ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারকে এক চিঠি দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের মধ্যে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের সাবেক তিনজন বিচারপতিও রয়েছেন।
চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে যুক্তরাজ্য। গাজায় ‘সম্ভাব্য গণহত্যার ঝুঁকি’র প্রেক্ষাপটে দেশটিতে অবশ্যই অস্ত্র বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় সাত ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দলের চাপের মুখে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এরই মধ্যে তাঁকে ওই চিঠি পাঠানো হলো।
প্রধানমন্ত্রী সুনাক গত মঙ্গলবার বলেছেন, অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের কাছে ‘খুব সতর্কতামূলক’ একটি ব্যবস্থা রয়েছে। সংবাদপত্র সানের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি ইসরায়েলি ওই হামলার ঘটনায় একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান। তবে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
সুনাক আরও বলেন, ইসরায়েলের ব্যাপারে যুক্তরাজ্য ‘অব্যাহতভাবে এই পরিষ্কার’ অবস্থান বজায় রেখেছে যে দেশটিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে হবে।
যুক্তরাজ্যের সরকারকে দেওয়া ১৭ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে সই করেছেন ৬০০ জনের বেশি আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। তাঁদের মধ্যে আছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক সভাপতি লেডি হ্যালেও। চিঠিতে বলা হয়, গণহত্যা সনদের সম্ভাব্য লঙ্ঘনসহ আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনজনিত জটিলতা যুক্তরাজ্যকে এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
চিঠিতে বিশিষ্টজনেরা আরও বলেছেন, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্রশস্ত্র ও অস্ত্রব্যবস্থা (প্রতিরক্ষাব্যবস্থা) বিক্রি আন্তর্জাতিক আইন মানার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের বাধ্যবাধকতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষুণ্ন করছে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি লর্ড সাম্পশন ও লর্ড উইলসন। আছেন আরও ৯ জন বিচারক ও ৬৯ জন কেসি।
গত সোমবার গাজার দেইর আল–বালাহ এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) ত্রাণকর্মীদের ওপর বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ যায় সাতজনের। তাঁদের মধ্যে ফিলিস্তিনি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার দ্বৈত নাগরিক এবং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন।
এ হামলাকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। দেশটির সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, হামলার ঘটনা ‘স্বাধীনভাবে’ তদন্ত করা হবে।
ডব্লিউসিকে বলেছে, ত্রাণকর্মীরা একটি গুদামে ত্রাণ নামিয়ে বের হওয়ার পরপর ওই হামলার শিকার হন। সমুদ্রপথে গাজায় পাঠানো ১০০ টনের বেশি ত্রাণ সেখানে পৌঁছে দেন তাঁরা। ত্রাণবহরে তিনটি গাড়ি ছিল। এর মধ্যে দুটি ছিল সশস্ত্র। গাড়ির দৃশ্যমান জায়গায় বড় করে ডব্লিউসিকের লোগো দেওয়া ছিল। এরপরও তিনটি গাড়িতেই হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, (ইসরায়েলের) গুরুতর আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় যুক্তরাজ্যের অস্ত্র ব্যবহৃত হতে পারে—এমন স্পষ্ট ঝুঁকি থাকলে ওই সব অস্ত্র বিক্রির বিষয় স্থগিত রাখার সময় এসেছে।
সাংবাদিকদের ডেভিড ল্যামি বলেন, ইতিপূর্বে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত রাখার নজির রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং টনি ব্লেয়ার যথাক্রমে ১৯৮২ ও ২০০২ সালে এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
সূত্র: প্রথম আলো