র‍্যাব পরিচয়ে অপহরণ, অস্ত্র-মাদকসহ সংঘবদ্ধ চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার

র‍্যাব পরিচয়ে অপহরণ, অস্ত্র-মাদকসহ সংঘবদ্ধ চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার

র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণের ১২ ঘন্টার মধ্যে অস্ত্র-মাদকসহ সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত ভিকটিমকে।

এ সংক্রান্ত এক অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস দল রোববার (১২ জুন) সকাল সাড়ে ৬টায় রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সাগুপ্তা হাউজিং লিঃ নিঝুম সমিতির প্লট এর কাশবনে এবং মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে।

এসময় অপহৃত ভুক্তভোগীসহ ১টি পিস্তল, ১টি গুলি, ৯৮ পিস ইয়াবা, র‍্যাব জ্যাকেট, সেনা আইডি কার্ড, ভুয়া র‍্যাব আইডি কার্ড, র‍্যাব লোগো সম্বলিত স্টিকার, র‍্যাব মনোগ্রামযুক্ত মাক্স উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোঃ আশিকুর রহমান (২৯), শাহ মোঃ দোজাহান (২২), মোঃ মিঠুন (১৮), মোঃ হাবিবুর রহমান (২৭) ও মোঃ শরিফুল ইসলাম (৩২)।

পরে র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত শনিবার (১১ জুন) অভিযোগকারী মোঃ বিল্লাল হোসেন (৫০) রাত ০২.৩০ ঘটিকায় র‌্যাব-৪ এর বরাবর হাজির হয়ে লিখিতভাবে একটি অভিযোগ দায়ের করেন যে, দ্বাদশ শ্রেনীতে অধ্যয়নরত তার ছেলে মোঃ রানা আহমেদ (১৯) কে র‌্যাব পরিচয়ে কিছু লোক একটি সাদা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা ভিকটিমের পিতার নিকট ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর র‍্যাব অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের আটক করে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার সময় ভিকটিম মোঃ রানা আহমেদ (১৯) মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন সাফুল্লী স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা শেষে বাড়ী ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন ইনাম ক্লাব এর সামনে পৌঁছামাত্র র‌্যাবের জ্যাকেট ও র‌্যাবের লোগো সম্বলিত মাস্ক পরিহিত অবস্থায় কতিপয় ব্যক্তি র‌্যাব পরিচয় দিয়ে ভিকটিম মোঃ রানা আহমেদ (১৯) কে পথরোধ করে মাথায় পিস্তল ঠেকায় এবং পকেটে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে তাকে মাদক পাচারকারি হিসেবে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে একই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে অপহরণকারী দলের এক সদস্য ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তার পিতার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। টাকা না পেলে ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিক্রয় করে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয়।

এরপর ভিকটিমের বাবা মুক্তিপনের ১৫ লক্ষ টাকা কমানোর জন্য বার বার অনুরোধ করলে শেষ পর্যন্ত ৫ লক্ষ টাকায় রাজি হয়। মুক্তিপণের দাবিকৃত ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীর বাবাকে মিরপুর-১ গোল চত্তর এলাকায় আসতে বলে। সেসময় র‍্যাবের আভিযানিক দলের পরিকল্পনায় ও তত্ত্বাবধানে ভিকটিমের বাবা মুক্তিপণের টাকাসহ মিরপুর-১ পৌছালে অপহরণকারীরা স্থান পরিবর্তন করে মিরপুর ডিওএইচএস এর ০১ নং গেইটে আসতে বলে।

সেখানে অপহরকারীর এক সদস্য উপস্থিত হলে র‌্যাবের আভিযানিক দল কর্তৃক গ্রেফতার করা হয় এবং উক্ত অপহরণকারীকে জিজ্ঞাসাবাদে পল্লবী থানাধীন মিরপুর সাগুপ্তা হাউজিং লিঃ সমিতির প্লট হতে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারপূর্বক অপহরণকারী চক্রের আরো ০২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর আটককৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে চলমান অভিযানে অপহরণকারী দলের মূল সহযোগী মোঃ হাবিবুর রহমান এবং অপর সহযোগী মোঃ শরিফুল ইসলামকে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামীরা একে অপরের পূর্ব পরিচিত। ভিকটিমের বাবা এলাকার চাল ব্যবসায়ী। ভিকটিমের পরিবার তুলনামূলকভাবে অর্থশালী হওয়ায় প্রতিবেশী মোঃ শরিফুল ইসলাম এবং হাবিবুর রহমানের পরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাকি অপহরণকারীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

অপহরণকারীরা অপহরণের পর ভিকটিমের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালায়, অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার এবং অপহরণকারী গ্রেফতারের অভিযান চলাকালীন র‌্যাবের আভিযানিক দলের ৫ সদস্য আহত হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।