চিকিৎসা–বর্জ্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে: টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫ নিয়ে গভীর উদ্বেগ টিআইবির

বৈষম্যমূলক ধারা ও কমিশনের স্বাধীনতা সীমিত হওয়ার আশঙ্কা — প্রয়োজনীয় সংশোধনের দাবি

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫–এ বৈষম্যমূলক কমিশন গঠনে সহায়ক ও প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, এমন ধারা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। অধ্যাদেশটির প্রয়োজনীয় সংশোধন করার জোর দাবিও জানিয়েছে তারা।

রোববার (২ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির (মানবাধিকার কমিশন) সৃষ্টিলগ্নে যে মৌলিক দুর্বলতার বীজ বপন করা হয়েছিল, তা চিরকাল কেন অব্যাহত রাখতে হবে, তা বোধগম্য নয়। অধ্যাদেশে কমিশনের চেয়ারপারসনসহ সাত সদস্যের মধ্যে দুই সদস্যকে খণ্ডকালীন নিয়োগের যে বিধান রাখা হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক।’

কমিশন সদস্যদের মধ্যে মর্যাদা ও এখতিয়ারের বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি গতিশীলতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিতে এই বিধানটির সংশোধন জরুরি বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি সব কমিশনারের পদমর্যাদার সমতা, সমপর্যায়ের বেতন–ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা ও তাঁদের দায়িত্ব–কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করার দাবি জানান।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চেয়ারপারসন ও কমিশনার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর নাম–পরিচয়সহ প্রাথমিক বাছাইকৃত প্রার্থীদের এবং পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের তালিকা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশের বিধানের সুপারিশ করা হলেও তা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তা ছাড়া কোনো সংস্থার আটকস্থল যদি কমিশনের কাছে আইনবহির্ভূত বলে বিবেচিত হয়, তবে তা বন্ধ করা ও দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিতের সুপারিশও গৃহীত হয়নি, যা হতাশাজনক।’

আরও পড়ুন : সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ পদবি পরিবর্তন করে যথাক্রমে সিভিল জজ ও সিনিয়র সিভিল জজ নামকরণ

কোনো আইন, যার বিধানগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানবাধিকার সংরক্ষণের পরিপন্থী, কমিশনকে তা পর্যালোচনা ও সংশোধনের জন্য সরকারকে সুপারিশের বিধান যুক্ত করার মতামত প্রদান করা হলেও তা বিবেচিত হয়নি উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মানবাধিকারসংক্রান্ত অন্য কোনো আইন এই আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই আইন প্রাধান্য পাবে, ধারা ১৪–এর সঙ্গে এই অংশটুকু উল্লেখ করা হলে ভবিষ্যতে মানবাধিকার প্রশ্নে আইনগত সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কমিশন কর্তৃক মানবাধিকার সুরক্ষার প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করা সহজতর হবে, অথচ অধ্যাদেশে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘ঢালাওভাবে সব অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অনুসন্ধান বাধ্যতামূলক না করে অভিযোগ আমলযোগ্য বিবেচিত হলে সরাসরি তদন্তের আদেশ প্রযোজ্য হওয়ার যে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা গৃহীত হয়নি। এর ফলে কমিশনের কাজে অযথা দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তির হয়রানি বাড়বে এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনা দুরূহ হবে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা সরকারি কর্মচারীকে কমিশনে বা কমিশনের তদন্ত দলে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে সীমিত করা এবং এ ধরনের পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া ও সব ক্ষেত্রে সবার জন্য উন্মুক্ত, স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে, এই বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করা হলেও তা বিবেচনা করা হয়নি। একইভাবে বিবেচিত হয়নি কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্রেষণে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা হলে, সে ক্ষেত্রে কমিশনের দ্বিমত থাকলে তা প্রত্যাখ্যানের সুযোগের বিধান করার সুপারিশও। তা ছাড়া কমিশনের আয়–ব্যয়ের হিসাবের ওপর পরিচালিত বাৎসরিক অডিট সম্পন্নের পর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশের ধারাও অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে মনে করে টিআইবি।

তবে অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর টিআইবিসহ অংশীজনেরা যে সুপারিশ ও মতামত প্রদান করেছে, তার অনেকগুলোই প্রশংসনীয়ভাবে অনুমোদিত খসড়ায় প্রতিফলিত হওয়ায় সন্তোষও প্রকাশ করেছে টিআইবি।