদের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ এবং শিশুসহ সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করবেন।
  • নিজস্ব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সুরক্ষার চেষ্টা করবেন।
  • নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য সঞ্চয় করবেন।
  • নিজ নিজ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা বিষয়ক শিক্ষা সন্তান ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন।
  • শারীরিক সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের সেবাযত্ন নিজেরাই নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
  • কোনো প্রয়োজন সন্তান যদি তাৎক্ষণিকভাবে মেটাতে না পারে বা দেরি হলে যথাসম্ভব ধৈর্য্য ধারণ করবেন।

সন্তানের আচরণ বিধি

  • পিতা-মাতার সঙ্গে সব সময় মর্যাদাপূর্ণ আচরণ ও যত্নসহকারে দেখভাল করতে হবে।
  • পিতা-মাতার মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
  • পিতা-মাতার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সেবা, শুশ্রুষা, পথ্য ও অন্যান্য ‍উপকরণ যথাসম্ভব দ্রুত সরবরাহ করবে।
  • পিতা-মাতার নিজস্ব সম্পদ বিনষ্ট করবে না এবং পিতা-মাতার আইনানুগ অধিকার সমুন্নত রাখবে।
  • পিতা-মাতার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করবে।
  • ছলচাতুরির মাধ্যমে পিতা-মাতার সম্পদের যথেচ্ছা ব্যবহার করবে না।
  • পিতা-মাতার সম্পদে অন্য উত্তরাধিকারদের অংশ আত্মসাতের চেষ্টা করবে না।
  • পিতা-মাতার নিজস্ব সম্পদ না থাকলে তাদের দোষারোপ করবে না।
  • পিতা-মাতার সুনাম, মর্যাদা ও পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকবে।
  • আয়-রোজগারের শুরু থেকে সক্ষমতা অনুসারে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ ও আপদকালীন সুরক্ষার লক্ষ্যে সঞ্চয় স্কিম যেমন- ডিপিএস, এফডিআর, স্বাস্থ্যবীমা বা সঞ্চয়পত্রের ব্যবস্থা করবে।
  • পিতা-মাতার নাগরিক অধিকার যেমন- ভোটাধিকার, ধর্মাচার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করবে।

সন্তানদের করণীয়
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, মা-বাবার জন্য দৈনিক নূন্যতম তিনবার বা প্রয়োজন অনুসারে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। বয়স, অসুস্থতা বা প্রতিবন্ধিতা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষ অনুষ্ঠান বা উৎসবে চিকিৎসকের বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করতে হবে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক যেমন- তামাক, ধূমপান, মাদকদ্রব্য পরিহারে পিতা-মাতাকে কাউন্সেলিং করতে হবে।

ঋতু বিবেচনায় তাদের পছন্দ ও শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী আরামদায়ক পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে। বছরে যে কোনো একটি উৎসবে অতিরিক্ত এক সেট নতুন পোশাক সরবরাহ করতে হবে।

বসবাস ও চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি যথোপযুক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। সন্তান নিজে উপস্থিত থাকতে না পারলে তার স্ত্রী, সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যদের দিয়ে বাবা-মায়ের যথোপযুক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে।

কোনো কারণে পরিচর্যা নিশ্চিত করতে না পারলে পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে পরিচর্যাকেন্দ্রে নিয়মিত বিরতিতে তাদের সঙ্গে দেখা করতে হবে।

বাবা-মাকে নিয়মিতভাবে সঙ্গ দিতে হবে। চাকরি বা অন্য কোনো কারণে সঙ্গ দিতে না পারলে বছরে কমপক্ষে দুইবার সাক্ষাৎ করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমে’ নিয়মিতভাবে পিতা-মাতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।

সন্তান প্রবাসী হলে ফোনে যোগাযোগ রাখতে হবে, একমাত্র সন্তান সপরিবারে প্রবাসী হলে তার নিযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে পিতা-মাতার সঙ্গে নিয়মিতভাবে সঙ্গ দিতে হবে।

মা-বাবার আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে টেলিভিশন, কম্পিউটার, ক্লাব, পাঠাগার, পার্ক, খবরের কাগজ ও বইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া তাদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে হবে।

মা-বাবা মারা গেলে সন্তানকে উপস্থিত থেকে দাফন-কাফন বা সৎকারের ব্যবস্থার পাশাপাশি দায়দেনা পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

কোনো সন্তান প্রবাসজীবন বা কোনো কারণে পিতা-মাতা মারা যাওয়ার পর খবর পেয়ে উপস্থিত থাকতে না পারলে উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে দাফন-কাফন বা সৎকারের ব্যয়ভার বহনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

বৃদ্ধাশ্রম
বাংলাদেশে প্রবীণদের সেবায় প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে পুরনো সংগঠন প্রবীণ হিতৈষী সংঘের উপপরিচালক বদরুল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, এই বিধিমালা হলে প্রবীণরা সুবিধা পাবেন।

সরকারের এ উদ্যোগে প্রবীণ হিতৈষী সংঘেরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানান তিনি।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রবীণ নিবাস বা বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা হাতেগোণা কয়েকটি, আর তাতে রয়েছে মাত্র কয়েকশ প্রবীণের থাকার ব্যবস্থা।

প্রবীণ হিতৈষী সংঘের উপ-পরিচালক বদরুল বলেন, “প্রবীণদের নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের কোনো ফোরাম না থাকায় প্রকৃত সংখ্যা জানা সহজ নয়। তবে অনেকেই প্রবীণদের সেবায় কাজ করার বিষয়ে আমাদের পরামর্শ নেন।”

আগারগাঁওয়ে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের প্রবীণ নিবাসে বর্তমানে ৪৭ জন থাকছেন। একজন থাকতে পারবেন এমন একটি কক্ষের মাসিক ভাড়া সেখানে পাঁচ হাজার টাকা। আর খাওয়ার খচর হবে যিনি থাকবেন তার ইচ্ছানুযায়ী।

এই প্রবীণ নিবাসে দুই হাজার টাকায় এক কক্ষে দুইজনের থাকারও ব্যবস্থা। তবে শুরুতে অনেকে সেখানে উঠলেও পরে সিঙ্গেল রুমে চলে যান বলে জানান বদরুল।

তিনি বলেন, থাকা ও খাওয়ার খচরের বাইরে কারো বড় কোনো অসুখ হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়ে তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। বিডিনিউজ