বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০০১ একটি সাধারণ আলোচনা
শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান

বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০০১ একটি সাধারণ আলোচনা

শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান :  ২০২২ সালের ১১ই আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নতুন দপ্তর বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। নতুন এই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’। এটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১৮তম প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, বাংলাদেশের শিল্পীদের কল্যাণে ২০০১ সালে করা হয় ‘বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট অ্যাক্ট, ২০০১ শীর্ষক এক সময়োপযোগী আইন। ২০২২ সালে দীর্ঘ একুশ বছর পর ২০০১ সালের ৩২নং আইনে চালু হলো এই ট্রাস্টের অস্থায়ী দপ্তর। দেশের শিল্পীদের সুরক্ষায় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করবে এই ট্রাস্ট। এই প্রসঙ্গে ‘বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০০১’ সম্বন্ধে সাধারণ আলোচনা উপস্থাপন করা হলো আলোচ্য আইনের উদ্দেশ্য।

বর্তমানকালে সময়োপযোগী এই আইনটির প্রথমেই এ আইনের প্রণয়নের উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে। ইহাকে প্রস্তবনাও বলা যায়। আইনের কোনো ধারাকে বুঝতে অসুবিধা হলে তখন প্রস্তাবনার সাহায্যে সেই অসুবিধা দূর করা যায়। এই আইনের উদ্দেশ্যই হলো শিল্পীদের কল্যাণসাধন করা এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শিল্পীদের কল্যাণসাধন ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করা একটি বিস্তৃত পরিসরের আলোচনা। কোনো শিল্পীদের অসুস্থতা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা কিংবা শিল্পীর পরিবারের চিকিৎসার সহায়তা বা শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করা।

এ আইনের ধারা ১ এর মূলকথা হলো বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ‘বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০০১’ একটি মৌলিক আইন। বাংলাদেশের সংবিধান ছাড়া বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের এ আইনটি অন্য কোনো আইনের অধীন নয়। বরং বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের জন্য প্রণীত বা প্রণীতব্য অন্যসব আইন এই আইনের অধীন।

এ আইনের ধারা ২-এর উপধারা ক থেকে ঝ পর্যন্ত এ আইনে ব্যবহৃত ৯টি শব্দের সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। এ শব্দগুলোর সংজ্ঞা এ আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। প্রত্যেক আইনের এ রকম সংজ্ঞা থাকে।

‘The Constitution of the People’s Republic of Bangladesh’ (Act of 1972)-এর অনুচ্ছেদ ১৫২-তে সংবিধানে ব্যবহৃত কতকগুলো শব্দের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। The General clauses Act, 1897 (Act of 1897) সর্বতোভাবে একটি ব্যাখ্যার আইন (Interpretation Act)।

সুতরাং ‘বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০০১’-এর ধারা ২-এর ক উপধারা থেকে ঝ উপধারা পর্যন্ত শব্দগুলো বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইনের বিধানমতে যে ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা এখানে প্রযোজ্য হবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ ধারা ২ (জ) এর আলোচ্য ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা হলো শিল্পী। এখানে শিল্পী অর্থ-সাহিত্যিক, স্থপতি, ভাস্কর, চিত্রকর, অভিনয় শিল্পী, সংগীত শিল্পী, নৃত্যশিল্পী, আবৃত্তিকার এবং সৃজনশীল কোন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিও অন্তর্ভুক্ত হবে। এখানে শিল্পী প্রত্যয়টি বিস্তৃত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

এ আইনের ধারা ৩-এর উপধারা ১ থেকে ২ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা, অভিন্ন সিলমোহর, সম্পত্তি অর্জন ও হস্তান্তর, মামলা রুজু করার অধিকার ইত্যাদি স্বীকৃতি রয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট নামক সংবিধিবদ্ধ সংস্থার প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হলো সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।

এ প্রতিষ্ঠানের একটি অভিন্ন বা সাধারণ সিলমোহর বা প্রতীকের বিধান এ ধারায় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান বা বিমূর্ত সংস্থা। এবং প্রাণহীন ব্যক্তি।

বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট একই সঙ্গে প্রাণহীন ব্যক্তি হওয়ার কারণে এ প্রতিষ্ঠান মামলা করতে পারে। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। তদ্রুপ কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের বিরুদ্ধেও মামলা করতে পারবে। তবে উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট এই নামে মামলা দায়ের করতে হবে।

এ ধরনের মামলা করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তার বর্ণনা দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে বর্ণিত রয়েছে। এ ধারায় বিধান অনুসারে বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের নির্বাহী কর্তৃত্বের বলে সম্পত্তি গ্রহণ, বিক্রয়, হস্তান্তর করতে পারবে। কেননা, আইনের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট একজন কৃত্রিম ব্যক্তি। সেই হিসেবে এ অধিকার বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের একান্ত ব্যক্তিগত অধিকার।

বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ধারা ৪-এ বর্ণিত বিষয় হলো এ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা। এধারায় প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া আছে। এ প্রতিষ্ঠানটি ঢাকায় হবে এবং এ ধারা অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানের দেশের অভ্যন্তরে শাখা খোলা সম্ভব।

এ আইনের ধারা ৫-এর বিষয়বস্তু হলো বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের পরিচালনা ও প্রশাসন বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের পরিচালনা ও প্রশাসন ট্রাস্টী বোর্ডের নিকট ন্যাস্ত।

আইনের ধারা ৬-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টী বোর্ড গঠন পদ্ধতি বিধৃত হয়েছে। যে কোনো প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টও এ পদ্ধতিতে অনুসৃত হবে। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টী বোর্ডে নিম্নবর্ণিত ১৭জন ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে গঠন করা হবে-

ক. সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী চেয়ারম্যান হিসেবে ১ জন
খ. সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে ১ জন
গ. স্পীকার কর্তৃক মনোনীত সংসদ-সদস্য ২ জন
ঘ. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক
ঙ. শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক
চ. অর্থবিভাগ মনোনীত প্রতিনিধি অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ জন
ছ. তথ্য মন্ত্রণালয় মনোনীত প্রতিনিধি অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১জন
জ. সরকার মনোনীত বিশিষ্ট শিল্পী ৮জন
ঝ. বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সদস্য সচিব হিসেবে ১ জন

উল্লেখ্য, অর্থবিভাগ মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১জন সদস্যের মনোনয়নের তারিখ থেকে ৩ বছর মেয়াদের জন্য সদস্য হবেন।

এ আইনের ধারা ৭-এর উপধারা (ক) থেকে (জ) পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যাবলি বিধৃত করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট এদেশের শিল্পীদের প্রতিষ্ঠান। এদেশের শিল্পীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের প্রতি এ প্রতিষ্ঠান অঙ্গীকারাবদ্ধ।

এ আইনের ধারা ৮-এর উপধারা ১ থেকে ৫ পর্যন্ত বোর্ডের সভার বিষয়ে বিধৃত হয়েছে। সভার বৈধতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন। এ সভার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতি না থাকলে সভার কার্যক্রম চলতে পারে না।

আইনের ধারা ৯-এর ১ থেকে ৪ উপধারায় বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিল বিষয়ে বিধৃত রয়েছে। শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের আয়ের উৎসসমূহ এ ধারায় বর্ণনা বিধৃত হয়েছে। এগুলো হলো সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত অনুদান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশি উৎস কর্তৃক প্রাপ্ত অর্থ, শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের নিজস্ব আয় ইত্যাদি উৎস হতে প্রাপ্ত আয় ট্রাস্ট্রের তহবিলে জমা থাকবে। তহবিলে জমাকৃত অর্থ এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখা যাবে এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তহবিল পরিচালিত হবে।

উল্লেখ্য, এ ধারার আলোচ্য তফসিলি ব্যাংক বলতে Bangladesh Bank Order, 1972 (P. O. No. 127 of 1972)-এর 2 (J) অনুচ্ছেদের বিধান প্রযোজ্য হবে। তহবিলের অর্থ বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা যাবে এবং তহবিলের অর্থ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করা যাবে।

এ আইনের ধারা ১০-এর বিধানুযায়ী বার্ষিক বাজেট বিবরণী বিষয়ে বিধৃত হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের অর্থবছর ১২ মাস সময়কাল, ইহা ১লা জুলাই থেকে শুরু হয় এবং ৩০শে জুন শেষ হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘অর্থবছর’ অর্থ জুলাই মাসের প্রথম দিবসে যে বছরের আরম্ভ। সরকারের বাজেটের অর্থ জনগণের অর্থ।

সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া বাজেটের অর্থের খাত স্থানান্তর করা যায় না। এ ধারার বিধানুযায়ী একাডেমি প্রতি অর্থবছরের সম্ভাব্য আয় ও ব্যয় এবং অর্থ বছরে সরকারের নিকট হতে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে একটি বাজেট সরকারের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হবে।

এ আইনের ধারা ৩৭-এর ১ থেকে ৩ উপধারায় হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা বিষয়ে আলোচনা প্রদত্ত হয়েছে। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বা তাঁর প্রতিনিধি বা চার্টার্ড একাউন্ট ফার্ম একাডেমির সকল হিসাব ও অন্যান্য নথিপত্র নিরীক্ষা করবেন এবং রিপোর্ট দিবেন। প্রতি বছর একাডেমির হিসাবগুলো নিরীক্ষা করা ও হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করা হবে। এ কাজে সরকারি বিধি পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।

বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বা তাঁর দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি চার্টার্ডা একাউন্ট ফার্ম বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের বা বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দখলভুক্ত সকল দলিল, নথি, নগদ অর্থ, রশিদ বা অন্য প্রকার সম্পত্তি পরীক্ষা করবেন। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব ও ক্ষমতা ব্যাপক পরিসরে বিস্তৃত।

এ কারণে Bangladesh Chartered Accountants Order, 1973 (P.O. No. 2 of 1973)-এর 2 (J) (ন)-এর মাধ্যমে যৌথ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যৌথ সংস্থাটি চার্টার্ড একাউন্টস ফার্ম। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও হিসাব নিরীক্ষিত করা যাবে। নিরীক্ষাকারী ব্যক্তি বা যৌথ সংস্থা নির্বাহী পরিষদ বা বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।

আইনের ধারা ১২-এর ১ থেকে ৩ উপধারায় বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ বিষয়ে বলা হয়েছে। সরকার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করবেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা বা প্রধান নির্বাহী বা প্রশাসনিক প্রধান। আইনে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের দায়িত্ব পালনে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করেছে। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের নির্বাহী কর্তৃত্ব ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উপর ন্যস্ত। তিনি বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য দায়ী থাকবেন। তিনি বোর্ড-এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দায়ী থাকবেন।

আইনের ধারা ১৩-এর বিধানুযায়ী বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে প্রদত্ত হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে থাকেন এবং এ ট্রাস্টের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করেন এ ট্রাস্ট্রের কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন দিয়ে তৈরি করা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা।

এই প্রতিষ্ঠানের আইনের ক্ষমতাবলে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রণীত বা প্রণীতব্য বিধি প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে কিছু কিছু কর্মকা-ের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারের আছে। ট্রাস্ট্রের কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ ইত্যাদি বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের আইনের বিধান অনুযায়ী সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সাংগঠনিক কাঠামো, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারণ করা হবে।

আইনের ধারা ১৪-এর বিধান হলো সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ বিষয়ে বিধৃত হয়েছে। এ ধারার বিধানুযাযী সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম কোনো অপরাধ নয়। এটাকে জেনারেল এক্সসেপশন বলে। তবে সরল বিশ্বাসের কৃতকর্ম অবশ্যই উইথ কেয়ার অ্যান্ড কসাস হয়।

আইনের ১৫ ধারায় ক্ষমতা অর্পণ বিষয়ে বিধান প্রদত্ত হয়েছে। ক্ষমতা অর্পণ করতে হয় আইনের দ্বারা, মৌখিকভাবে বা পত্রযোগে ইহা করা যায় না। আইনের উদ্দেশ্য জনগণের কল্যাণসাধন। ক্ষমতা অর্পণের দ্বারা আইনের উদ্দেশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনে। ক্ষমতা অর্পণের মাধ্যমে বিধি, প্রবিধান ইত্যাদি প্রণয়ন করা যায়।

আইনে এ ধারার বিধানুযায়ী বোর্ড যে কোনো সদস্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অন্য কোনো কর্মকর্তাকে অর্পণ করতে পারবেন। উল্লেখ্য, ক্ষমতা অর্পণের দ্বারা অর্পণকারী তাঁর আপন ক্ষমতা হারান না এবং দায়িত্ব মুক্তও হতে পারে না।

এ আইনের ১৬ ধারায় বিধানুযায়ী বিধি প্রণয়ন করতে পারবে। একটি আইনের পদ্ধতিগত নানা বিষয় থাকলেও তার ব্যবহারিক নানা বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা, নমুনা, গাইড লাইন থাকে বিধিতে, যা আইনে থাকে না। ‘বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০০১’ একটি প্রশাসনিক আইন। প্রশাসনিক আইন প্রধানত বিধিগত আইন। বিধি প্রণয়ন ব্যতীত আইন প্রয়োগে জটিলতা তৈরি হয়। বিধি আইনের অধীনে প্রণীত হয়। প্রবিধানও ইহার অন্তর্ভুক্ত।

বিধি একাধিক হতে পারে। প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার জন্য বিধি অতীব প্রয়োজন। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিধি প্রণীত হয়। বিধি এসআরও (Statutory Regulation Order) হিসেবে জারি হয় এবং গেজেটে প্রকাশিত হয়।

এ আইনের ১৭ ধারায় বিধানুযায়ী প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন ও গেজেটে প্রকাশ করতে হবে প্রবিধান। প্রবিধান প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মূলভিত্তি এবং গাইড লাইন। ইহাও এসআরও হিসেবে জারি হয়। মর্যাদার ও কার্যকরতার দিক থেকে সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন এবং আদেশের পরই প্রবিধানের স্থান।

কোনো আইনের অধীনে প্রণীত প্রবিধান উক্ত আইনের অংশ হিসেবে বিবেচিত এবং তদ্রুপভাবে প্রয়োগযোগ্য। যে আইনের অধীনে প্রবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে উক্ত আইনের অতিরিক্ত বা পরিপন্থি কোনো বিধান প্রবিধানে সন্নিবেশিত করা হলে তা বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

যে আইনের অধীনে প্রবিধান প্রণীত, উক্ত আইনের সাথে তা অবশ্যই সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। কোনো আইনের অধীনে প্রবিধান প্রণীত হলে উক্ত প্রবিধানের চেয়ে উক্ত আইন প্রাধান্য পাবে।

‘বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০০১’- আইনটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা, সাংবিধানিক আইন ও আইনের শাসন এবং মৌলিক মানবাধিকারকে সমুন্নত করেছে। এই আইন প্রবর্তিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট জাতির প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে নিয়ত গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে যাবে।

লেখক : গবেষক