ভালোবাসা মানে না কোনো বাধা, মানে না জাত-পাত, ধনী-গরিব। তাই তো কোনো কোনো ভালোবাসার গল্প বেঁচে থাকে যুগ-যুগ। আবার ভালোবেসে পরিবার, পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন সমাজচ্যুত বা দেশের গণ্ডে পেরিয়ে পাড়ি দিয়েছে বিদেশ, এমনকি নির্যাতনের শিকার হওয়ার নজিরও রয়েছে অহরহ।
ভালবেসে বিয়ে করে এরকমই করুণ পরিণতি ঘটেছে হিন্দু সমাজের হরিজন বর্ণের যুবক তুষার দাস ও ব্রাহ্মণ বর্ণের মেয়ে সুম্মিতা দেবনাথ অদিতির জীবনে। ভালোবেসে বিয়ে করে অপহরণের দায়ে ১৪ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে আছেন তুষার দাস। আর স্বামীকে ছাড়িয়ে কাছে নিতে তিন মাসের শিশু কোলে নিয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন স্ত্রী সুম্মিতা দেবনাথ অদিতি।
সুম্মিতা ও তার আইনজীবী ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, দুই বছর আগে, তুষার ও সুষ্মিতা ভালোবেসে বিয়ে করেন। তিন মাস আগে তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু তুষার দাস ধর্মীয় বিধানে নিম্ন বর্ণের হওয়ার কারণে শুরুতেই এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুষ্মিতার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা।
মেয়ে নাবালিকা- এই অভিযোগ তুলে সুষ্মিতার মা তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় অপহরণের দায়ে তুষারকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্য়াতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ আ. ছালাম খান। সুম্মিতা দেবনাথ স্বেচ্ছায় তুষার দাসকে বিয়ে করার কথা বললেও তার কথা আমলে নেননি নিম্ন আদালত।
আদালত ১৪ বছর কারাদণ্ড দিয়ে রায়ে বলেন, ‘সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি তুষার দাস রাজ ভিকটিম সুষ্মিতা ওরফে অদিতিকে অপহরণ করে নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আসামি শিশু সুষ্মিতাকে বিয়ে করবেন এই আশ্বাস দিয়ে এই অপহরণ করেছেন। যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হলো। তবে, আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে ওই দায় থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
গত ৩ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তুষার। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি আপিল করেন। এখন স্বামীকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড থেকে মুক্ত করতে হাইকোর্টে এসেছেন স্ত্রী সুম্মিতা দেবনাথ।
আজ (বৃহস্পতিবার) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আপিলের ওপর শুনানি হবে। আদালতে তুষার দাসের পক্ষে লড়বেন অ্যাডভোকেট শিশির মুহাম্মদ মনির ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসাইন।
সুষ্মিতা দেবনাথ বলেন, ‘আমার একটাই অপরাধ, আমি ব্রাক্ষণ বর্ণের মেয়ে হয়ে হরিজন বর্ণের ছেলেকে ভালোবেসে বিবাহ করেছি। আইনের মারপ্যাঁচে আমাদের জীবন আজ বিপন্ন। ৮৮ দিন বয়সের শিশু সন্তান নিয়ে আমাকে ফেরারি হয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। মিথ্যা মামলা থেকে আমার স্বামীর মুক্তি চাই। জাগোনিউজ