যশোর বারে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আ’লীগের ভরাডুবি বিএনপি সমর্থিতদের চমক
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিজয়ীরা

যশোর বারে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আ’লীগের ভরাডুবি, বিএনপি সমর্থিতদের চমক

রবিউল ইসলাম : উৎসবের আমেজে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে হয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সম্পাদকীয় পদসমূহে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ভরাডুবি হলেও নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য ফোরাম।

সম্পাদকীয় আট পদে প্রার্থী দিয়ে ছয়টিতেই জয়লাভ করেছে আইনজীবী ঐক্য ফোরাম। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থীদের মধ্যে জয় পেয়েছেন মাত্র একজন। বাকি একটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

গত শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনে ৫০৬ ভোটারের মধ্যে ৪৯৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

রাত ১০টায় ফলাফল প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনার ইসমত হাসার। এসময় উপস্থিত ছিলেন সদস্য এম সামছুর রহমান, শহিদুর রহমান, আজিজুল ইসলাম ও শাহারিয়ার আলম।

নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য ফোরামের মোহাম্মদ ইসহক। তিনি পেয়েছেন ১৭২ ভোট। অন্যদিকে, এ পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের দুই প্রার্থীই পরাজিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ইদ্রিস আলী পেয়েছেন ১৬৩ ভোট ও আরেক প্রার্থী বর্তমান সভাপতি শরীফ নুর মোহাম্মদ আলী রেজা পেয়েছেন ১৫৮ ভোট।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদেও তাদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। সেক্ষেত্রে জাতিয়তাবাদী ফোরামের প্রার্থী জয়ী হতে না পারলেও চমক দেখিয়েছেন ফোরামের বহিস্কৃত সভাপতি আবু মোর্তজা ছোট। তিনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য ফোরামের প্রার্থীদের পিছনে ফেলে ৩২৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য ফোরামের নুরুজ্জামান খান পেয়েছেন ৮৯ ভোট ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল পেয়েছেন ৭১ ভোট।

গতবারের একচেটিয়া পদ দখলে রাখলেও এবার পদ নিয়ে কাড়াকাড়ির কারণে শীর্ষ আট পদের সাতটিই হারিয়েছেন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন ঐক্য ফোরাম।

নির্বাচনে সহসভাপতি দুই পদের একটি ঐক্য ফোরামের গাজী মাহফুজুর রহমান ২১৬ ভোট ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল ১৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ পদে অন্য প্রার্থী নাসিম আহম্মেদ বাবু ১৮৭, আবুল কায়েস ১৩৯ ও সিরাজুল ইসলাম লেন্টু পেয়েছেন ১৪৭ ভোট।

যুগ্ম সম্পাদক পদে ঐক্য ফোরামের জুলফিকার আলী জুলু ২৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ইমদাদুল হক ইমদাদ পেয়েছেন ১৪৭ ভোট ও ইদ্রিস আলী পেয়েছেন ৫০ ভোট।

সহকারী সম্পাদক পদে ঐক্য ফোরামের তাহমিদ আকাশ ২৬০ ও আব্দুল করিম মন্ডল ১৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের গোলাম নবী ১৫০, মিতা রহমান ১৪০ ও নব কুমার কুন্ডু পেয়েছেন ১৩৫ ভোট।

গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে ঐক্য ফোরামের মুস্তাকিম মোস্তফা খান ২৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে এছাড়া আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের জাহিদুল ইসলাম সুইট পেয়েছেন ১৮৮ ভোট।

শীর্ষ আট পদের সহসভাপতি খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল মান বাঁচিয়েছেন আওয়ামী সমর্থিত পরিষদের। অথচ এ আট পদে তাদের ছিলো আরও ১৪ প্রার্থী। তারা সবাই পরাজিত হয়েছেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের বিভক্ত হওয়াটাকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন সদস্যরা। তাদের এ হার থেকে শিক্ষা নেয়ার বিষয়টিও ভাবছেন কেউ কেউ।

তবে সদস্য পদে ঐক্য ফোরাম কোনো প্রার্থী না দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্যরাই নির্বাচিত হয়েছেন। বুলবুল হোসেন ৩২৪, নুর ইসলাম নুরুল ৩১৬, আফরোজা সুলতানা রনি ২৯৫, যুথিকা ঘোষ ২৮০ ও নাসিমা আক্তার রুবি ২৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ পদে পরাজিত হয়েছেন রফিকুল ইসলাম রফিক ২৬০ ও আকবর হোসেন ১৮৮।