কক্সবাজারের ডিসিকে হাইকোর্টে তলব
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

বিচারকের সাথে দুর্ব্যবহার, খুলনা বারের সভাপতিসহ ৩ আইনজীবীকে তলব

খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত এক অভিযোগ শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

অপর দুই আইনজীবী হলেন- অ্যাডভোকেট শেখ নাজমুল হোসেন ও অ্যাডভোকেট শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু।

একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী ২২ নভেম্বর তাদের হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠির একাংশে বলা হয়, গত ২ সেপ্টেম্বর একটি মোকদ্দমায় আইনজীবী পিযুষ কান্তি দত্ত জেরা করছিলেন। সে সময় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু, শেখ নাজমুল হোসেন, জেসমিন পারভিন, এম এম সাজ্জাদ আলী, এস এম তারিক মাহমুদ তারা (সাধারণ সম্পাদক), সুস্মিতা, সাদিক সাদ, মিল্টন বাগচী, রাজুসহ একাধিক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে গুঞ্জন করতে থাকেন।

তখন বিচারক বলেন, ‘আপনারা বসেন’। কিন্তু তারা তার কথায় কর্নপাত না করে তাদের মতো গুঞ্জন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম কৈফিয়ত তলবের সুরে বলেন, ‘আমরা একটা মোকদ্দমায় উভয়পক্ষ সময়ের দরখাস্ত করেছিলাম, আপনি সেই দরখাস্ত না-মঞ্জুর করেছেন। এরপর জিপি সাহেব হাতে লেখা দরখাস্ত দিয়েছেন। তারপর সাক্ষী হয়েছে। পরে আমরা সময়ের দরখাস্ত দিলে নেওয়া হয়নি। কেন নেওয়া হয়নি এবং সময়ের দরখাস্ত কেন না-মঞ্জুর করলেন, আমাকে বলতে হবে।

তখন বিচারক বলেন, “সভাপতি সাহেব আপনি এভাবে আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন?” উনি বলেন, “কিভাবে পারি। কোনভাবে জানব, বলেন।” বিচারক বলেন, “আপনি আমার কাছে সময়ের আবেদন করছেন। আমি না-মঞ্জুর করছি। আদেশে কারণ দেখে নিবেন। কিন্তু আপনি আমার কাছে এখন কৈফিয়ত তলব করলে তো হবে না।”

তখন তিনি (উক্ত আইনজীবী) বলেন, “কৈফিয়ত চাচ্ছি তো। কারণ আপনি যখন টাকা নিয়ে, ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে সিদ্ধান্ত দেন, সেটার তো জবাব আমরা চাই না।” তিনি আবার বলেন, “আপনি টাকা নিয়ে, ঘুষ নিয়ে বে-আইনীভাবে কাজ করে…, তিনি (সংশ্লিষ্ট বিচারক) বলেন, “না না, এভাবে বলতে পারেন না।” উক্ত আইনজীবী ধমক দিয়ে বলেন, “দাঁড়ান আপনি।” তখন তার সাথে থাকা আইনজীবীগণ ধমকা-ধমকি করেন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, “আপনাকে দরখাস্ত নেবেন কিনা মানে কি? এখানে রাষ্ট্রপক্ষ বলতেছে, আমরা বলতেছি, আপনি নেবেন না কেন।” বিচারক বলেন, “দরখাস্ত তো নেওয়া হয়েছে। দরখাস্ত শুনানী করে না-মঞ্জুর হয়েছে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, “কেন, আপনি কি মনে করেন, আপনি এই খুলনা অঞ্চলের শাসক হয়েছেন। আপনার ইচ্ছামত চলবে কোর্ট, তাই নাকি। আপনি মনে করেন নাকি। বিচারক বলেন, “না না, কোর্ট আইনানুযায়ী চলবে।”

তিনি বলেন, “আপনি কোর্ট আইনানুযায়ী চালান না আপনি। আপনি অসৎ মানুষ, ঘুষখোর মানুষ, দুর্নীতিবাজ মানুষ, আপনি আমাদের উপর ৪০/৫০ হাজার মামলা দিয়ে খুলনা অঞ্চলের মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে রাখছেন। আইনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, “আপনি কত শক্তিশালী, আমরা দেখতে চাই।

অভিযোগ পাওয়ার পর গত ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসে।