বিশ্বের সর্বোচ্চ ভাস্কর্যটি ভারতীয় ব্যারিস্টার সরদার প্যাটেলের স্মরণে

বিশ্বের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য স্থাপনের গৌরব এখন ভারতের দখলে। দেশটির সাবেক বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা ও প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের ভাস্কর্যটি ১৮২ মিটার (৫৯৭ ফুট) উঁচু, যা প্রায় ৬০ তলা ভবনের সমান উঁচু। এর নামকরণ হয়েছে ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’। জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সরদার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতীয় ব্যারিস্টার ও কূটনীতিক ছিলেন। তিনি সরদার প্যাটেল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের এই জ্যেষ্ঠ নেতা দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ১৮৭৫ সালে মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শেষে সরদার প্যাটেল ১৯৫০ সালে ১৫ ডিসেম্বর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

ভারতের গুজরাট রাজ্যের সাদু বেট আইল্যান্ডে নর্মদা নদীর পাশে ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই ভাস্কর্য দেশটির নতুন এক অনন্য নিদর্শন। এটি বহুল আলোচিত যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যাচু অব লিবার্টির প্রায় দ্বিগুণ। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক এটি নির্মাণে কাজ করেন। স্বনামধন্য নির্মাণ ও প্রকৌশল কোম্পানি লারসেন অ্যান্ড টাউবরোর (এলঅ্যান্ডটি) ৩০০ প্রকৌশলী এই মানবমূর্তি নির্মাণের সঙ্গে ছিলেন। অনেক অপেক্ষা ও উত্তেজনার পর কাল বুধবার স্ট্যাচু অব ইউনিটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরদার প্যাটেলের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকীর এই বিশেষ দিনে তাঁর স্মরণে নির্মিত মূর্তিটি উন্মোচন করা হচ্ছে। ২০১০ সালে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভাস্কর্যটি নির্মাণের ঘোষণা দেন। আট বছর পর এবার সেই ভাস্কর্য দৃশ্যমান হলো।

গুজরাট সরকারের অর্থায়নে স্ট্যাচু প্রকল্পের ব্যয় ৩ হাজার ৫০ কোটি রুপি। ভাস্কর্যটির পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের মে মাসে। সাড়ে তিন বছর ধরে কাজ করে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। সরদার প্যাটেলের ১৯৪৯ সালের বাস্তব জীবনের আলোকচিত্র থেকে স্ট্যাচু অব ইউনিটি তৈরি করা হয়। যে ছবিতে প্যাটেলকে ধুতি ও জ্যাকেট পরা অবস্থায় দেখা যায়। বিশাল এই ভাস্কর্যের শিল্পী হলেন পদ্মভূষণ পুরস্কার বিজয়ী রাম ভি সুতার।

সরদার প্যাটেল ভাস্কর্যের নিচ থেকে ২৫ মিটার উঁচু বা আটতলার উঁচু সমস্থানে ৪ হাজার ৭৪৭ স্কয়ার মিটার আয়তনের প্রদর্শনী হল ও চলচ্চিত্র কেন্দ্র আছে। যেখানে প্যাটেলের জাতীয় জীবনের কৃতিত্ব চিত্রায়িত করা হবে। এটি খুব শিগগির বড় পর্যটন কেন্দ্র হবে। এই স্ট্যাচু ও এর আশপাশের পাহাড়ি বনাঞ্চল পর্যটকদের আকর্ষণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। ভাস্কর্য আরোহণে দুটি লিফটের মধ্যে একটি ১৩৫ মিটার উঁচুতে উঠবে। ছিন্দ্রযুক্ত জানালার সঙ্গে আছে চিত্তাকর্ষক গ্যালারি। প্রতিদিন ভাস্কর্যটি পরিদর্শনে তিন হাজার দর্শনার্থীকে অনুমতি দেওয়া হবে।

স্ট্যাচুর পাদদেশে আছে ভ্রমণকারীদের জন্য হাঁটার পথ, ফুট কোর্ট, বড় বাজার ও অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা। স্ট্যাচুর অদূরে থ্রি স্টার হোটেল ও সেখানে ৫২টি কক্ষ আছে। ২৬৪ আসনের ক্যাফেটেরিয়া ও একটি গিফট শপ আছে। এ ছাড়া ৮০০টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা। স্ট্যাচু অব ইউনিটি ঘিরে বিপুল পর্যটক আকর্ষণ করতে মোদি সরকারের পরিকল্পনা আছে। ভাদোদারা থেকে ৯০ কিলোমিটার ফোর লেন সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। পর্যটকেরা আকাশপথে বা রেলপথে ভাদোদারা পৌঁছে যেতে পারবেন। পরে সেখান থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, ভাড়া করা গাড়ি কিংবা বাসে করে ওই ভাস্কর্যস্থলে যেতে পারবেন।