হাইকোর্টের বিচারপতি আখতারুজ্জামানের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা রাষ্ট্রপতির
বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান

বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে তলব

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান–এর বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখা দিতে তাকে তলব করেছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল (SJC)। আগামী ১ জুলাই বিচারপতি আখতারুজ্জামানকে কাউন্সিলের সামনে হাজির হয়ে ব্যাখা দিতে হবে।

এর আগে চলতি বছরের ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতির নির্দেশে বিচারপতি আখতারুজ্জামানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি। তাদের মধ্যে:

  • ১ জন পদত্যাগ করেছেন,

  • ২ জন স্থায়ী নিয়োগ পাননি,

  • ২ জন ইতোমধ্যে অবসর নিয়েছেন।

বাকি ৭ জন বিচারপতির বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তাদের মধ্যে ৪ জনের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান এবং ৩ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

এই অনুসন্ধানের ফলস্বরূপ ইতোমধ্যে একজন বিচারপতিকে অপসারণ করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর দফা (৬) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ১৮ মার্চ বিচারপতি খিজির হায়াতকে তার পদ থেকে অপসারণ করেন। একই সঙ্গে বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকেও অপসারণ করা হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে এনসিসির সংশোধিত প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের

১৬ অক্টোবর ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে এবং বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবি জানায়।

একই দিন বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইং হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।

ওইদিনই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে কোনো বেঞ্চ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না, যদিও তখন তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

৬ জানুয়ারি ২০২৫ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্যে জানানো হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬(৫)(বি) অনুসারে রাষ্ট্রপতি বিচারপতিদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে দিয়েছেন।

২০১৪ সালে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ এ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে।

২০১৭ সালে এই রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। রায়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ উপধারা পুনর্বহাল করা হয়।

ফলে এখন কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ বা দায়িত্বে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে।