সিরাজ প্রামাণিক : একজন স্বামী যেকোনো সময় তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। তালাকের পর তিনটি ’মাসিক কালচক্র’ পূর্ণ বা ইদ্দতকালীন সময় অর্থাৎ ৯০ দিনের খোরপোশ দেয়া ছাড়া স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সকল দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। তবে বিধানটি ভিন্ন হবে যদি স্ত্রীর মাসিক না হয়। সে ক্ষেত্রে তিন চন্দ্রমাস পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। আর ইদ্দত শেষ হলে আদালত চাইলে নারীর ভরণ-পোষণ দেয়ার জন্য সন্তান (যদি উপার্জনের ক্ষমতা থাকে), অথবা পিতা-মাতা, অথবা আত্মীয়-স্বজনদের আদেশ দিতে পারে। এমন কাউকে পাওয়া না গেলে সবশেষ রাষ্ট্রকে ভরণ-পোষণের জন্য আদেশ দেয়া হতে পারে।
মোঃ হেফজুর রহমান বনাম ছামছুর নাহার বেগ এবং অন্যান্য (১৯৯৫) ১৫ বিএলডি. পৃষ্ঠা-৩৪ মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের একটি সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, তালাক দেয়ার পরও তার তালাকপ্রাপ্ত উক্ত স্ত্রীর পূনঃবিবাহ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট কালের জন্য যৌক্তিক পরিমান অঙ্কের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। তবে এ প্রসঙ্গে আপিল বিভাগ ১৯ বিএলডি পৃষ্ঠা-২৭ মামলার সিদ্ধান্তে বলে যে, গর্ভাবস্থায় একজন তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীলোকের জন্য পরিস্কার নির্দেশনা হলো তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সে ভরণপোষন পাবে। আরেকটি মামলা রশিদ আহমেদ বনাম আনিছা খাতুন (১৯৩২) ৫৯ ইন্ডিয়ান আপিলস, পৃষ্ঠা ২১ এ বলছেন যে, ইদ্দতকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত যদি তালাকের বিষয় স্ত্রীকে অবহিত করা না হয় সেক্ষেত্রে তালাকের বিষয় অবহিত না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী ভরণপোষণ পেতে অধিকারিণী।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তালাকের পর তালাকপ্রাপ্তা নারী কোথায় যাবেন? একবারেই প্রস্তুত জবাব বাবার বাড়ি। ইসলাম ধর্মীয় বিধানানুসারে তালাকপ্রাপ্তা নারী তার পিতার বাড়িতে বা নিজগোত্রে ফিরে যাবে। আমাদের দেশের বিদ্যমান সামাজিক কাঠামোতে তালাকপ্রাপ্তা নারীর পিতা জীবিত এবং সচ্ছল থাকলে নারী পিতার বাড়ি যেতে পারেন। মেয়ে বিধবা হলে বা তালাকপ্রাপ্ত হলে সে মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার উপর বর্তায়। বাবা দরিদ্র হলে স্বচ্ছল মায়ের উপর এরুপ ভরণপোষণের দায়িত্ব বর্তায় এবং মা ও বাবা উভয়ই অসমর্থ্য হলে দাদার উপর এরুপ ভরণপোষণের দায়িত্ব বর্তায়। মা, বাবা বা দাদা কেউই ভরণপোষণ দিতে অসামর্থ্য হলে সেক্ষেত্রে নিকট আত্মীয়দের উপর ভরণপোষণের দায়িত্ব বর্তায়। এখানে নিকট আত্মীয় বলতে ওই ব্যক্তিদেরকে বুঝানো হয়েছে, যার মৃত্যুর পর তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারী তার সম্পত্তির যে উত্তরাধিকার লাভ করত, সে অনুপাতে ভরণপোষণ দিতে হবে।
ইদ্দত একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ দিন, সংখ্যা বা রজঃস্রাব গণনা করা। আরবী পরিভাষায় যে নারীর বিবাহ চুক্তি রদ হয়েছে তার পক্ষে যে সময় সীমায় পূনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ সেই নির্ধারিত সময়কে ইদ্দত বলে। আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে, তালাক অথবা মৃত্যু জনিত কারনে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হবার পর যে সময় সীমার মধ্যে কোন নারী পূণরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না তাকে ইদ্দত বলে। ইদ্দত বিষয়টি বিবাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর তা হলো পিতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রসঙ্গ।
এটি মূলত নারীর মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা বিশেষ করে তার অনাগত সন্তানের জন্ম পরিচয়ের অধিকারকে নিশ্চিত করার জন্য করা হয়। কেননা এ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই জানা যায় যে নারীটি তার পূর্ববর্তী স্বামীর সন্তান গর্ভে ধারণ করেন কি-না। তবে মনে রাখা দরকার যে, ইদ্দত শুধু স্বামী মারা গেলে বা বিবাহবিচ্ছেদ হলেই কেবল প্রযোজ্য।
ধরুণ একজন স্ত্রী গর্ভবতী হয়নি এমন অবস্থায় তার স্বামী মারা গেল। এ ক্ষেত্রে তাকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। আর যদি তিনি গর্ভবতী থাকা অবস্থায় তার স্বামী মারা যান এবং চার মাস দশ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তাহলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। যদি চার মাস দশ দিন পূরণ হওয়ার আগেই সন্তান জন্ম লাভ করে সে ক্ষেত্রেও তাকে চার মাস দশ দিন-ই ইদ্দত পালন করতে হবে।
ইদ্দতের উদ্দেশ্য
মুসলিম আইনে ইদ্দতের প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্বামীর মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদের সাথে সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকরী হয় না। এজন্য ইদ্দতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। স্ত্রী যে স্থানে বসবাস করছে সে স্থানেই বসবাস করবে। স্বামীর স্থানেই বসবাস করতে হবে এমনটি নয়। ইদ্দত পালনের পর নতুন বিবাহ বৈধ হয়।
ইদ্দতের সময় সীমা
১. বালেগা নারী অর্থাৎ পূর্ণ বয়স্ক নারী যার নিয়মিত হায়েজ হয়, তার ইদ্দতকাল তিন হায়েজ পর্যন্ত এবং হায়েজ অবস্থায় তালাক দেয়া হলে ইদ্দতকাল হবে তার পরের পূর্ণ তিনটি হায়েজকাল।
২. অল্প বয়স্ক, বার্ধক্য, রোগব্যাধি বা অন্যকোন কারনে কোন নারীর হায়েজ না হলে তার মেয়াদ পূর্ণ তিন মাস।
৩. কোন নারীর স্বামী মারা গেলে তার ইদ্দতকাল চার মাস দশ দিন।
৪. কোন নারীকে তালাক দেয়ার পর ইদ্দতকালে স্বামী মারা গেলে তাকে স্বামী মৃত্যুর তারিখ থেকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে।
৫. গর্ভবতী নারীর ইদ্দতকাল গর্ভ খালাস হওয়া পর্যন্ত এর বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামীর মৃত্যুর পর অন্তঃসত্তা প্রকাশ পেলে ইদ্দতকাল হবে গর্ভ খালাস পর্যন্ত।
ইদ্দত কখন শুরু হয়
১. স্বামীর মৃত্যুর দিন হতে বা তালাকের ক্ষেত্রে তালাকের দিন হতে,
২. মিলন অনুষ্ঠিত না হলে ইদ্দত পালনের দরকার নেই;
৩. মৃত্যুর সংবাদ ইদ্দতের সময় কাল পেরিয়ে যাবার পর তার নিকট পৌঁছিলে ইদ্দত পালনের দরকার নেই।
ইদ্দত চলাকালে বিবাহ
১.ইদ্দত চলা অবস্থায় বিবাহ করলে সে বিবাহ অনিয়মিত বিবাহ হিসেবে গণ্য হবে।
২. সন্তান জন্মিলে বৈধ হবে। তবে পক্ষগণের মধ্যে দায়-দায়িত্ব সীমিত হবে।
৩. স্বামী বা স্ত্রীর যে কোনো একজনের মৃত্যু হলে কেউ কারোর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে না।
ইদ্দতকালে স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব
১. অন্য বিবাহ করতে পারে না।
২. স্বামীর যদি চারজন স্ত্রী থাকে, তাহলে তালাক ছাড়া চতুর্থ স্ত্রীর ইদ্দতকালের মধ্যে সে অন্য বিবাহ করতে পারবে না, তাকেও এই চতুর্থ স্ত্রীর ইদ্দত কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
৩. স্ত্রী স্বামীর কাছ হতে বা তার সম্পত্তি হতে কোন কোন ক্ষেত্রে ভরণ পোষন আদায় করতে পারবে।
৪. সাধারণতঃ তালাক দাতা স্ত্রী স্বামীর এবং স্বামীর স্ত্রীর উত্তরাধিকার হতে পারবে না। কিন্তু মৃত্যু ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই তারা উত্তরাধিকারী হতে পারে।
