অবসরে যাচ্ছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ জিয়াউল করিম

বিচার বিভাগে দুর্নীতির অপপ্রচার কানে আসে

বিদায় সংবর্ধনায় বিচারপতি জিয়াউল করিম

বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় সংবিধান অনুসারে অবসরে গেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম। ১৯৫৭ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করা আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিমের গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ৬৭ বছর পূর্ণ হয়।

শেষ কর্মদিবসে প্রথা অনুসারে তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। এদিন আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) বেলা সাড়ে ১১টার পর এই বিদায় সংবর্ধনা হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিরা বেঞ্চে ছিলেন।

সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও পরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বিদায়ি বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিমের কর্মময় জীবন তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

বিদায় সংবর্ধনায় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম বলেছেন, বিচার বিভাগে দুর্নীতির কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত অপপ্রচার আজকাল প্রায়ই কানে আসে। বিচারব্যবস্থায় কারও একক অধিকার নেই। কারও একক প্রয়াসেও তা চলতে পারে না। সমষ্টিগত প্রয়াসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পূর্বশর্ত। তাই বিচারক থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবারই একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে।

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম বলেন, সুবিচার বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচারালয়ের সর্বনিম্ন কর্মকর্তা থেকে সর্বোচ্চ পদধারীকেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একজন বিচারক সুচিন্তিত মতামত প্রকাশের জন্য বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হলে তা প্রতিহত করতে এ অঙ্গনে যাদের কল্যাণকর পদচারণা, তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবিলা করতে হবে।

আরও পড়ুনঅবকাশে হাইকোর্টের বিচারকাজ চলবে ৮ বেঞ্চে

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম বলেন, ‘একটি পরিবারের গৃহকর্তা যেমন তার পরিবারের সবাইকে একত্র রেখে রক্ষা করেন, আবার শাসনও করেন, ঠিক সেরকমভাবে সিনিয়র বিচারকরাও পরিবারের অভিভাবকের মতো জুনিয়র বিচারকদের ভালোবাসবেন, স্নেহ করবেন, দিকনির্দেশনা দেবেন, এটাই কাম্য। তাদের আগলে রেখে পথ দেখাতে হবে, যাতে তারা সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন। তা না হলে বিচারব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত দু-একজনের পদস্খলনে পুরো বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। একবার যদি বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে যে কোনো সময় অপশক্তি আমাদের দেশ ও সভ্যসমাজকে গ্রাস করবে।’

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম বলেন, “আজ বিদায়বেলায় আপনাদের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, আমরা যেন এমন কিছু না করি, যাতে সুবিচারের প্রতীক এই শ্বেতশুভ্র অট্টালিকার গায়ে বিন্দুমাত্র কালিমা লাগে। আমাদের মনে বেজে না ওঠে ‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি’।”

উল্লেখ্য, রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর আইনে এলএলবি, এলএলএম ও পিএইচডি অর্জন করেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম। তিনি ১৯৮৬ সালে জেলা আদালতে, ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে ও ১৯৯৬ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হন।

২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হন। ২ বছর পর স্থায়ী বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পান তিনি। আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে গত ১৩ আগস্ট শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম।