কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, গ্রাচুইটি, অবসর ভাতা দেয়া সুবিধা রেখে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আজ সোমবার (৩০ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নীতিগত অনুমোদনের জন্য আইনটি উপস্থাপন করা হলেও বিস্তারিত আলোচনার পর কিছু সংশোধন সাপেক্ষে এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।
জিয়াউল আলম বলেন, সারাদেশেই কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবায় অত্যন্ত সহযোগী ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা যে অগ্রগতি তা কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্যই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সারাদেশে ১৪ হাজার ৮৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এই পর্যন্ত ক্লিনিকগুলো থেকে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৬২ কোটি ৫৭ লাখ।
তিনি বলেন, বর্তমানে ১৩ হাজার ৮৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। আরও এক হাজার ২৯টি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে ১৪ হাজার ৮৯০টি হবে।
বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই আইন হলে ক্লিনিকগুলো ট্রাস্টের আওতায় চলে আসবে বলে জানান সচিব।
আইনের খসড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি ন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠনের কথা বলা আছে জানিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইনের খসড়া করা হয়েছে। এখন ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হবে।
তিনি বলেন, ট্রাস্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ট্রাস্টের তহবিল ব্যবহার করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া। এজন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক সহযোগিতা গ্রহণ, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সম্পদ ও অনুদান সংগ্রহ এবং এর সুষ্ঠু ব্যবহারের কথা বলা আছে। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা পর্যায়ে হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি কার্যকর রেফারেল প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা আছে।
নতুন ব্যবস্থায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের পদমর্যাদা কি হবে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, আইনে কর্মীদের স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, গ্রাচুইটি, অবসর ভাতা দেয়া সুবিধা রাখা হয়েছে। একটি প্রবিধানের মাধ্যমে এগুলো নিশ্চিত করা হবে।
তারা সরকারি হবে কিনা- প্রশ্নে তিনি বলেন, ট্রাস্টের কর্মচারী হিসেবে তারা এর আওতায় থাকবেন। তবে সরকারের যে সুবিধাগুলো আছে, স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির, গ্রাচুইটি, অবসর ভাতা দেয়া সবই তারা পাবেন।
অবসর ভাতা-সুবিধা যারা কাজ করবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য বলে জানান সচিব।
ট্রাস্টে যে কেউ অনুদান দিতে পারবেন জানিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, সরকারি থোক বরাদ্দ থাকবে, অনুদান থাকবে। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে, স্থানীয় সামাজিক সংগঠন বা ব্যক্তি বিশেষ এখানে দান অনুদান করতে পারবেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে কিছু বলা আছে কিনা- জানতে চাইলে বলেন, না এ বিষয়ে কিছু বলা নাই।
সচিব বলেন, ট্রাস্টে একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী সভাপতি হবেন। এছাড়া একটি বোর্ড থাকবে। যিনি বোর্ডের প্রধান হবেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী মনোনীত খ্যাতিমান ব্যক্তি হবেন। তিনি বোর্ডের সভাপতি হবেন। বোর্ড গঠনের বিবরণ আইনে রাখা হয়েছে। বোর্ডে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকও থাকবেন। তার পদমর্যাদা হবে সরকারের অতিরিক্ত সচিব বা সমমর্যাদার। বোর্ডের সদস্য সংখ্যা হবে ১৪ জন।
বোর্ডের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যোগোযোগ থাকবে এবং মনিটরিং ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান সচিব।
তবে কোনো রোগীর চিকিৎসা দিতে ক্লিনিক যদি অসমর্থ হয়, যদি জটিল রোগী হয় তবে ক্রমান্বয়ে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানোর রেফারেল সিস্টেম থাকবে।