অ্যাডভোকেট সাব্বির এ মুকীম

শাজনীন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়: এক ঘটনায় দুই এফআইআর নয়

সাব্বির এ মুকীম: শাজনীন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার যে আইনে সম্পন্ন হয়েছে তথা নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯৫ এর উত্তরসূরী আইন বর্তমানে প্রচলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর সাম্প্রতিক ২০২০ সনের সংশোধনী নিয়ে অন্তত ২টি ভুল তথ্য আলাপ হয়।

প্রথমত, আইনে ডিএনএ টেস্টকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। যদি ডিএনএ টেস্ট করার সিদ্ধান্ত হয় তবে ডিএনএ আইন ২০১৪ এর বিধান মানা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড এই আইনে আগেও ছিলো। আইনের ৯ (৩) ধারা আইনের একটি অরিজিনাল সেকশন যাতে বলা আছে-

যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

এবার আলোচনায় ফেরা যাক। আলোচ্য আপিলের রায়টি ৭০ ডিএলআর (আপিল বিভাগ) এর ৭০ নং পাতা হতে ছাপা রয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চের এই সর্বসম্মত রায়ের অথর জাজ বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।

শাজনীন মামলার ডেট লাইন এমনতর

১লা এপ্রিল, ১৯৯৮: শাজনীনের বাথরুমের বাতি ঠিক করতে গিয়ে আসামী হাসান শাজনীনকে জড়িয়ে ধরে প্রেম নিবেদন করে। শাজনীন চিৎকার দিয়ে বলে ঘটনা শাজনীন তার বাবা-মাকে জানাবে। (প্যারা- ২, পৃষ্ঠা- ৭৩)

২রা এপ্রিল, ১৯৯৮: সপরিবারে শাজনীন মৌলভিবাজারের কুলাউড়া থানার মেরিনা চা বাগানে বেড়াতে যান।

৩রা এপ্রিল, ১৯৯৮: বাবা-মা সেদিনই ভারতের শিলং চলে যাওয়ায় তাঁদের বলতে না পারলেও হাসানের প্রেম নিবেদনের কথা শাজনীন তাঁর বড় ২ বোনকে জানান।

৭ই এপ্রিল, ১৯৯৮: হাসানের প্রেম নিবেদনের কথা শাজনীন তাঁর বড় ২ বোন এর স্বামীদেরকেও জানান। বোন এবং স্বামীগণ সিদ্ধান্ত দেন ভারত থেকে ফেরা মাত্রই শাজনীন বাবা-মাকে হাসানের ঘটনা জানাবেন।

১৬ই এপ্রিল, ১৯৯৮: শাজনীন এবং তাঁর বড় বোনদের পরিবার ঢাকায় ফিরেন এবং বাবার বাসায় না গিয়ে শাজনীন তাঁর ১ বোনের বাসায় উঠেন।

১৮ই এপ্রিল, ১৯৯৮: শাজনীনের বাবা-মা দেশে ফিরেন এবং শাজনীনকে বোনের বাসা থেকে তাঁদের মানে শাজনীনের বাবার বাসায় নিয়ে যান। শাজনীনের মা বিদেশ হতে ফিরে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় সেদিন না জানিয়ে, পরের শুক্রবার জুমার নামাজের পর বাবা-মাকে হাসানের ঘটনা জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।

২১ শে এপ্রিল, ১৯৯৮: শাজনীনের বড় বোন শাজনীনকে নিয়ে গুলশান মার্কেটে যান। বাসায় যখন ফিরেন, তখন তাঁরা দেখেন, দুয়ারে হাসান দাঁড়িয়ে। হাসানকে দেখেই শাজনীন চিৎকার দিয়ে ওঠেন। তখন তাঁর সাথে থাকা বড় বোন শান্ত হতে বলে শাজনীনকে। আবারও আশ্বাস দেন পরের শুক্রবারই মানে ২৪ শে এপ্রিল, ১৯৯৮ বাবা-মাকে ঘটনা জানানো হবে। হাসান তারিখটি শুনতে পান।

