দুই আইনজীবীর রিমান্ড: অধস্তন আদালতের নথি তলব করলেন হাইকোর্ট
বাংলাদেশের উচ্চ আদালত

সুপ্রিম কোর্টে থেমীসের প্রকৃত ভাষ্কর্য স্থাপনের আবেদন

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রীক দেবী থেমীসের বিকৃত ভাষ্কর্য অপসারণ করে উক্ত গ্রীক দেবীর প্রকৃত ভাষ্কর্য স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে।

আজ ১৪ ই ডিসেম্বর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে আবেদনটি প্রেরণ করেন সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট মোঃ মাহমুদুল হাসান। এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করেন এডভোকেট মোঃ আমিনুর রশিদ (রাজু) ।

আবেদনে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সর্বদা সচেষ্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবী থেমীসের একটি ভাষ্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। গ্রীক দেবী থেমীস হলো প্রাচীন গ্রীক ধর্মের ন্যায়বিচারের দেবী। বর্তমান গ্রীসে এখনো মানুষ প্রাচীন ধর্ম চর্চা করে এবং এই ধর্মের নাম ‘হেলেনিজম (Hellenism)’। অপরদিকে গ্রীসের সরকারি নাম হলো ‘হেলেনিক রিপাবলিক (Hellenic Republic)’।

আবেদনে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবী থেমীসের ভাস্কর্য স্থাপনে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো উক্ত ভাষ্কর্যের সাথে গ্রীক দেবী থেমীসের কোন মিল নেই। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য এডভোকেট মোঃ মাহমুদুল হাসান গ্রীস সরকারের কাছে আবেদন করেন।

গ্রীস সরকারের কাছে আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবী থেমীসের একটি ভাষ্কর্য স্থাপন করা হয়েছে কিন্তু এই ভাষ্কর্যের সাথে গ্রীক দেবী থেমীসের কোন মিল নেই।

তিনি গ্রীস সরকারের কাছে আবেদনে আরো উল্লেখ করেন যে, তিনি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে গ্রীক দেবী থেমীসের প্রকৃত ভাষ্কর্য স্থাপনের জন্য আবেদন করতে চান, এজন্য গ্রীক দেবী থেমীসের প্রকৃত ভাষ্কর্যের ছবি প্রয়োজন।

পরবর্তীতে গ্রীস সরকার উক্ত আবেদনের গুরুত্ব অনুধাবন করে সাড়া দেন। ফলশ্রুতিতে গ্রীসের জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর (National Archaeological Museum), এর ডিপার্টমেন্ট অফ স্কাল্পচার কালেকশন (Department of Sculpture Collection) এর হেড ড: ডেসপিনা ইগনাটিয়াডো (Dr Despina Ignatiadou) ইমেইলে একটি চিঠিসহ গ্রীক দেবী থেমীসের প্রকৃত ভাষ্কর্যের ছবি প্রেরণ করেন।

চিঠিতে তিনি তাদের গ্রীক দেবী থেমীসের বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ সহ বলেন যে, এই গ্রীক দেবী থেমীসের মুর্তি খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ বছর আগের।

উপরোক্ত বিষয়গুলো বিস্তারিত বর্ণনাসহ এডভোকেট মোঃ মাহমুদুল হাসান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আবেদনে আরো উল্লেখ করেন যে, উক্ত গ্রীক দেবী থেমীস হলো প্রাচীন গ্রীক ধর্মের পবিত্র দেবী। এই প্রাচীন গ্রীক ধর্ম এখনো গ্রীসের একটি স্বীকৃত ধর্ম যার নাম ‘হেলেনিজম (Hellenism)’। এখন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে এই গ্রীক দেবীর বিকৃত ভাষ্কর্য স্থাপনের মাধ্যমে গ্রীকদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা হয়েছে এবং এই গ্রীক দেবীর অবমাননা করা হয়েছে ।

অপরদিকে গ্রীসের রাষ্ট্রীয় আইন ‘অন দ্যা প্রটেকশন অফ এনটিকস্ এন্ড কালচারাল হেরিটেজ ইন জেনারেল (On The Protection of Antiquities and Cultural Heritage in General)’ অনুযায়ী মুর্তি/ভাষ্কর্যের ক্ষতিসাধন, বিকৃত করা বেআইনি কাজ। এছাড়া আন্তর্জাতিক আইন ‘কনভেনশন ফর দ্যা প্রটেকশন অফ কালচারাল প্রোপার্টি (Convention for the Protection of Cultural Property)’ অনুযায়ী সাংস্কৃতিক সম্পত্তি সুরক্ষার জন্য উক্ত সাংস্কৃতিক সম্পত্তির যথাযথ নিরাপত্তা ও সন্মান প্রদর্শন করতে হবে।

সর্বোপরি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবী থেমীসের বিকৃত ভাষ্কর্য স্থাপনের মাধ্যমে গ্রীকদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত আনা হয়েছে। গ্রীক দেবীর অবমাননা করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রীসের রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের অবমাননা করা হয়েছে।

তাই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আবেদনে এডভোকেট মোঃ মাহমুদুল হাসান সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রীক দেবী থেমীসের বিকৃত ভাষ্কর্য অপসারণ করে উক্ত গ্রীক দেবীর প্রকৃত ভাষ্কর্য স্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন।