টেকনাফে সারেন্ডার করা ১০১ ইয়াবাকারবারীকে দেড় বছর করে কারাদন্ড 
এজলাস; সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল, কক্সবাজার।

দুই লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা পাচার : কক্সবাজারে ৭ রোহিঙ্গার যাবজ্জীবন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : দুই লক্ষ ৮০ হাজার ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় ৭ রোহিঙ্গাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। একইসাথে দন্ডিতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরো ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) এ রায় ঘোষণা করেন।

দন্ডিতরা হলেন- আমির হামজার পুত্র এম. বিল্লাল হোসেন (২২), দিল মোহাম্মদের পুত্র ইয়ার মোহাম্মদ (২০), মোহাম্মদ আমু হোসনের পুত্র জামাল হোসেন (২০), শাকের আলমের পুত্র মনজুর আলম (১৯), মৃত সবির রহমানের পুত্র আবদুর রহমান (৫০), মৃত জয়নাল উদ্দিনের পুত্র মোঃ জাকির হোসেন (২৮) এবং জালাল হোসেনের পুত্র জাকির হোসেন (৫০)।

তারা সকলেই মিয়ানমারের আকিয়াবের নাগরিক। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ এবং আসামীদের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী (এসডিএল) অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম-৪ আদালতে মামলাটি পরিচালনা করেন।

একই কার্যালয়ের জেলা নাজির বেদারুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এসব এ তথ্য জানিয়েছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২ টার দিকে কোস্ট গার্ড টেকনাফ স্টেশনের একটি টিম টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের কাটাবুনিয়া থেকে ৭/৮ নটিকেল মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে এক অভিযান চালিয়ে ৭ জন মিয়ানমারের নাগরিক সহ একটি কাঠের তৈরি নৌকা আটক করে। পরে আটককৃতদের তল্লাশি করে ২ লক্ষ ৮০ হাজার ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার এবং কাঠের তৈরি নৌকাটি জব্দ করা হয়।

এ ঘটনায় কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশনের পেটি অফিসার মোঃ আরশাদুল ইসলাম বাদী হয়ে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এম. বিল্লাল হোসেন, ইয়ার মোহাম্মদ, জামাল হোসেন, মনজুর আলম, আবদুর রহমান, মোঃ জাকির হোসেন এবং জাকির হোসেন-কে আসামী করে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ০৬/২০২০ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ৯৯৬/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৩৫৯/২০২২ ইংরেজি।

বিচার ও রায়

মামলাটি বিচারের জন্য কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য রোববার দিন ধার্য করা হয়।

রায় ঘোষণার দিনে বিচারক কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আসামীদের ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৮/৪১ ধারা সহ ৩৬ (১) এর ১০ (গ) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে উপরোক্ত রায় ঘোষণা করেন।

মামলাটি চার্জ (অভিযোগ) গঠনের পর মাত্র এক বছরের মধ্যে রায় প্রদান করা হলো। রায়ে দন্ডিতদের সাজার মেয়াদ শেষ হলে আইনানুগ ব্যবস্থায় তাদেরকে মিয়ানমারে পুশব্যাক করার জন্য বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল কক্সবাজারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন।