কক্সবাজারে যাঁরা জেলা জজের দায়িত্ব পালন করেছেন
বিচারক (ছবি - প্রতীকী)

পদোন্নতি হলেও পদায়ন হচ্ছে না ৩৮২ বিচারকের, বিরাজ করছে ক্ষোভ-হতাশা

আইন মন্ত্রণালয় হয়ে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট ২০১৯ সালে বিচারকদের পদোন্নতির অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর পার হয়ে গেছে দুই বছর। কিন্তু ৩৮২ বিচারকের এখনো পদায়ন হয়নি। বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা। দীর্ঘ সময় পদায়নবঞ্চিত এসব বিচারকের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা।

জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠালে ২০১৯ সালে ৭১৭ বিচারকের পদোন্নতিতে অনুমোদন দেন ফুলকোর্ট সভা। বিভিন্ন সময় এঁদের মধ্যে ৩৩৫ জনকে পদায়ন করা হয়। তাঁরা কাজ করছেন নতুন পদে। বেড়েছে তাঁদের সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু পদোন্নতির প্যানেলে নাম ওঠার পরও নতুন পদে যোগ দিতে পারেননি ৩৮২ বিচারক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিচারক ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম এর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একই সঙ্গে পদোন্নতির প্যানেল হলেও তাঁরা নতুন পদে যোগ দিতে পারেননি। অথচ এর মধ্যে প্রায় দুই বছর পার হয়ে গেল। বিচারকদের ক্ষেত্রে পদ খালি হওয়া সাপেক্ষে সময়ে সময়ে পদোন্নতির সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়।

বিচারকেরা বলছেন, প্রশাসন ক্যাডারে ঠিক উল্টো নিয়ম। পদ খালি না থাকলেও একই সঙ্গে প্যানেলের সবার জিও জারি হয়। কেউ পুরোনো পদে দায়িত্ব পালন করলেও তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বেড়ে যায়। কিন্তু বিচারকদের ক্ষেত্রে এটি হয় না, যা বৈষম্যমূলক। এ ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারে চাকরির মেয়াদের শেষ দিকে গিয়ে কেবল অবসর-পরবর্তী সুবিধা দেওয়ার জন্যও অনেকের পদোন্নতি দেওয়া হয়।

জানা গেছে, সব মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতির জন্য ডিপিসি (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) থাকে। ওই কমিটি পদোন্নতির প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এক দিনেই প্যানেলের সবার পদোন্নতির জিও জারি করা হয়। তবে বিচারকদের ক্ষেত্রে কমিটি প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় ওঠে। সভায় অনুমোদন দেওয়ার পর তা আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে ওই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত থাকে এবং পদ খালি হওয়ার পর সময়ে সময়ে জিও জারি করা হয়।

২০১৯ সালে সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা জজ পদে আইন মন্ত্রণালয়ের ২০৯ বিচারকের পদোন্নতির প্রস্তাব অনুমোদন করেন সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা। এর মধ্যে ১০৫ বিচারকের পদায়ন হলেও ১০৪ জনের এখনো হয়নি। একই বছরে যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে মন্ত্রণালয়ের ৩৪৭ জনের পদোন্নতির প্রস্তাব অনুমোদন করেন ফুলকোর্ট সভা। এর মধ্যে পদায়ন হয়েছে ১৪৩ বিচারকের। এখনো পদায়ন হয়নি ২০৪ জনের।

ওই বছরই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদে ১৬১ জনের পদোন্নতির অনুমোদন দেওয়া হয় ফুলকোর্ট সভায়। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় জেলা ও দায়রা জজ পদে ৮৭ বিচারকের পদায়ন হলেও এখনো ৭৪ জনের হয়নি।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা ২০০৭ অনুযায়ী সিনিয়র সহকারী জজ পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী জজদের এই পদে চার বছর দায়িত্ব পালনের শর্ত পূরণ করতে হয়। সিনিয়র সহকারী জজদের যুগ্ম জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর এবং অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছরের শর্ত পূরণ করতে হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, দুই বছরের শর্তের স্থলে অনেকের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও পদোন্নতি হয় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হন ৮৯ বিচারক। তাঁরা এখনো একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। পদোন্নতির প্যানেলে বেশির ভাগ বিচারকের নাম থাকলেও এখনো পদায়ন হয়নি।

তথ্য সহায়তা- আজকের পত্রিকা