টি. আর. খান

রায়ে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে জনগন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে কি?

একজন দায়িত্বশীল সিনিয়র মন্ত্রী যদি বিজ্ঞ আদালতের রায়ে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে কথা বলেন তাহলে কি দেশের সাধারণ জনগন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে? জনগন ভাববে চাইলেই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে হয় তা বলা যায়, যেখানে ইচ্ছে সেখানে বলা যায়। দেশের সাধারণ জনগন যদি আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হন তাহলে সরকারকে এর জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হবে। দেশের মানুষ আইন মানবেনা, আদালত মানবেনা।
আদালতের রায় বা আদেশ বাস্তবায়ন করবে নির্বাহী বিভাগ। এখন নির্বাহী বিভাগের লোকজন যদি বিচার বিভাগের সাথে লাগালাগিতে লিপ্ত হয় তাতে বিচার বিভাগের কিচ্ছু আসবে যাবেনা। আসবে যাবে নির্বাহী বিভাগের। অবস্থা এমন হবে যে সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে সবকিছু। আইন অনুযায়ী বিচার বিভাগের আদেশ বা রায় সরকার পালন বা মান্য করতে বাধ্য হলেও সরকার যদি বিচার বিভাগের সহযোগী না হয়ে তাকে শত্রু মনে করে তাহলে তো দেশের অবস্থা বারোটা বেজে যাবে।
বিচার বিভাগ কিন্তু সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ধরা যাক, পরিবেশ দূষণ করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। আদালত আদেশ দিলেন যে পরিবেশ দূষণ করা যাবেনা, কারা পরিবেশ দূষণের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হোক। এই যে পরিবেশ দূষণ রোধের কাজটা কিন্তু সরকারের। কিন্তু আদালত পরিবেশ দূষণের জন্য নির্দেশনা দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করছে। আরোও অনেক অনেক বিষয়ে আদালত আদেশ বা রায় দিয়ে মূলত সরকারের বা নির্বাহী বিভাগের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এখন সরকারের কোন সিদ্ধান্ত যদি রাষ্ট্রের সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয় তাতে যদি সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে আদালত তাতে বাধ সাধে তাতে জনগনের সরকার বা সংসদের কাজ হচ্ছে সেটা শুধরে নেয়া, আদালতের প্রতি অসহিষ্ণুতা দেখানো নয়। আমরা সাধারণ জনগন সেটা আশাও করিনা। বাংলাদেশের উচ্চতর আদালত রাষ্ট্র, সরকার এবং জনগনের পক্ষে এ যাবত অনেক যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন যা মাইলফলক হয়ে থাকবে। আইনসভা কিংবা নির্বাহী বিভাগের সেটা ভুলে গেলে চলবেনা।
সম্প্রতি ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিথযশা আইনজীবীদের মতামত নিয়ে যে রায় দিয়েছেন তাতে সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে তা দেখে আমরা বিস্মিত হচ্ছি। এসব ঠিক নয়। এসব সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেয়না। ক্ষমতা থাকলেই তা নিয়ে এভাবে মন্তব্য করা উচিৎ নয়। আপনাদের এসব দেখে আদালত চুপ করে আছে; এর মানে এই নয় যে আপনি যা ইচ্ছে বলে যাবেন। সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিদের ক্ষমতা কতো ব্যাপক তা কিন্তু আইনেই বলে দেয়া আছে।
আপনি রায়ে সংক্ষুব্ধ হতেই পারেন। এর জন্য আইনগত ভাবে ব্যাবস্থা নিন। মুখে যা আসবে বলে দিবেন তা কিন্তু একদম ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, আপনি ক্ষমতা দেখালে আদালতেরও কিন্তু অনেক ক্ষমতা আছে আপনাকে সঠিক পথে নিয়ে আসার।

লেখক: আইনজীবী, চট্টগ্রাম আদালত।