২৩ শে এপ্রিল, ১৯৯৮: এই দিন বিকেলে শাজনীনের বাবার বাসায় ১টি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেদিন ও বারান্দায় হাসানকে দেখে শাজনীন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরের দিন মানে ২৪ তারিখ বিচার হবে বলে শাজনীনকে তাঁর বোনেরা শান্ত করে তাঁর বেডরুমে নিয়ে আসেন।

২৩ শে এপ্রিল, ১৯৯৮: শাজনীনের লাশ শাজনীনের বেডরুমে পাওয়া যায়। অনুমান রাত ৮টায় তাঁকে হত্যা করা হয়।

২৪ শে এপ্রিল, ১৯৯৮: শাজনীনের বাবা গুলশান থানায় থানা কেস নং ৭৩/ তারিখ ২৪ শে এপ্রিল, ১৯৯৮ এ এফআইআর এর মাধ্যমে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এজাহারে কর্মচারী শহিদকে সন্দেহভাজন লেখা হয়। মামলায় একজন সিআইডি কর্মকর্তাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে তদন্তভার দেয়া হয়।

২রা মে, ১৯৯৮: শাজনীনের বোনেরা হত্যকান্ডের ৯দিন পর বাবা-মাকে হাসানের ঘটনা জানান।

৪ঠা সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮: সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে চার্জশীট দাখিল করে, চার্জশীটভুক্ত ৭ ব্যক্তিকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯৫ ২য় এফআইআর মূলে নারী শিশু মামলা দায়ের করেন।

২রা সেপ্টেম্বর, ২০০৩: নিম্ন আদালত রায় প্রদান করেন।

৫ই, ৬ই ও ৭ই জুলাই, ২০০৬: হাইকোর্ট ডিভিশন রায় প্রদান করেন।

২রা অগাষ্ট, ২০১৬: আপিল বিভাগ আপিলের রায় প্রদান করেন।

৫ই মার্চ, ২০১৭: আপিল বিভাগ রিভিউ দরখাস্তে রায় প্রদান করেন।

নিম্ন আদালতের রায়ে সকল আসামীর মৃত্যুদন্ড সাজা হয়। হাইকোর্ট ডিভিশনের রায়ে ১জন কে খালাস দেয়া হয়, বাকী ৫ জনের মৃত্যু দন্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। আপিল বিভাগে কেবল মাত্র দোষ স্বীকারকারী আসামী শহিদের মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে, বাকী সব আসামী খালাস পায়। শহিদ তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার চেয়েছিলো- এই যুক্তিতে এবং যে যুক্তিতে আপিলের রায়ে বাকী আসামীরা খালাস পায় সেই একই যুক্তিতে খালাস চেয়ে রিভিউ করে। এই ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের আপিল রায়ের যুক্তি শহিদের জন্য প্রযোজ্য নয় মর্মে রিভিউতে রায় দেয়া হয়।

কি ছিলো সেই যুক্তি যে যুক্তিতে আপিলের রায়ে অভিযুক্তদের খালাস দেয়া হয়েছিলো? পুরো রায় না পড়েও কেবল রায়ের ৮১ নং প্যারা পড়লেই তা জানা যায়। সে প্যারার সারসংক্ষেপ হলো-

(১) মহান সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ মোতাবেক আপিল বিভাগকে প্রদত্ত কমপ্লিট জাষ্টিস ক্ষমতা প্রয়োগ করে সে কয়জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।

(২) মামলায় ১০৪ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করতে হয়েছিলো কারণ এই মামলা বিচারে একটা বিশাল পরিমাণ সময় (প্রায় ১৮ বছর) ব্যয় হয়েছে আর এই বিশাল পরিমাণ সময়ে অভিযুক্তগণ যে বিচারে বহু বহু দিন হাজত খাটলেন, সে বিচার পুরোটাই ভুল বিচার।

