ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস: সুন্দরগঞ্জের সেই ওসিকে বরিশালে বদলি
মো. তৌহিদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

হত্যা মামলায় ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস: ওসি প্রত্যাহার

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. তৌহিদুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাতে তাকে গাইবান্ধা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। গাইবান্ধার ব্যবসায়ী হাসান আলী হত্যা মামলার আসামির এক স্বজনের কাছে ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আজ বুধবার (১৬ মার্চ) গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তাকে ক্লোজ করা হয়েছে।

গত বছরের ১০ এপ্রিল গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানার বাসা থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাসুদসহ তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়। অপর দুইজন আসামি হচ্ছেন-রুমেল হক ও খলিলুর রহমান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের ওসি এবং বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. তৌহিদুজ্জামানের সঙ্গে মামলার আসামির এক স্বজনের ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হয়। মামলার অভিযোগপত্র থেকে এক আসামির নাম বাদ দেওয়া ও আইনের ধারা কমিয়ে দিতে টাকা লেনদেনের কথাবার্তা হয়। কথামত কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত প্রদানে ফোনালাপ হয়। পাঁচ দফায় প্রায় ১৭ মিনিটের ফোনালাপ হয়। এই ফোনালাপটি দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রকাশের পর জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তারপরেই ওসি মো. তৌহিদুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়।

গত বছরের ১০ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার (৪২) বাসা থেকে শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীর (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাসুদের বাসা গাইবান্ধা শহরের নারায়নপুর এলাকায়। মাসুদ রানা একজন দাদন ব্যবসায়ী। প্রায় দুইবছর আগে মাসুদ রানার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেন ব্যবসায়ী হাসান আলী। এই টাকা সুদ-আসলে ১৯ লাখে দাঁড়ায়। সুদের টাকা দিতে না পারায় গা ঢাকা দেয় হাসান আলী। খোঁজ পেয়ে গতবছরের ৬ মার্চ লালমনিরহাট থেকে হাসানকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে এসে নিজ বাড়িতে রাখেন মাসুদ। এরপর এক মাসের বেশি সময় হাসানকে নিজ বাসায় আটকে রেখেছিলেন মাসুদ।

পরে এ নিয়ে নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম সদর থানায় মাসুদ রানাসহ তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপর দুইজন হচ্ছেন শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী রুমেল হক ও খলিলুর রহমান।

এই মামলার প্রথমে তদন্ত করেন গাইবান্ধা সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) সেরাজুল ইসলাম। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি ও বর্তমানে সুন্দরগঞ্জের কঞ্চিবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মানষ রঞ্জন দাস। সর্বশেষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান তৎকালীন গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের ওসি ও বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. তৌহিদুজ্জামান।

এদিকে ঘটনার বিচারের দাবিতে ব্যবসায়ী ‘হাসান হত্যার প্রতিবাদ মঞ্চ’ গড়ে উঠে। বিচারের দাবিতে দুই মাসব্যাপী আন্দোলন চলে। আন্দোলনের মুখে সদর থানার তৎকালীন ওসি মাহফুজার রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবর রহমান এবং উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। ঘটনার দিনই মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন।

ঘটনার নয় মাস ছয়দিন পর মাসুদ ও খলিলুরসহ দুইজনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৮ জানুয়ারি তিনি সুন্দরগঞ্জের ওসি হিসেবে বদলি হন। গাইবান্ধা কোর্ট পুলিশ ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অভিযোগপত্রটি সংশোধনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ফেরত পাঠায়। গত ৭ মার্চ মাসুদ রানাসহ তিন আসামিকেই অভিযুক্ত করে আদালতে সংশোধিত অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।