পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বালিশ ও আসবাবপত্র কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে গণপূর্ত বিভাগের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা পৃথক চার মামলায় জামিন দেননি হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে করা আবেদন শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. মোতাহার হোসেন সাজু।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা পৃথক চার মামলায় জামিন দেননি হাইকোর্ট। তবে তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছেন আদালত।
এর আগে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ভবনে অস্বাভাবিক মূল্যে আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়।
রূপপুর প্রকল্পের বালিশ কেলেঙ্কারি নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, প্রকল্পের রাশিয়ান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯৬৬টি ফ্ল্যাটের সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে বিভিন্ন আইটেমের ক্রয়মূল্য বাজার মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি ধার্য করা হয়।
এতে প্রতিটি বালিশের দাম ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং বালিশ ফ্ল্যাটে উঠানোর জন্য ৭৬০ টাকা ধরা হয়। এছাড়া বৈদ্যুতিক চুলা ৭ হাজার ৭৪৭ টাকায় কিনে নিচতলা হতে উপরে তোলার জন্য ৬ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয় হয়। ঘটনা জানাজানি হলে আবাসন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২১ মে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছিলেন, গ্রিনসিটি প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়টি কমিশন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আবাসন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুটি তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি অনিয়মের অভিযোগে গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্পের গণপূর্তের পাবনার প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে।
ওই বছরের ২২ মে প্রকৌশলী মাসুদুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সর্বশেষ তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম জিল্লুর রহমান, পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তাহাজ্জুদ হোসেন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আহম্মেদ সাজ্জাদ খান, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক, সহকারী প্রকৌশলী রুবেল হোসাইন, আমিনুল ইসলাম, রওশন আলী, উপসহকারী প্রকৌশলী ফজলে হক, সুমন কুমার নন্দী, রফিকুজ্জামান, জাহিদুল কবীর, শাহীন উদ্দিন, আবু সাঈদ ও শফিকুল ইসলাম।
এছাড়া গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শফিকুর রহমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানা যায়।
এরপরে এই মামলায় জামিন আবেদন করা হয়। এছাড়া আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা আরও পৃথক তিনটি মামলায় জামিন আবেদন করা হয়।