সংবিধান অনুসারে দশম জাতীয় সংসদ না ভেঙে দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের নেয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিটের শুনানি হতে পারে।
রিট করার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান।
রিটে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম তাওহীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সোমবার (১৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন।
গত ৮ জানুয়ারি সংবিধান অনুসারে দশম জাতীয় সংসদ না ভেঙে দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আইনি নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশের জবাব না দেয়াই আজ রিট আবেদন করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী।
গত ৮ জানুয়ারির নোটিশে বলা হয়, সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে সংসদ ভেঙে দিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সে অনুচ্ছেদ প্রতিপালন না করে পুনরায় সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়ায় বর্তমানে দুইটি সংসদ বহাল রয়েছে, যা সংবিধান পরিপন্থী। কিন্তু সে নোটিশের কোনো জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয় বলে জানান ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান।
নোটিশে বলা হয়, ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ সালে শুরু হওয়া দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তারা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন সম্পন্ন করে শপথ অনুষ্ঠান করেছেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গত ৩ জানুয়ারি নেয়া শপথ বাতিল বা প্রত্যাহার করতে স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে পূর্বের সংসদ সমাপ্তি না হওয়া পযন্ত এরা দায়িত্ব পালন করবেন। সে অনুযায়ী নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ৩ জানুয়ারি নেয়া শপথে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথের জন্য নির্বাচিতদের উচিত ছিল ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা। ফলে, এই শপথ বাতিল করার জন্য আমরা বলেছি। গেজেটের মাধ্যমে। ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯ টার মধ্যে আমাদের জানানোর জন্য। অন্যথায় রিট বা আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আর অনুচ্ছেদ ১৪৮(৩) এ বলা হয়েছে, ‘এই সংবিধানের অধীন যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে শপথগ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’
অনুচ্ছেদ ১২৩(৩) এ বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শপথ নেন নতুন মন্ত্রিসভার ৪৭ সদস্য। নিয়মানুযায়ী প্রথমে প্রধানমন্ত্রী এবং পরে পর্যায়ক্রমে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা শপথ নেন।