ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পেল সুনামগঞ্জের ৪৫ দম্পতির সংসার। ছোটখাটো পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে পৃথক পৃথক মামলায় আদালতের ব্যতিক্রমী এক রায়ে এসব দম্পতি ফিরেছেন নিজ সংসারে।
সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন গত বুধবার (৮ জুন) এ রায় দেন।
পৃথক পাঁচটি শর্তে আসামিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করেন বিচারক। এই রায়ের ফলে ৪৫ পুরুষ মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন। আর ৪৫ নারী আদালত প্রাঙ্গণ থেকেই ফিরে গেছেন নিজ সংসারে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, যৌতুক, নির্যাতনসহ ছোটখাটো পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে স্বামীদের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক মামলা করেছিলেন ওই নারীরা। পরে তাঁদের অনেকেই স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবাসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে আদালতের বিচারক দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে তাঁদের ‘ভাঙা’ সংসার জোড়া লাগানোর উদ্যোগ নেন।
অভিযোগ আপসে নিষ্পত্তি হওয়ায় মামলার রায়ে আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন বিচারক। রায়ের পর আদালতের কর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এসব দম্পতিকে। একই সময় তাঁদের মিষ্টি উপহার দেওয়া হয়। তখন উপস্থিত দম্পতিরা একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ান।
সংশ্লিষ্ট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নান্টু রায় রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার নিষ্পত্তির আদালত ৫টি শর্ত দিয়েছেন। মুক্তি পাওয়া আসামিদের এসব শর্ত মেনে চলতে বলেছেন আদালত।
আদালতের শর্তগুলো নিম্নরূপ-
১. স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা।
২. স্বামী-স্ত্রী এক অপরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া।
৩. মনোমালিন্য, বিরোধ দেখা দিলে নিজেরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা।
৪. স্ত্রীকে নির্যাতন না করা এবং
৫. যৌতুক না চাওয়া।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, যৌতুকসহ পারিবারিক নানা ঝামেলায় নির্যাতনের শিকার হয়ে সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন সময় ৪৫ নারী তাঁদের স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন। বিচারক দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন ধরে রাখার উদ্দেশ্যে ৪৫ দম্পতিকে তাঁদের পারিবারিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন।
আইনজীবীরা বলছেন, এসব রায় উদাহরণ। এই আদালতের সম্মানিত বিচারক এর আগেও একইভাবে বেশ কিছু মামলার রায় দিয়েছেন। অনেক সংসার ভাঙন থেকে রক্ষা করেছেন। এসব উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এর আগে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ৫৪টি এবং চলতি বছরের ১৫ মার্চ আরও ৫০টি মামলা আপসে নিষ্পত্তির মাধ্যমে মোট ১০৪ দম্পতির সংসার জোড়া লাগিয়ে দিয়েছেন।