গায়ক ইলিয়াস হোসাইনের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলা দশ লাখ টাকার বিনিময়ে আপসে সম্মত হয়েছেন অভিনেত্রী শাহ হুমায়রা হোসেন সুবহা। তাই তিনি মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
আজ সোমবার (২৫ জুলাই) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক সাবেরা সুলতানা খানমের আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হয়ে সুবহা নিজেই এ কথা জানান। এ সময় আসামি ইলিয়াসও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
সুবহা আদালতকে বলেন, দেনমোহর ও ভরণপোষণ বাবদ দশ লাখ টাকা ইলিয়াস তাকে দিয়েছেন৷ ইতোমধ্যে সেই টাকা তিনি পেয়েছেন। তাই আসামি ইলিয়াসের বিরুদ্ধে তিনি অত্র মামলা চালাতে আগ্রহী নয়।
এরপর আদালত এ মামলায় সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সমাপ্ত করে আগামী ২৭ জুলাই রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) এই তথ্য জানান।
এর আগে, গত ১৯ জুন মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে আগামী ২৪ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। রোববার সাক্ষ্যের জন্য নির্ধারিত দিনে সুবহা মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন৷ এ সময় আসামি ইলিয়াস উপস্থিত না থাকায় শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি রাজধানীর বনানী থানায় এ মামলা দায়ের করেন সুবহা।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছর সেপ্টেম্বরে ইলিয়াসের সঙ্গে সুবহার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে ওঠে। ১ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন। বিয়ের সময় সুবহার পরিবারের পক্ষ থেকে ইলিয়াসের চাহিদা মোতাবেক ১২ লাখ টাকার রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়িসহ ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পণ্য দেওয়া হয়। কিন্তু এতেও ইলিয়াস সন্তুষ্ট হননি।
এরমধ্যে সুবহা জানতে পারেন, ইলিয়াস আগে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং অসংখ্য প্রেমের সম্পর্ক চলমান। এরই মধ্যে ইলিয়াস সুবহার কাছে ফ্ল্যাট কেনা বাবদ ৫০ লাখ এবং গাড়ির জন্য আরও ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। গত ৯ ডিসেম্বর ইউটিউব চ্যানেল কেনার জন্য সুবহার মায়ের কাছে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন ইলিয়াস। তাকে আড়াই লাখ টাকা দেয় সুবহার পরিবার।
পরে গত ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে ফ্ল্যাট ও গাড়ি কিনতে ৮০ লাখ টাকার জন্য সুবহাকে চাপ দেন ইলিয়াস। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এর জের ধরে রাত ৮টার দিকে সুবহাকে শারীরিক নির্যাতন করেন তিনি। পরদিন আবারও ৮০ লাখ টাকা যৌতুক চান ইলিয়াস। এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইলিয়াস সুবহাকে মারধর এবং মাথা দেয়ালের সঙ্গে ঠুকে জখম করেন।
এরপর ইলিয়াস সুবহাকে ব্যথার ওষুধের কথা বলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে সুবহা জ্ঞান হারালে ইলিয়াস আলমারিতে থাকা ২০ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার এবং ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যান। সুবহার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মামলাটি তদন্ত করে চলতি বছর ২২ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির তেজগাঁও নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের উপ-পরিদর্শক মাসুমা আফ্রাদ।
এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন পান ইলিয়াস। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। এরপর দুই দফায় আদালতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২২ মার্চ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন একই ট্রাইব্যুনাল।