চট্টগ্রামে আইনজীবীদের মানববন্ধন

চট্টগ্রামের ম্যাক্স হসপিটালের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের মানববন্ধন

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলম মাসুদের স্ত্রীর গর্ভজাত শিশুর মৃত্যুর প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ন্যায়বিচারের দাবিতে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় একের পর এক মৃত্যুর অভিযোগে বহুল বিতর্কিত নগরীর বেসরকারি চিকিৎসালয় ‘ম্যাক্স হাসপাতাল’-এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা।

আজ সোমবার (৬ জানুয়ারী) বেলা ১২ ঘটিকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আইআইইউসি ল’ এলামনাই এসোসিয়েশন (ইলা) -এর উদ্যোগে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় পাঁচ শতাধিক আইনজীবীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুলতান মোহাম্মদ অহিদ।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমতিয়াজ আহমেদ জিয়ার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এস এম বদরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আ.ক.ম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, সহ সাধারন সম্পাদক আবদুস সাত্তার সরোয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান ফারুখ, অ্যাডভোকেট তৌহিদুল মনির টিপু, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোকতার আহমদ, অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি সেক্রেটারি এবং বিভিন্ন আইনজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা বহুল বিতর্কিত ম্যাক্স হসপিটালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ইতিপূর্বে একাধিকবার রোগী মৃত্যুর পরেও হাসপাতাল পরিচালনা কার্যক্রম কিভাবে চলছে সেটার প্রশ্ন তুলেন। চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা এবং অপেশাদারিত্বের সাথে হাসপাতাল পরিচালনায় সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। আইনজীবী কে উদ্দেশ্য করে বিএমএ নেতা ডাক্তার ফয়সাল ইকবালের কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান।

উল্লেখ্য,‌ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ আল মাসুদের স্ত্রী শারমিন আক্তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর ২৪ এপ্রিল থেকে ডা. আফরোজা ফেরদৌসের তত্ত্বাবধানে ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৫ মে আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুসারে প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল ১১ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে ১৩ অক্টোবরের আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত হয় ১৭ ডিসেম্বর। এর আগে ২৮ অক্টোবরও আফরোজ ফেরদৌসের কাছে রোগীর নিয়মিত চেকআপ করানো হয়।

গত ১ ডিসেম্বর শারমিন আক্তার পেটে ব্যথা অনুভব করলে তাকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবারও চিকিৎসক আফরোজা ফেরদৌসের কাছে নিয়ে গেলে ডা. আফরোজার পরামর্শ অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়। পরবর্তীতে আবারও রোগী পেটে ব্যথা অনুভব করায় পুনরায় ওইদিনই ম্যাক্স হাসপাতালের ল্যাবে ডা. এএইচএম রকিবুল হকের কাছে নিয়ে গেলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুসারে রোগীর গর্ভে বাচ্চার অবস্থান ঠিক আছে বলে দাবি করেন ডা. আফরোজা। পরবর্তীতে তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে এলজিন ৫০ মিলিগ্রাম ওষুধ রাতে এবং পরদিন সকালে খাওয়ানো হয়।

পরবর্তীতে ব্যথা স্বাভাবিক হলেও ৩ ডিসেম্বর আবারও তীব্র ব্যথা অনুভব করলে রোগীকে দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসক সুমাইয়া রফিকের তত্ত্বাবধানে রোগী মৃত ও গলিত কন্যাসন্তান প্রসব করেন। এদিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমাইয়া রফিক ভুক্তভোগীর পরিবারকে জানান, একদিন আগেই গর্ভে ওই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

আইনজীবী ইউসুফ আল মাসুদ বলেন, ‘ডা. আফরোজা গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা না করায় এবং মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে ডাক্তার রকিবুল হক ইউজিসি প্রতিবেদন তৈরি করায় সঠিক চিকিৎসা ও ইউজিসি প্রতিবেদনের অভাবে গর্ভে আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তারকে বারবার আমার স্ত্রীর সমস্যার কথা বলার পরেও তিনি গুরুত্ব না দিয়ে ডেলিভারির সময়ে আসার জন্য বলেছেন। উনি গুরুত্ব দিলে আমার এই দিন দেখতে হতো না। অদক্ষতা ও অবহেলায় কত পরিবারের হাসি কেড়ে নেয় তারা!’

এই ঘটনায় ইতিপূর্বে ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার জাহানের আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর স্বামী আইনজীবী ইউসুফ আলম মাসুদ। মামলায় অভিযুক্ত তিনজন হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ম্যাক্স হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আফরোজা ফেরদৌস, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন চমেক হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও আলট্রাসাউন্ড কেন্দ্রে কর্মরত ডা. এএইচএম রকিবুল হক এবং ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. লিয়াকত আলী খান। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ দেয়।