নিজ হাতে মায়ের কানে দুল পরিয়ে দিচ্ছেন সহকারী জজ মনিরুল ইসলাম

‘মায়ের জন্য নতুন গহনা’- সহকারী জজের আবেগঘন স্ট্যাটাস

একযুগ আগে মায়ের গহনা বিক্রি করে কলেজের ফরম ফিলাপ করেছিলেন। মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে বিচারক হবে। সহকারী জজ হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী জজ মনিরুল ইসলাম। অতঃপর চাকরির প্রথম বেতন পেয়ে মাকে কানের দুল কিনে দিয়ে মায়ের অম্লান, অতুলনীয়, প্রতিদানহীন আত্মত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা জানাতে ভুলে যাননি তিনি। এ বিষয়ে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন আবেগঘন স্ট্যাটাস। সহকারী জজ মনিরুল ইসলামের সে স্ট্যাটাসটি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল –

“আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগের কথা। আমি তখন কলেজে পড়ি। হঠাৎ কলেজের ফরম ফিলাপে বেশ কিছু টাকা দরকার পড়ে। বাবা স্কুলের একজন সাধারণ শিক্ষক ছিলেন। যে টাকা সম্মানী পেতেন তা দিয়ে আমার আর আমার ভাইয়ের পড়াশোনা চালানো বেশ কঠিন হয়ে পড়তো। আর যখন কোন বিশেষ পরিমাণ টাকার দরকার পড়তো তখন জমি বিক্রি ছাড়া উপায় ছিলো না। আবার জমিও যে খুব বেশি ছিলো তা নয়। টাকার খুব জরুরি দরকার। খুব ক্রাইসিস চলছিলো। বাবা অনেক চেষ্টা করেও জমি বিক্রি করতে পারলেন না। কিছুটা নিরাশ লাগলো বাবাকে। তাহলে কি এবার আমার ছেলের ফরম ফিলাপ হবে না? বাবার চোখে মুখে বিষণ্ণতা। ফরম ফিলাপের আর মাত্র এক দিন বাকি। কি করা যায় তা ভেবে নিশ্চুপ আমার বাবা।

হঠাৎ আমার মা বাবার কাছে আসলেন আর তার কান থেকে দুটো সোনার গহনা খুলে বাবার হাতে তুলে দিলেন আর বললেন দ্রুত বিক্রি করে ফরম ফিলাপ করতে। বাবা বিক্রি করে আমাকে টাকা দিলেন আর তার পরদিনই আমি ফরম ফিলাপ করলাম। সে দিন মা তার শখের জিনিসগুলো অবলীলায় দিয়েছিলেন আমার ভবিষ্যতের জন্য। আমি সে দিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমার মায়ের স্বপ্নের চাকুরীর প্রথম মাসের বেতন দিয়ে মায়ের জন্য এ রকমই গহনা কিনে দিবো। তাই গত ০৩.০১.২০১৯ তারিখে ময়মনসিংহ থেকে প্রথম মাসের বেতন দিয়ে মাকে না জানিয়েই গহনা কিনে নিলাম। মাকে বলিনি, কারণ বললে নিশ্চিত মানা করতেন। মা আমার হাতে তার সেই চিরচেনা সোনার ঝুমকা দোল দেখেই কেঁদে ফেললেন। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। মা একটু আড়াল করেই তার চোখ মুছলেন।

আমি নিজ হাতে মাকে সেই দুল পরিয়ে দেই। সে যে কি আনন্দ! এ এক পরম পাওয়া। এই অনুভূতি ভালো লাগার অনুভূতি। আমি আল্লাহর রহমতে জজ হয়েছি। আল্লাহ অনেক বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ আমার মায়ের সে স্বপ্ন পূরণ করেছেন। লাখ লাখ শুকরিয়া তাঁর কাছে। আমি জানি এবং বিশ্বাস করি কোন কিছুর বিনিময়ে মায়ের প্রতিদান দেয়া যায় না। শুধু নিছক কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া। এই ধরণের ঘটনা প্রায় প্রতি মায়ের ক্ষেত্রেই ঘটে। তাই সব মা-দের প্রতি কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর সীমাহীন ভালোবাসা। মায়ের অবদান অম্লান, অতুলনীয়, প্রতিদানহীন। মহান সৃষ্টিকর্তা সকল মা-কে সুস্থ রাখুন আর যাদের মা চলে গেছেন সেই মা-দের শান্তিতে রাখুন।”

(সহকারী জজ মনিরুল ইসলামের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত)