আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনজীবীকে মারধরের অভিযোগ তদন্তে ৩ বিচারকের কমিটি
আদালত ভবন, চট্টগ্রাম

আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনজীবীকে মারধরের অভিযোগ তদন্তে ৩ বিচারকের কমিটি

চট্টগ্রামে টাকা ছাড়া নথি দেখতে চাওয়ায় আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীকে মারধরের অভিযোগ তদন্তে তিন বিচারকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বেঞ্চ সহকারী চারজনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ রোববার (৬ নভেম্বর) সিনিয়র জেলা জজ আজিজ আহমেদ ভূঞা এ কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আ.স.ম শহীদুল্লাহ কায়সারকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আর সদস্য হিসেবে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান ও সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ কফিল উদ্দিনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

এই কমিটিকে ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস এবং ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয়সহ সার্বিক বিষয়ে ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

এর আগে টাকা ছাড়া নথি দেখতে চাওয়ায় আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীকে মারধরের অভিযোগ উঠে। গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের এজলাসে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আজ রোববার (৬ নভেম্বর) সংশ্লিষ্ট আদালতের এজলাসে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। পরে ওই আদালতের পেশকার সহ সকল স্টাফকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে আদালত অঙ্গণের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ভুক্তভোগী আইনজীবীর নাম মনজুর আলম। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন- সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. সাইফুদ্দীন পারভেজ এবং আদালত কর্মচারী মো. সুমন, মো. আবদুর রহিম ও একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি।

এর আগে রোববার সকালে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আলম। জেলা আইনজীবী সমিতিতে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর আইনজীবী মনজুর তাঁর সিনিয়য়ের নির্দেশে চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে বিচারাধীন একটি মামলার আদেশ সংক্রান্ত নথির খোঁজ করতে যান।

বেঞ্চ সহকারীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে গড়িমসি করেন এবং টাকা নিয়ে আসতে বলেন। পরবর্তীতে টাকা ছাড়া নথি দেখতে গেলে ওই আদালতের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা আইনজীবীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে এবং আইনজীবীদের নিয়ে বিভিন্ন কটূক্তিমূলক কথা বলে। এতে আইনজীবী মনজুর প্রতিবাদ করলে উভয় পক্ষ কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে পেশকার- পিয়ন রহিম, সুমন মিলে আইনজীবী উপর হামলা করলে তিনি আহত হয়।

এদিকে এ ঘটনা চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পইজে পোস্ট করলে সাধারণ আইনজীবীরা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। এরপর শুক্র ও শনিবার আদালত বন্ধ থাকায় আজ ৬ নভেম্বর (রোববার) সকাল ১০টায় বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘটনার প্রতিবাদে প্রথম যুগ্ম-জেলা জজ আদালতের সামনে অবস্থান নেন এবং আদালতের এজলাসে তালা ঝুলিয়ে দেন।

খবর পেয়ে ছুটে আসেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ হাশেম, সাধারণ সম্পাদক এ এইচএম জিয়া উদ্দীন, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীসহ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ। উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঞার নজরে আনেন তারা।

চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ বিষয়টি আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক পেশকার (বেঞ্চ সহকারী) সাইফুদ্দিন পারভেজসহ ওই আদালতে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রত্যাহার এবং বিভাগীয় মামলার ঘোষণা দিলে জেলা আইনজীবী সমিতির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।