দুই জোটের প্রার্থীদের পেশা। (ছবি - প্রথম আলো)

দুই জোট মিলিয়ে আইনজীবী প্রার্থীর হার ১১ শতাংশ

এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ৩৬ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ২৯ জন আইনজীবীকে প্রার্থী করেছে। দুই জোট মিলে আইনজীবী প্রার্থীর হার দাঁড়ায় ১১ শতাংশের মতো। দুই জোটের ৬০০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

সংসদের শুরুতে আইনজীবীদের প্রাধান্য ছিল। তবে সময়ের ব্যবধানে এখন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা। কমেছে পেশাদার রাজনীতিবিদের সংখ্যাও।  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান ও ক্রিশ্চিয়ান মিচেলসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক ইঙ্গে আমুন্ডসন ২০১২ সালে যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের সংসদ: প্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহি’ (দ্য পার্লামেন্ট অব বাংলাদেশ: রিপ্রেজেন্টেশন অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটি) শিরোনামে একটি গবেষণা করেন। ওই গবেষণায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ১৯৭০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত সাংসদদের পেশা বিশ্লেষণ করা হয়।

ওই গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি, ৩০ শতাংশ ছিলেন আইনজীবী। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মিলে ছিলেন ২৭ শতাংশ। রাজনীতিবিদ ছিলেন ৫ শতাংশ। সামরিক-বেসামরিক আমলা ছিলেন ৩ শতাংশ।

১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আইনজীবী নির্বাচিত হন ২৭ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ছিলেন ২৪ শতাংশ। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ করেই ব্যবসায়ীদের হার লাফিয়ে ৫৩ শতাংশে ওঠে। অন্যদিকে আইনজীবী সদস্যের হার কমে দাঁড়ায় ১৯ শতাংশ। সামরিক-বেসামরিক আমলাদের হারও বেড়ে হয়ে যায় ৮ শতাংশ। এরপর থেকে ব্যবসায়ীদেরই বাড়বাড়ন্ত চলে আসছে। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যবসায়ী সাংসদদের হার হয় যথাক্রমে ৪৮, ৫৭ ও ৫৬ শতাংশ।

২০০৮ সালে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে বিজয়ীদের মধ্যে আইনজীবী ছিলেন প্রায় ১৫ শতাংশ। এবারের নির্বাচনে মহাজোট ৩৬ ও ঐক্যফ্রন্ট ২৯ জন আইনজীবীকে প্রার্থী করেছে। দুই জোট মিলে আইনজীবী প্রার্থীর হার দাঁড়ায় ১১ শতাংশের মতো।

জাতীয় সংসদে রাজনীতিকদের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং ব্যবসায়ীদের ক্রমাগত প্রাধান্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, রাজনীতি যে ব্যাপকভাবে ব্যবসায়িকীকরণ হয়েছে, এই মনোনয়নে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন। রাজনীতি থেকে তাঁরা মুনাফা করতে চান। এতে রাজনীতির জনকল্যাণের দিকটি বিলুপ্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, বোঝাই যাচ্ছে, ভবিষ্যতের সংসদ প্রতিনিধিত্বমূলক হবে না। সংসদ ব্যবসায়ীদের কোটারি স্বার্থ রক্ষা করে চলবে। প্রথম আলো