অ্যাডভোকেট দীপজয় বড়ুয়া
অ্যাডভোকেট দীপজয় বড়ুয়া

প্রসঙ্গ দালিলিক সাক্ষ্য: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও একটি পর্যালোচনা

দীপজয় বড়ুয়া : দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৯ ধারায় ‘দলিল’ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ‘দলিল’ কথাটি এমন বস্তুকে বুঝায়, যে বস্তুর উপর অক্ষর, সংখ্যা বা চিহ্ন দ্বারা কিংবা অনুরূপ একাধিক উপায়ে প্রকাশিত বা উল্লেখিত বিষয়টির সাক্ষ্য বা প্রমাণ হিসাবে উক্ত বস্তুটি প্রস্তুত করা হয় অথবা প্রমাণ হিসাবে উক্ত বস্তুটি ব্যবহার হতে পারে।

সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ৩ নং ধারা অনুযায়ী দলিল বলতে বুঝায় কোন পদার্থের উপর কোন অক্ষর, সংখ্যা বা চিহ্নের সাহায্যে বর্ণিত কোন ব্যবহার হতে পারে এমন বিষয়কে দলিল বলা হয়।

একই আইনের ৬১ ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রাথমিক বা মাধ্যমিক সাক্ষ্য দ্বারা দলিল প্রমাণ করা যায়। দলিল সেই বস্তুকে বলে, যা কোন পদার্থের উপর প্রকাশিত বা বর্ধিত হয়। দলিলী সাক্ষ্য বলতে আদালতের পরিদর্শকের জন্য দাখিলকৃত যাবতীয় দলিলকেই বুঝায়।

[20 DLR (SC) 205] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “দলিলী সাক্ষ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, কোন দলিল যখন আদালতের সাক্ষ্য হিসাবে প্রদান করা হয় এবং তা প্রদর্শিত বস্তু হিসাবে চিহ্নত হয়, তখন তাকে দলিলী সাক্ষ্য বলে।”

[43 DLR 183 Budhiswar Biswas Vs. Akbar Ali Sheikh] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “যখন চুক্তি মঞ্জুরী বা অন্য প্রকার সম্পত্তি বিলি ব্যবস্থার শর্তাবলী দলিল আকারে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে তখন ঐ দলিলটি বা যেক্ষেত্রে এর মাধ্যমিক সাক্ষ্য গ্রহণীয় করা হয়েছে সেক্ষেত্রে মাধ্যমিক সাক্ষ্য ছাড়া অন্য কোন মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণীয় হবে না। দলিলের বিষয়বস্তু উক্ত দলিলটি দ্বারাই প্রমাণ করতে হবে। ঐ দলিলটি এর বিষয়বস্তুর প্রাথমিক এবং উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য।”

[36 DLR 235 Gouranga Chandra Banik Vs. Sanjib Kumar Banik] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে লিখিত দলিলের কথা উভয়পক্ষ স্বীকার করায় উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য হিসাবে উক্ত দলিল উপস্থাপন করার দায়িত্ব বাদীর উপর ন্যস্ত। উক্ত দলিলটি ব্যতিরেকে মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা দলিলে যা ব্যক্ত হয়েছিল তা প্রমাণ করা যাবে না।”

[30 DLR 311 Ananda Chandra Vs. Abdur Rahman] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “অপরিহার্য নীতি এই যে, কোন আদান-প্রদান, বিক্রয় বা বন্ধক তা প্রমাণের জন্য দলিলী সাক্ষ্যের বিরোধিতা করে কোন মৌখিক সাক্ষ্য প্রদত্ত হলে আদালত দলিলের লিখিত সাক্ষ্য বাদ দিয়ে মৌখিক সাক্ষ্যকে ভিত্তি করতে পারবে না।”

সাক্ষ্য আইনের ৬১ ধারা অনুযায়ী- দলিলভুক্ত সাক্ষ্য দুই ভাবে প্রমাণ করা যায়। যথা: (১) প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা, (২) মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য দ্বারা।

(১) প্রাথমিক সাক্ষ্য (Primary Evidence) দ্বারা দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণ 

সাক্ষ্য আইনের ৬২ ধারা অনুযায়ী- যে দলিল প্রমাণের জন্য আদালতে দাখিল করতে হয় তাকে প্রাথমিক সাক্ষ্য বা Primary Evidence বলে। দলিল যদি বিভিন্ন প্রতিলিপিতে বিভক্ত হয় তাহলে তার প্রত্যেক ভাগই প্রাথমিক সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হয়। অর্থাৎ একটি দলিল যদি অনেকগুলি ফটোকপি হয় তাহলে প্রত্যেক কপি একটি অন্যটির প্রাথমিক সাক্ষ্য হিসেবে কাজ করে। তবে ফটোকপি মূল দলিলের প্রমাণ নয়। আবার একটি খবরের কাগজ অন্য একটি খবরের কাগজের নকল নয়। কাজেই তাদের প্রত্যেকটিই মূল দলিল।

(২) মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য (Secondary Evidence) দ্বারা দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণ

সাক্ষ্য আইনের ৬৩ ধারা অনুযায়ী নিম্নের বিষয়গুলি মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য :

(ক) সত্যায়িত জাবেদা নকল, (খ) যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মূল দলিলের নকল বা ফটোকপি, (গ) মূল দলিল থেকে প্রস্তুত করা নকল, (ঘ) যে পক্ষ দলিল সম্পাদন করেনি তার বিরুদ্ধে সম্পাদিত দলিলের প্রতিলিপি, (ঙ) কোন দলিলের প্রত্যক্ষদর্শীর মৌখিক সাক্ষ্য।

সাক্ষ্য আইনের ৬৫ ধারা অনুযায়ী নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য দ্বারা দলিলের বিষয় বস্তু প্রমাণ করা যেতে পারে:

(i) দলিলটি অভিযুক্ত ব্যক্তির দখলে থাকলে : যার বিরুদ্ধে মূল দলিলটি প্রমাণ করতে হবে দলিলটি যদি তার নিকট থাকে তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।

(ii) দ্বলিলটি আদালতের এখতিয়ারের বাইরে থাকলে : মূল দলিলটি এমন ব্যক্তির নিকট থাকে যে, আদালতের এখতিয়ারের বাইরে অথবা আদালতের নোটিশ পাওয়া সত্ত্বেও দালিলটি হাজীর করা হচ্ছে না তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।

(iii) দলিলটি হারিয়ে গেলে : মূল দলিলটি যদি হারিয়ে যায় তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।

(iv) দলিলটি নষ্ট হয়ে গেলে : মূল দলিলটি যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।

(v) অভিযুক্ত ব্যক্তি দলিলের অস্তিত্ব স্বীকার করলে : যার বিরুদ্ধে দলিলটি প্রমাণ করতে হবে সেই ব্যক্তি অথবা তার প্রতিনিধি যদি মূল দলিলের অস্তিত্ব স্বীকার করেন তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।

(vi) দলিলটি স্থানান্তরের অযোগ্য হলে : মূল দলিলটি যদি এমন হয় যে, তা সহজে স্থানান্তর করা যায় না তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।

(vii) সরকারি দলিল হলে : মূল দলিলটি সাক্ষ্য আইনের ৭৪ ধারা অনুযায়ী সরকারি দলিল হলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য গ্রদান করা যায়।

(viii) মূল দলিলে অনেক দলিলের বিবরণ থাকলে : মুল দলিলে যদি অনেক দলিলের বিবরণ থাকে এবং তা যদি আদালতের পক্ষে প্রমাণ করা সুবিধাজনক না হয় তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।

(ix) নকল ব্যবহারের বিধান থাকলে: মূল দলিলটি যদি এমন হয় যে, তার নকল ব্যবহারের বিধান আছে তাহলে, মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।

সাক্ষীদেরকে দলিল দ্বারা অগ্রাহ্য করা যায় কিন্তু দলিলসমূহকে সাক্ষী দ্বারা অগ্রাহ্য করা যায় না-এর ব্যতিক্রম। সাক্ষীদের দলিলসমূহ দ্বারা অগ্রাহ্য করা যায়, দলিলসমূহকে সাক্ষীদের দ্বারা নয়

১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৯১ ও ৯২ ধারায় এ সংক্রান্ত বিধান করা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ৯১ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন চুক্তি মঞ্জরি বা সম্পত্তি আদান-প্রদানের ব্যাপারে পক্ষগণের সম্মতিক্রমে বা আইনের প্রয়োজনে লিখিত দলিল করা হয়ে থাকলেও ঐগুলি প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দলিল ছাড়া অন্য কোন সাক্ষীদের মৌখিক সাক্ষ্য দেয়া যাবে না।

[5 DLR 558] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “কোন চুক্তির বা সম্পত্তি বিলি-ব্যবস্থার লিখিত দলিলখানি ব্যতীত তা প্রমাণ করার জন্য অন্য কোন সাক্ষ্য গ্রহণীয় নয়।”

সাক্ষ্য আইনের ৯২ ধারায় ব্যক্ত করা হয়েছে যে, কোন চুক্তি, মঞ্জুরি বা সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা প্রভৃতি দলিলে লিখিত হয়ে থাকলে উক্ত দলিলে লিখিত শর্তের পরিবর্তন, সংযোজন বা বর্জনের ব্যাপারে পক্ষগণের মধ্যে কোন মৌখিক চুক্তি বা সাক্ষীদের মৌখিক সাক্ষ্য আদালতে অগ্রাহ্য।

উদাহরণ: ‘সুমিত ১৮৭৩ সালের ১লা মার্চ ইরফানকে ১০০০ (এক হাজার) টাকা দেয়ার জন্য একটি লিখিত চুক্তিতে বিনা শর্তে আবদ্ধ হলো। একই সময়ে যদি এরূপ একটি মৌখিক চুক্তি হয় যে, ৩১শে মার্চের পূর্বে উক্ত টাকা দেয়া হবে না, তবে তা প্রমাণ করা যাবে না।’

দলিলভুক্ত সাক্ষ্য দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য বর্জনসংক্রান্ত বিধানসমূহের ব্যতিক্রম

১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৯১ ও ৯২ ধারায় করা যায় -এর ব্যতিক্রমগুলি দলিলভুক্ত সাক্ষ্য দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য বর্জনসংক্রান্ত বিধানসমূহের ব্যতিক্রমসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :

(১) সরকারি কর্মচারীর নিয়োগপত্র : সরকারি কর্মচারির নিয়োগপত্র যদি লিখিত হওয়া আবশ্যক হয় এবং সংশ্লিষ্ট পদে উক্ত ব্যক্তি কাজ করে থাকেন তাহলে তার লিখিত নিয়োগপত্র প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। (ধারা-৯১)

(২) উইলের প্রবেট : উইলের প্রবেট বা উইলের সত্যতা প্রমাণীকরণ পত্র স্বীকৃত হলে উক্ত উইল প্রবেট বা উইলের সত্যতা প্রমাণীকরণ পত্র দ্বারা প্রমাণ করা যাবে। (ধারা-৯১)

(৩) পৃথক পৃথক মৌখিক চুক্তি : কোন বিষয়ে যদি পৃথক পৃথক মৌখিক চুক্তি থাকে এবং দলিলটি যদি উক্ত বিষয়ে নীরব থাকে তাহলে সেই ধরনের চুক্তি প্রমাণ করা যায়। (ধারা-৯২)

(৪) পূর্ব শৃর্তযুক্ত মৌখিক চুক্তি : কোন চুক্তির বিষয়ে পূর্ব শর্তযুক্ত মৌখিক চুক্তি থাকলে তার অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়। (ধারা-৯২)

(৫) পরবর্তী মৌখিক চুক্তি : কোন চুক্তি সংশোধন করার উদ্দেশ্যে পরবর্তীকালে সুস্পষ্ট মৌখিক চুক্তি করা হলে তা প্রমাণ করা যায়। (ধারা-৯২)

(৬) অকার্যকর দলিল : প্রতারণার মাধ্যমে বা ভয়-ভীতি দেখিয়ে বা কোন পক্ষের অযোগ্যতার, অভাবে বা অন্য কোন ভুলের কারণে দলিলটি অকার্যকর হয়ে পড়লে সেই বিষয়ে প্রমাণ করা যায়। (ধারা-৯২)

(৭) দলিলের ভাষা : কোন দলিলের ভাষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত তার বর্ণনা প্রসঙ্গে যা প্রয়োজন তা প্রমাণ করা যেতে পারে। (ধারা-৯২)

(৮) প্রথা বা রীতি-নীতি : কোন প্রথা বা রীতি-নীতি যদি কোন চুক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত হয় তাহলে সেই প্রথা বা রীতি-নীতি উক্ত চুক্তিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও তা প্রমাণ করা যায়। (ধারা-৯২)