৫. ইদ্দতকালে স্ত্রী নির্ধারিত মোহরানা পাবে। তলবী মোহরানা না পেয়ে থাকলে তা সত্ত্বরই পাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, স্বামী মারা যাওয়ার খবর যদি স্ত্রী তাৎক্ষণিক না পান, তখন ইদ্দতের বিধান কী হবে? এ ক্ষেত্রে বিধান হলো, স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর খবর না পেলেও স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ইদ্দত শুরু হয়ে যাবে। আর বিবাহ বিচ্ছেদের বেলায় স্ত্রী যদি গর্ভবতী না হন তাহলে তিনটি ’মাসিক কালচক্র’ পূর্ণ করতে হবে। যদি স্ত্রীর গর্ভবতী অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাহলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী সন্তান হওয়ার আগ পর্যন্ত ইদ্দত পালন করলেই চলবে; হোক সেটা ৯০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে অথবা পরে। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামের এ বিধানটি পুরোপুরি প্রয়োগ করা হয় না। এ ক্ষেত্রে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৭(৫) ধারা অনুযায়ী স্ত্রী গর্ভবতী অবস্থায় তালাক দিলে সন্তান ৯০ দিনের ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার আগে প্রসব করলেও ৯০ দিনই তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে। আর ৯০ দিন অতিক্রম করলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত করতে হবে।
এ বিধানগুলোর পাশাপাশি ইদ্দতের সময় কখন থেকে শুরু হবে সে বিষয়েও আমাদের জানা দরকার। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর ৭ নাম্বার ধারা অনুযায়ী যখন তালাকের বিজ্ঞপ্তি বা নোটিশ জারি করা হবে কেবল তখনই উভয়পক্ষ ৯০ দিনের মধ্যে তালাক প্রত্যাহার করতে পারবে। যেহেতু শরিয়াহ অনুযায়ী ইদ্দত সময়ের মধ্যে তালাক প্রত্যাহার করা যায়, প্রচলিত আইনের অধীনে তালাক প্রত্যাহারের সময়টাকেই ’ইদ্দতকাল’ হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
প্রশ্ন হলো স্বামী অথবা স্ত্রী যেই তালাক দিন না কেন তালাক পরবর্তী ইদ্দতকালে স্ত্রী বিয়ে করতে পারবে কি-না, করলে অথবা করার পরিকল্পনা করলে তার বিধান কী?
১৯৮৫ সালে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য মকবুল মাজেদ বনাম সুফিয়া খাতুন (৪০ ডিএলআর ৩০৫, এইচসিডি) নামক একটি মামলা করা হয়। নিম্ন আদালত মামলাটি খারিজ করলেও উচ্চ আদালত মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে। ইদ্দতকালে স্ত্রী অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না’ এ মর্মে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সুতরাং স্বামী দাম্পত্য অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ইদ্দতকালে অন্যত্র বিয়ে না করার অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করতে পারবে। আর কেউ যদি বিয়ে করেই ফেলে আইনানুযায়ী সে বিয়ের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। এ ক্ষেত্রে নারীটিকে দ্বিতীয় স্বামী থেকে পৃথক হয়ে যেতে হবে এবং নতুন করে পূর্ণ ইদ্দত পালন করতে হবে। যদি নারীটি অন্তঃসত্ত্বা হন, তাহলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত আর অন্তঃসত্ত্বা না হলে তিনটি ঋতু¯্রাব পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। আর দ্বিতীয় বিয়ে যেহেতু শুদ্ধই হয়নি, তাই এ ক্ষেত্রে ইদ্দত শেষে প্রথম স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে বৈধ হবে না। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিয়ের সময় নারীটির যে পরিমাণ মোহর ধার্য করা হয়েছিল, তিনি তা পাবেন না; বরং ধার্যকৃত ওই মোহর এবং মোহরে মিসিল (অর্থাৎ নারীটির সমপর্যায়ের পিতৃবংশীয় নারীদের মোহর) এর মধ্যে যেটা সর্বনিম্ন ধার্য হয়েছিল সেটাই মোহর হিসেবে পাবেন।
এখন দ্বিতীয় বিয়ের বিধান না হয় জানা গেল, কিন্তু ততক্ষণে যদি স্ত্রী পরের ঘরের সন্তান গর্ভে ধারণ করে তাহলে কি হবে? তখন বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৮৯-এর ২১ ধারা অনুযায়ী আগের স্বামী অথবা স্ত্রী জীবিত থাকার কারণে বিয়ে বাতিল হলেও দুই ক্ষেত্রেই (বাতিল বিয়ের কারণে) অবৈধ সন্তান শুধু পিতার কাছ থেকে বৈধ সন্তানের মতো উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে। ক) আগের স্বামী মারা গেছে এ সরল বিশ্বাসে বিয়ে করলে। খ) স্বামী পাগল হওয়ার কারণে বিয়ে বাতিল হয়ে গেলে। জিনিয়া কিওতিন বনাম সিতারাম মনঝি [২০০৩ (১) এসসিসি ৭৩০] নামক মামলায় বলা হয়, যদি বিয়ে বাতিল অথবা বাতিলযোগ্য হয় সন্তান শুধু বাবার কাছ থেকেই সম্পত্তি পাবে।
এ তো গেল উত্তরাধিকারের কথা, কিন্তু এ অবৈধ সন্তানের দায়িত্ব নেবে কে? মূলত স্বামীকেই তখন সন্তানের দায়িত্ব নিতে হবে। আর যদি স্ত্রী সন্তানের ভরণ-পোষণের ভার গ্রহণ করেন তাহলে স্বামীকে দুই বছর পর্যন্ত সন্তানের খরচ স্ত্রীকে দিতে হবে।
যেদিন স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করছে সেদিন স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির নির্দিষ্ট অংশের হকদার হতে পারতো। স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ লাভের পর ধর্মীয় বিধানানুসারে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর পুনরায় বিয়ে করতে পারতো।
বিধবার সম্পত্তি ও বাসস্থানের অধিকার
একজন বিধবা নারীকে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর কোনোভাবেই তাঁর বাসস্থান থেকে জোর করে বের করে দেওয়া যাবে না। স্বামীগৃহ, যেখানে তিনি বসবাস করছেন, এ গৃহে তাঁর বাস করার অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রাপ্য সম্পত্তি তাঁকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে তিনি স্বেচ্ছায় অন্য কোথাও থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দেওয়া যাবে না। তিনি অন্যত্র বিয়ে না করলে তাঁর সন্তানদের তত্ত্বাবধান করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। একজন বিধবা স্ত্রী স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির সন্তান থাকা অবস্থায় ১/৮ এবং সন্তান না থাকলে ১/৪ অংশ পাবেন।
বিধবা পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন
একজন নারী তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দতকালীন (চার মাস ১০ দিন) সময় পার করার পর নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী অন্য সাধারণ নারীর মতো স্বাভাবিক স্বাধীন জীবন যাপন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কোনোভাবে তাঁর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। তিনি অন্যত্র বিয়ে করবেন কি করবেন না, এটা তাঁর সম্পূর্ণ স্বাধীন সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
বিধবার দেনমোহর ও ভরণপোষণের অধিকার
একজন বিধবা তাঁর স্বামীর পরিশোধ করে না যাওয়া দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। স্বামীর মৃত্যু হলেই যে দেনমোহর পাবেন না, তা নয়। দেনমোহর ঋণের মতো, স্বামীর অবর্তমানে স্বামীর উত্তরাধিকারীরা তা পরিশোধ করতে বাধ্য। দেনমোহর পরিশোধ না করা হলে স্বামীর মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করে তিনি তা আদায় করতে পারবেন। এ ছাড়া স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত অংশ একজন বিধবা স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারবেন কিংবা দখলে রাখার অধিকার রয়েছে বলে বিবি বাচান বনাম শেখ হামিদ (১৮৭১) ১৪ এম.আই.এ. পৃষ্ঠা ৩৭৭ এ উল্লেখ রয়েছে। একজন বিধবা মা তাঁর সন্তানের কাছ থেকে ভরণপোষণ পেতে হকদার। সন্তানেরা ভরণপোষণ না দিলে আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। (জমিলা খাতুন বনাম রুস্তম আলী, ৪৮ ডিএলআর (আপিল বিভাগ), পৃষ্ঠা ১১০।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।