প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ১০ শতাংশ কোটা বিধান বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত জামুকার ওই বিধান বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো: মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষ ছিলেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম। তিনি রায়ের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ঐ পরিপত্রটি জারি করে। ওই পরিপত্রে বলা হয় যে প্রত্যেক উপজেলায় গেজেট অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্তির জন্য বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ভাতা-ভোগী সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি তালিকাভুক্ত করা যাবে না।
রায়ের পর যা বললেন আইনজীবী
ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম জানান, হাইকোর্ট গেজেট অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি তালিকাভুক্ত না করা সংক্রান্ত জামুকার বিধান বাতিল ঘোষণা করেছেন।
রিটের পক্ষের আইনজীবী বলেন, অথচ ২০১৭ সালে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ‘ক’ তালিকা প্রস্তুত করা হয়। ওই তালিকাতে রিট আবেদনকারীরা তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু আলোচ্য সিদ্ধান্তটির ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই বাদ পড়ে যান। সে কারণেই ১০ শতাংশ সংক্রান্ত ঐ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাভার সদর, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার ‘ক’ তালিকাভুক্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। ২০২০ সালে দায়ের করা ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট একই বছর জামুকার পরিপত্রটি অর্থাৎ বিধানটি কেন বাতিল করা হবে না মর্মে জানতে চেয়ে জামুকা ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেন।
ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা শুধু বেআইনিই নয় অসাংবিধানিকও। কারণ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১০ শতাংশের কম বা বেশিও হতে পারে। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকেও তালিকার বাইরে রাখা যেমন বেআইনি, একইভাবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় এমন একজনকেও তালিকাভুক্ত করা বেআইনি। কিন্তু এধরনের পরিপত্র জারি করার মাধ্যমে জামুকা যাচাই-বাছাই কমিটিকে একটি ফ্রি লাইসেন্স দিয়েছে। তারা তাদের সুবিধা ও সন্তুষ্টি অনুসারে শুধুমাত্র ১০ শতাংশ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে গেজেটভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করতে পারবে। কিন্তু এই সংখ্যা এলাকাভেদে অনেক বেশি আবার কোথাও কমও হতে পারে। তাই এ ধরনের সংখ্যা নির্ধারণ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ও সংবিধান সমর্থন করে না।