যখন আদালত কতকগুলি দলিল সম্পর্কে বিশেষ ঘটনা অবশ্যই অনুমান করবেন

যখন আদালত কতকগুলি দলিল সম্পর্কে বিশেষ ঘটনা অবশ্যই অনুমান করবে তা সাক্ষ্য আইনের ৭৯ থেকে ৮৫ এবং ৮৯ ও ৯০ ধারায় বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :

(১) সত্যায়িত নকলের শুদ্ধতা সম্পর্কে অনুমান : আইনগতভাবে সত্যায়িত করা হলে উক্ত কপিকে মূল দলিলের অবিকল নকল হিসেবে আদালত অনুমান করবে। [ধারা-৭৯]

(২) জবানবন্দী বা অপরাধ স্বীকার সংক্রান্ত দলিল সম্পর্কে অনুমান : কোন স্বাক্ষীর জবানবন্দী অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ স্বীকার করলে আদালত তা অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮০]

(৩) ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে গৃহীত দলিল সম্পর্কে অনুমান : ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে যে সকল দলিল সাক্ষ্যরূপে ব্যবহৃত হয় তা আমাদের দেশেও সাক্ষ্যরূপে ব্যবহৃত হবে। এই ধরনের দলিলের সীল, স্বাক্ষর, স্ট্যাম্প ইত্যাদিকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮২]

(৪) সরকারের কর্তৃত্বাধীনে প্রণীত মানচিত্র বা নকশা সম্পর্কে অনুমান : যে সকল মানচিত্র বা নকশা সরকারের কতৃত্বাধীনে তৈরি হয় তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮৩]

(৫) পুস্তক বা গেজেট সম্পর্কে অনুমান : যে সকল পুস্তক বা গেজেট সরকারের কতৃত্বাধীনে প্রকাশিত হয় তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮৪]

(৬) আদালতের রায়ের বিবরণ সম্পর্কে অনুমান : আদালতের রায়ের বিবরণ যে সকল পুস্তকে প্রকাশিত হয় তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮৪]

(৭) Power of Attorney (মোক্তারনামা) সম্পর্কে অনুমান : কোন নোটারী পাবলিক, আদালত, জজ, ম্যাজিষ্ট্রেট, সরকারের নিযুক্ত প্রতিনিধি ইত্যাদির সামনে Power of Attorney বা মোক্তারনামা করা হলে তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮৫]

(৮) দাখিল করা হয়নি এমন দলিল সম্পর্কে অনুমান : যে দলিল আদালতে উপস্থাপনের জন্য নোটিশ করা হয়েছে কিন্তু উপস্থাপন করা হয়নি, এমন দলিল সম্পাদিত হয়েছে বলে আদালত অনুমান করবেন। [ধারা-৮৯]

(৯) ত্রিশ বছরের পুরাতন দলিল সম্পর্কে অনুমান : ত্রিশ বছরের পুরাতন দলিল যার হেফাজতে থাকার কথা তিনি নিজে অথবা তার প্রতিনিধি আদালতে দাখিল করলে তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৯০]

মন্তব্য

আদালতে দলিলি সাক্ষ্য দাখিলের পদ্ধতি সম্পর্কে ফৌজদারী ও দেওয়ানী কার্যবিধিতে বিধান রয়েছে। সঙ্গত কারণেই আদালত মৌখিক সাক্ষ্যের তুলনায় দলিলি সাক্ষ্যে অধিক গুরুত্ব মূল্যায়ন করেন। কারণ আদালতে এসে মোকদ্দমার ঘটনা সম্পর্কে মুখে কিছু বলে দিলেই মৌখিক সাক্ষ্য হয়ে গেল। কিন্তু লিখিত দলিল এত সহজে তৈরী করা যায় না। তাই দলিলি সাক্ষ্যকে মৌখিক সাক্ষ্য হতে অনেক অনেক গুণ বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। দলিল হয় প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রমাণ করতে হবে, না হয় মাধ্যমিক সাক্ষ্য দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে, দলিল প্রমাণের আর তৃতীয় কোন রাস্তা নাই।

লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।

তথ্য কণিকা: আইন শব্দসমূহ-এডভোকেট মোঃ নাসির উদ্দিন, সাক্ষ্য আইনের ভাষ্য- গাজী মোঃ শামসুর রহমান, দন্ডবিধি- বাসুদেব গাংগুলি, উকিপিডিয়া, সাক্ষ্য আইন- বাসুদেব গাংগুলি, সাক্ষ্য আইন- মোঃ জহিরুল হক।