ছবি : বর্ধমানের পকসো আদালত

৬ দিনে ধর্ষণের বিচার করে পকসো আদালতের অনন্য নজির স্থাপন

এক কিশোরীকে ধর্ষণের মামলায় ছ’দিনে বিচার শেষ করে অভিযুক্ত যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল কলকাতার শিয়ালদহ আদালত। বিচারে বিলম্বের চিরাচরিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে যা বেনজির অবশ্যই। তবে এত দ্রুত তদন্ত-চার্জশিট পেশ ও বিচার সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিকতার আশঙ্কাও করছেন আইনজীবীদের একাংশ।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এই সময়ের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকালে অতিরিক্ত জেলা-দায়রা বিচারক জিমূতবাহন বিশ্বাস পকসো মামলায় অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ দে-কে দোষী সাব্যস্ত করেন। দুপুরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঘোষণা হয়। দু’লক্ষ টাকা জরিমানারও নির্দেশ দেয় আদালত। যার ৯০ শতাংশ নির্যাতিতা নাবালিকাকে দিতে বলা হয়েছে।

আদালত সূত্রে খবর, গত ২১ জুলাই অসুস্থ হয়ে পড়ে বছর ১৭-র কিশোরী। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানা যায়, মেয়েটি ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নির্যাতিতা জানায়, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে সহবাস করেছে বিশ্বজিৎ। পরে বিয়ে করতে অস্বীকার করে ওই যুবক। বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ জুলাই উল্টোডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির মা। এক দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। দু’দিনে চার্জ ফ্রেম করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে আদালত। টানা তিন দিন শুনানির পর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

অন্যদিকে ধর্ষণের মতো মামলায় মাত্র এক দিনে কীভাবে চার্জশিট পেশ সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীদের কেউ কেউ। ভ্রূণের ডিএনএ পরীক্ষা হয়নি। হয়নি ফরেন্সিক টেস্ট। এ সব পরীক্ষা ছাড়া কী করে অভিযুক্তকে নিশ্চিত ভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হল, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রবীণ আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মন্তব্য, ‘বহু ক্ষেত্রে পকসো-র অপব্যবহার হচ্ছে। এত দ্রুত যাবজ্জীবন মানে বিচারের নামে অবিচার করা হয়েছে।’

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এমন মামলায় অভিযুক্ত এবং নির্যাতিতার পোশাক ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠাতে হয়। সেই রিপোর্ট আসতে সময় লাগে। ২৪ ঘণ্টায় চার্জশিট পেশ তা হলে কী করে সম্ভব? ৫ দিনে কি বিচার শেষ হয়!’

সরকারি কৌঁসুলি বিবেক শর্মার বক্তব্য, ‘পকসো-য় দ্রুত মামলা শেষের বিধান রয়েছে। দিনরাত খেটে তদন্তকারী অফিসার কাজ করেছেন। তাঁর পুরস্কার প্রাপ্য।’

বিচারকও রায়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উল্লেখে জানিয়েছেন, পকসো মামলা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে বলা হয়েছে। শুনানিতে অযথা স্থগিতাদেশেও নিষেধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, পকসো হচ্ছে প্রিভেনশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেনসেস এর সংক্ষিপ্ত রূপ। শিশু সুরক্ষায় এ সংক্রান্ত আইন করেছে ভারত। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে গঠন করা হয়েছে আলাদা আদালত যা পকসো আদালত নামে পরিচিত।