(৩) ১৮ বছর ধরে চলা বিচারের পুরোটাই ভুল বিচার কারণ পুরো মামলাটা চলেছে ২য় এফআইআর এর উপর ভিত্তি করে।

বিজ্ঞ আদালত লেখেন:-

“So, in the circumstances though the FIR (২য় এফআইআর) on the basis of which this present case was started was illegal, we think that justice will be defeated if the entire proceeding of this case(২য় এফআইআর) is quashed at this stage with the direction to start the proceeding of the earlier case. (১ম এফআইআর)”

ব্রাকেট বন্দি বাংলা লেখাগুলো বোঝার সুবিধার্থে আমি দিয়েছি। কেন ২য় এফআইআর অবৈধ যার কারণে ২য় এফআইআর মূলে চলা পুরো মামলাই বাতিল হলো সরাসরি তার ব্যাখ্যা দেয়া না হলেও কি করা উচিৎ ছিলো তা বলা হয় এভাবে-

“The proper course was to convert that sessions case (১ম এফআইআর) into a case under the Nari-o-Sishu Nirjaton (Bishes Bidhan) Ain, 1995 and send the same to the concerned Nari-o-Sishu Nirjatan Daman Bishes Adalat for trial of the case under that Ain of 1995, but that was not done, rather that Sessions Case No 95 of 1999 (১ম এফআইআর) was kept stayed till disposal of the present case(২য় এফআইআর).”

অর্থাৎ ১ম মামলাটি তদন্ত শেষে চার্জশীট দেয়ার সময় ২য় এফআইআর না করে ১ম মামলাটিই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা হিসেবে পরিচালনা করা উচিৎ ছিলো।

একই ঘটনা নিয়ে দুটি এফআইআর এই বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট প্রশ্ন ওঠানো হয়নি। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে অবশ্য বহু মামলায় সুস্পষ্টভাবে ২য় এফআইআরকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক ক্রিমিনাল রিট পিটিশন নং ১৩০/২০২০ এর রায়ে বিচারপতি ডঃ ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচুড় এবং বিচারপতি এম আর শাহ্ লেখেন,

No other FIR or, as the case may be, complaint shall be initiated or pursued in any other forum in respect of the same cause of action emanating from the broadcast on 21 April 2020 by the petitioner on R Bharat. Any other FIRs or complaints in respect of the same cause of action emanating from the broadcast on 21 April 2020, other than the FIRs or complaints referred to in (v) above are also held to be not maintainable.

একইভাবে টিটি এন্টনি বনাম কেরালা ও অন্যান্য (ক্রিমিনাল আপিল ৬৮৯/২০০১) মামলায়ও একই নীতির প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়:-

All other informations made orally or in writing after the commencement of the investigation into the cognizable offence disclosed from the facts mentioned in the First Information Report and entered in the station house diary by the police officer or such other cognizable offences as may come to his notice during the investigation, will be statements falling under Section 162 of Cr.P.C. No such information/statement can properly be treated as an F.I.R. and entered in the station house diary again, as it would in effect be a second FIR and the same cannot be in conformity with the scheme of the Cr.P.C. Take a case where an FIR mentions cognizable offence under Section 307 or 326 I.P.C. and the investigating agency learns during the investigation or receives a fresh information that the victim died, no fresh FIR under Section 302 I.P.C. need be registered which will be irregular; in such a case alteration of the provision of law in the first FIR is the proper course to adopt. Let us consider a different situation in which H having killed W, his wife, informs the police that she is killed by an unknown person or knowing that W is killed by his mother or sister, H owns up the responsibility and during investigation the truth is detected; it does not require filing of fresh FIR against H – the real offender-who can be arraigned in the report under Section 173(2) or 173(8) of Cr.P.C., as the case may be.

