প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক আবেদন শুনানিতে দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারীরা যত বড় রুই-কাতল হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের ছাড় দিলে চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার (২ ডিসেম্বর) বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এ সময় অর্থপাচারের ঘটনায় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পিকে হালদার) হালদারকে দেশে ফেরানো এবং গ্রেফতারের বিষয়ে দুই মাস আগে করা গ্রেফতারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরোয়ানা জারি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে করা এজাহারের ফটোকপি এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা আবেদনের কপি দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। স্বতঃপ্রণোদিত আদেশে আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদককে এসব তথ্য-উপাত্ত আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
শুনানিতে আদালত বলেন, যারা দুর্নীতিবাজ, যারা অর্থ পাচার করে তাদের ছাড় দিলে চলবে না।
এসময় খুরশীদ আলম খান বলেন, অবশ্যই।
তখন আদালত বলেন, তারা যত বড় রুই-কাতল হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমাদের সবার উচিত হলো দেশের প্রোপার্টি রক্ষা করা। এটাতো আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে। কাজেই শুধু কোর্ট করবে অন্যরা করবে তাতো না, সবাইকে করতে হবে।
আদালত দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে আরও বলেন, তারা যাতে আইনের জালে ধরা পড়ে সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। জাতির জনক স্বপ্ন দেখেছিলেন এ দেশকে সোনার বাংলা গড়ার। কাজেই ওনার যে স্বপ্ন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
পিকে হালদারকে দেশে ফেরানো এবং গ্রেফতারের বিষয়ে দুই মাস আগে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরোয়ানা জারি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এক পর্যায়ে আদালত বলেন, খুব আনফরচুনেট আড়াইমাস হয়ে গেলো একটা অর্ডার হলো না। ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্টের।
তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, আমি যোগাযোগ করেছি, জানিয়েছি।
আদালত বলেন, আপনি বলবেন, এটা নিয়ে উচ্চ আদালত কনসার্ন।
জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, জি এটা কনভে করবো (এটা জানিয়ে দেবো)।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করেছিল আইএলএফএসএল। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত জানিয়েছিলেন, পিকে হালদার কবে, কখন, কীভাবে দেশে ফিরতে চান তা আইএলএফএসএল লিখিতভাবে জানালে সে বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে।
পরবর্তীতে পিকে হালদারের দেশে ফেরার বিষয়ে গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্টকে জানায়। পিকে হালদারের প্রতিষ্ঠান আইএলএফএসএল’র পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়, ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা আসার জন্য টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
সার্বিক দিক বিবেচনার পর পিকে হালদার হালদারকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পিকে হালদার দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশের আইজি এবং ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি কারাগারে থাকাবস্থায় পিকে হালদার যেন অর্থ পরিশোধের সুযোগ পান সে বিষয়ে সুযোগ দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই ১৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫০০ কোটি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়।