বিচ্ছেদ, যৌতুক মামলা, অতঃপর বিচারকের মধ্যস্থতায় পুনরায় বিয়ে
আদালত প্রাঙ্গণে সোমবার রাতে বিয়ে সম্পন্ন হয়

বিচ্ছেদ, যৌতুক মামলা, অতঃপর বিচারকের মধ্যস্থতায় পুনরায় বিয়ে

নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার জেরে বিবাহবিচ্ছেদ। অতঃপর দুই পরিবারের বিরোধের জেরে হয় যৌতুকের মামলা। শেষমেশ বিচারকের মধ্যস্থতায় পুনরায় বিয়ে করে সংসারে ফিরলেন এক দম্পতি। গত সোমবার (১ নভেম্বর) রাতে মাদারীপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে যৌতুক মামলার বাদী-বিবাদী সাবেক স্বামী-স্ত্রীর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

মাদারীপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ এ ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছেন। বিয়ের আয়োজনে অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপারসহ (এসপি) সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার গৈদী এলাকার মো. মিলন সরদারের (২৭) সঙ্গে ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল ঘটেকচর এলাকার সুমি আক্তারের (২৪) বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর এক ছেলেসন্তানের মা-বাবা হন তাঁরা।

এক বছর আগে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া হলে তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদ করেন। এরপর যৌতুকের অভিযোগে মিলন সরদারের বিরুদ্ধে মাদারীপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন সুমি আক্তার।

আদালত সূত্র জানায়, মামলার বিচারকাজ করার সময় ছেলেকে নিয়ে আদালতে মামলার সাক্ষী দিতে যান সুমি। এ সময় বাবাকে দেখে এজলাসে ছোটাছুটি করতে থাকে শিশুটি। বিষয়টি বিচারকের নজর এড়ায়নি।

এদিকে পুলিশ সদস্যরা শিশুটিকে বের করে দিচ্ছিল। বিচারক বললেন, শিশুটি ওর মত করে থাকুক এবং জানতে চান শিশুটি কার? তখন জানতে পারলেন শিশুটি চলমান মামলার বাদী ও আসামির ছেলে।

তখন বিষয়টি বিচারকের মানবিক দরজায় কড়া নাড়ে। মানবিক দিক বিবেচনা করে বিচারক বাদীকে জিজ্ঞাস করেন, তিনি বর্তমান অবস্থায় সংসার করতে রাজি আছেন কিনা। বাদী সম্মতি জানান। পাশাপাশি আসামিও সংসারে সম্মতি জানান। উভয় পরিবারের লোকজনও তাদের সংসারে রাজি হন।

এরপর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ বিষয়টি আপসে মীমাংসা করতে মধ্যস্থতার সিদ্ধান্ত নেন। দুই পরিবারের সদস্যদের ডেকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে বলা হয়। যেহেতু তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল, আদালত তাঁদের আবার বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করতে বলেন।

এরপর আদালত প্রাঙ্গণে সোমবার রাতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে অনুষ্ঠিত এ বিয়ের আয়োজনে অতিথি হিসেবে ছিলেন মাদারীপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিকুল ইসলাম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ, জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম, পাবলিক প্রসিকিউটর মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং সহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, জ্যৈষ্ঠ আইনজীবী যতীন সরকার এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকেই।

বিয়ের অনুষ্ঠানে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. এমদাদুল হক ও বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আসিফ শাহারিয়ার উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, বিচ্ছেদের পর দুটি পরিবারের মধ্যে বিরোধ বাড়তে থাকে। সেখান থেকে তাঁরা যে আবার একত্র হলেন, সেটা দৃষ্টান্ত।