এমনকী অমিতভাই অনিল চন্দ্র শাহ (অমিত শাহ বনাম সিবিআই (ক্রিমিনাল রি পিটিশন নং ১৪৯/২০১২ মামলায় ২য় এফআইআর কে ভারত সংবিধানের ২১ ধারার লংঘন মর্মে রায় দেয়া হয়েছে

This Court has consistently laid down the law on the issue interpreting the Code, that a second FIR in respect of an offence or different offences committed in the course of the same transaction is not only impermissible but it violates Article 21 of the Constitution.

যদিও উপকার সিংহ বনাম বেদ প্রকাশ সিংহ (ক্রিমিনাল আপিল নং ৪১১/২০০২) মামলায় এক ঘটনায় দুই এফআইআর এর অনুমতি দেয়া হয়েছিলো, এত বলা হয়

“21. From the above it is clear that even in regard to a complaint arising out of a complaint on further investigation if it was found that there was a larger conspiracy than the one referred to in the previous complaint then a further investigation under the court culminating in another complaint is permissible.”

তবে বাদী ও বিবাদীর পরস্পরের নিকট পাল্টাপাল্টি পাওনা বা কাউন্টার/ক্রস ক্লেইমকে কেন্দ্র করে। কেবল মাত্র এই একটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে ভারতীয় আদালত এ ২য় এফআইআর এর অনুমোদন দেখতে পাওয়া যায়।

দুই এফআইআর এর প্রশ্ন পাকিস্তানেও ওঠানো হয়েছিলো সুঘ্রান বিবি বনাম রাষ্ট্র পিএলডি ২০১৮ (সুপ্রীম কোর্ট) ৫৯৫। এই মামলায় ঘটনা সংক্ষেপ ছিলো, পাক পুলিশ সুঘ্রাণ বিবির ছেলে মোহসেন আলীকে ২১শে মার্চ, ২০০৮ইং তারিখে ক্রসফায়ারে হত্যা করে। ক্রসফায়ারের পর পুলিশেরই এক এসআই ভিক্টিম মোহসেনসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর মূলে দন্ডবিধি ও অস্ত্র আইনে মামলা করে। পরবর্তিতে ক্রসফায়ারে নিহত মোহসেন আলীর মা সুঘ্রাণ বিবি লাহোরের বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে মোহসেন আলীকে হত্যার অভিযোগ এনে এক নালিশ দায়ের করেন। সুঘ্রাণ বিবির নালিশী মামলা চলতে থাকে, চার্জ শিট দেয়ার পরেই মামলা ঝিমিয়ে পড়ে।

হতাশ সুঘ্রাণ বিবি তখন পাকিস্তান সংবিধানের ১৮৪(৩) অনুচ্ছেদের অধিকার মূলে আলোচ্য মানবাধিকার মামরাটি (আমরা যাকে বলি রিট পিটিশন) দায়ের করেন। তিনি স্থানীয় থানাকে তাঁর অভিযোগটিকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ প্রার্থনা করেছিলেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আসিফ সাঈদ খান খোসার নেতৃত্বে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের ৭ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ আলোচ্য মামলায় মূল বিচার্য বিষয় ঠিক করেন:-

“The issue before us, to put it very simply, is as to whether a separate FIR can be registered for every new version of the same incident when commission of the relevant cognizable offence already stands reported to the police and an FIR already stands registered in that regard or not.”

সারমর্ম বঙ্গানুবাদ হলো এক ঘটনায় ভিন্ন তথ্য দিয়ে একের অধিক এফআইআর করা যাবে কীনা? (রায়ের প্যারা-৩)

বিজ্ঞ আদালত একই ঘটনায় একাধিক এফআইআর হলে তার আইনগত প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ৭ পয়েন্টের একটি গাইড লাইন প্রদান করেন এবং মামলা খারিজ করতঃ ২য় এফআইআরকে অগ্রহণযোগ্য বলেন। রায়ের ২৭ প্যারায় প্রদত্ত সে গাইড লাইনের ৪নং পয়েন্ট হলো:-

(iv) During the investigation conducted after registration of an FIR the investigating officer may record any number of versions of the same incident brought to his notice by different persons which versions are to be recorded by him under section 161, Cr.P.C. in the same case. No separate FIR is to be recorded for any new version of the same incident brought to the notice of the investigating officer during the investigation of the case.

