দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী নারী সংসদ সদস্যের সংখ্যা কমেছে। এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ১৯ জন নারী প্রার্থী। ২০১৮ সালে জয়ী হয়েছিলেন ২২ জন। যদিও ওই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিল।
নারীর ক্ষমতায়নে জাতীয় সংসদে ৫০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে অবশ্য সরাসরি নির্বাচন হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, এ লক্ষ্য অর্জন করার কথা ছিল ২০২০ সালের মধ্যে। তবে তা না পারায় সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
নারীদের এগিয়ে নিতে এসব প্রচেষ্টার মধ্যে দেখা যাচ্ছে, সরাসরি নির্বাচন করে সংসদে আসা নারীর সংখ্যা তেমন একটা বাড়ছে না। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে সংসদে নির্বাচিত নারী সদস্যের সংখ্যা ১৮ থেকে ২২ জনের মধ্যে রয়েছে।
যাঁরা জয়ী হলেন
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরের মতো এবারও গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জয়ী হয়েছেন রংপুর-৬ আসন থেকে। সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী জয়ী হয়েছেন শেরপুর-২ আসন থেকে।
আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত অন্য নারী সংসদ সদস্যরা হলেন গাইবান্ধা-৩ থেকে উম্মে কুলসুম, বগুড়া-১ থেকে সাহাদারা মান্নান, সিরাজগঞ্জ-২ থেকে জান্নাত আরা হেনরী, বাগেরহাট-৩ থেকে হাবিবুন নাহার, বরগুনা-২ থেকে সুলতানা নাদিরা, কিশোরগঞ্জ-১ থেকে সৈয়দা জাকিয়া নূর, মুন্সিগঞ্জ-২ থেকে সাগুফতা ইয়াসমীন, গাজীপুর-৩ থেকে রুমানা আলী, গাজীপুর-৪ থেকে সিমিন হোসেন রিমি, চাঁদপুর-৩ থেকে দীপু মনি, চট্টগ্রাম-২ থেকে খাদিজাতুল আনোয়ার এবং কক্সবাজার-৪ আসন থেকে শাহীন আক্তার।
স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী চার নারী হলেন গাইবান্ধা-১ আসনের আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার, মাদারীপুর-৩ আসনের মোসা. তাহমিনা বেগম, সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেনগুপ্তা এবং হবিগঞ্জ-১ আসনের আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী জয়ী।
ময়মনসিংহ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নিলুফার আনজুম ৯৮৫ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। তবে ওই আসনে একটি কেন্দ্রে ভোট বাতিল করায় ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী সোমনাথ সাহা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
জয়ের হার বেশি
এবার নির্বাচনে ১ হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী অংশ নেন। নির্বাচন কমিশনের ৩ জানুয়ারির হিসাব অনুসারে, এর মধ্যে নারী প্রার্থী ছিলেন ৯০ জন।
নারীর অংশগ্রহণ কম হলেও জয়ের হার বেশি। এবার ভোটে নারী প্রার্থীদের মধ্যে ২১ শতাংশের বেশি জয় পেয়েছেন। আর পুরুষ প্রার্থীদের মধ্যে জয় পেয়েছেন প্রায় ১৫ শতাংশ।
বেসরকারি সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সময়ে নারী জনপ্রতিনিধিদের আলোচনায় ডাকা হয়। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ পরিচালক (নারী ও যুব কর্মসূচি) লিপিকা বিশ্বাস বলেন, নারীদের জন্য মনোনয়ন পাওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থ ও পেশিশক্তির বিষয়টিও বিবেচনায় চলে আসে বলে নারীরা মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন।
নির্বাচনী ইতিহাসে বিজয়ী নারীদের পরিসংখ্যান
ভোটে জয়ী নারীদের কেউ কেউ পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে এসেছেন। তবে অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।
নেসার আমিনের সংগ্রহ, সংকলন ও সম্পাদিত গ্রন্থ বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ও ফলাফল থেকে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে প্রথমবার নারী প্রার্থী সৈয়দা রাজিয়া হাফেজ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে সেটি ছিল খুলনা-৪ আসনের উপনির্বাচন।
এছাড়া ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ জন; ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৫ জন; ২০০১ সালে ৬ জন; ২০০৮ সালে ১৯ জন; ২০১৪ সালে ১৮ জন; ২০১৮ সালে ২২ জন এবং ২০২৪ সালে ১৯ জন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।