পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় পকেটমার সন্দেহে এক ব্যক্তির দুই পা রশি দিয়ে বেঁধে বাঁশের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার শফিকুল ইসলাম নিজে বাদী হয়ে রোববার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় পত্নীতলা থানায় এ মামলা করেন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের অপারেটর মো. নুরুন্নবী (৩৮), গ্রাম পুলিশ মোজাফফর হোসেন (৪৫), মধইল গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৪২) ও শাহজাহান আলী (৩৮)।

জানা গেছে, গত শুক্রবার (২ মার্চ) পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বাঁশের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে শফিকুলকে পেটানোর ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করা হলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হলে পুলিশ ওই ভিডিওচিত্র দেখে নুরুন্নবী ও মোজাফফর হোসেনকে গ্রেফতার করে। থানায় অভিযোগ দায়েরের আগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ভিডিওচিত্রে নুরুন্নবীকে লাঠি দিয়ে শফিকুলকে পেটাতে দেখা যায় এবং মোজাফফরকে রশি দিয়ে শফিকুলের দুই পা বাঁধতে দেখা যায়। নির্যাতনের শিকার শফিকুলকে উপজেলার মাটিন্দর ইউনিয়নের সুরহট্টি গ্রামে তার বাড়ি থেকে রবিবার বিকালে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হামার কাছে চুরির কোনও টাকা প্যায়নি। তারপরেও সন্দেহ ওরা হামাক মারধর করছে। হামি কারও পকেট মারিনি। ওগের কাছে অনেক কাকুতি-মিনতি করছি। তাও ছাড়ে দ্যায়নি।’ এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন শফিকুলের স্ত্রী নারগিস বানু।

পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতার নুরুন্নবী ও মোজাফফরকে আদালতের মাধ্যমে সোমবার জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণকে পকেটমার সন্দেহে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা। বাকি আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে।’

মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার উপজেলার মধুইল বাজারে শাহজাহান আলী নামের এক ব্যক্তির পকেট থেকে টাকা চুরি যায়। এ ঘটনায় হাটের মধ্য থেকে পকেটমার সন্দেহে শফিকুলকে আটক করে লোকজন। তারা তাকে হাটের পাশেই অবস্থিত আকবরপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে আকবরপুর ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের অপারেটর নুরুন্নবীর নির্দেশে শফিকুলের দুই পা রশি দিয়ে বাঁধে গ্রাম পুলিশ মোজাফফর হোসেন। শফিকুলের দুই পায়ের মাঝখানে বাঁশ ঢুকিয়ে গ্রাম পুলিশ মোজাফফর ও স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বাঁশের দুই প্রান্ত ধরে উঁচু করে ধরে রাখে। এসময় শফিকুলের পায়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান নুরুন্নবী। এই ঘটনায় পুলিশের কাছে গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে শফিকুলকে ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন তারা।