অর্থাৎ কোনো ঘটনা নিয়ে একটা এফআইআর হয়ে গেলে পরবর্তী এফআইআরগুলো আর নেয়া যাবে না, বরং পরবর্তী এফআইআরগুলোকে আদি এফআইআর তদন্তের সময় আমলে নিয়ে তদন্ত করে সবগুলো ঘটনা মূল্যায়ন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে। বিজ্ঞ আদালত সুঘ্রাণ বিবির রিট খারিজ করেন।

শাজনীন ধর্ষণ ও হত্যা মামলা নজিরটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সাবধান করে। যতোই আলোচিত মামলা হোক, যতোই নিষ্ঠুরতম অপরাধ সংঘটিত হোক- একই ঘটনা নিয়ে দুটি এফআইআর হলে এবং ২য় এফআইআর দিয়ে মামলা চালালে মামলার নেতিবাচক পরিণতি প্রায় অনিবার্য। আলোচ্য রায়ের ৭৭ প্যারায় বলা হয়েছে শাজনীনকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত। তবুও কমপ্লিট জাস্টিস এর যুক্তিতে মামলাটি পুনরায় বিচারে না পাঠিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। কমপ্লিট জাস্টিসের বিকল্প কি ছিলো প্রশ্নটা একটা হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন। অতীতে কি হতে পারতো তার কোনো সঠিক উত্তর নাই।

তবে বিচারপতি এ. টি. এম. ফজলে কবীরের “বিচারক জীবনের কিছু স্মৃতি কথা” বইয়ের ৭৬ পৃষ্ঠা হতে ৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত একটি ঘটনা স্মরণ করা যায়। ৮০’র দশকে চোরাচালান মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষে জারীকৃত আইন মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রের প্রেক্ষিতে ভুলবুঝাবুঝি জনিত অস্পষ্টতার সৃষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে “চোরাচালান রোধ সম্পর্কিত ট্রাইব্যুনাল” তৈরী হয়।

১৯৯০ সালে ঢাকার বিমানবন্দরে ১৫০টি স্বর্ণের বার সহ দুই বিদেশী ধরা পড়ে। অতিরিক্ত জেলা জজ হিসাবে কর্মরত অবস্থায় বিচার শেষে জনাব এ. টি. এম. ফজলে কবীর অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে অভিযুক্ত পক্ষে মূল যুক্তি ছিলো বাংলাদেশে কোনো আইনে “চোরাচালান রোধ সম্পর্কিত ট্রাইব্যুনাল” নাই এবং তথ্যটা সত্য।

হাইকোর্ট বিভাগ ন্যায় বিচারের স্বার্থে একই আদালতে মামলার নথিটি রিমান্ডে পাঠান। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতো বিচারপতি এ. টি. এম. ফজলে কবীর নথিতে ব্যবহৃত আদালতের ভুল নাম এবং ভুল নামের সিল পরিবর্তন করে নিজের প্রকৃত আদালতের নাম- স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল নম্বর ১০ উল্লেখ করে তা মহামান্য হাইকোর্টে পুনরায় পাঠিয়ে দেন। আপিল মামলা মেরিটে বিচার হয়।

একথা বলাই যায়, আইনের জন্য ন্যায় বিচার নাকি ন্যায় বিচারের জন্য আইন এই প্রশ্নটার সমাধান হয়নি, আজও।

সাব্বির এ মুকীম: আইনজীবী; কুমিল্লা জজ কোর্ট। ই-মেইল: samukim1@gmail.com