প্রসঙ্গ : আইন পেশার ইতিহাস ও আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা
অ্যাডভোকেট দীপজয় বড়ুয়া

কোয়াশমেন্ট কি? মামলার কার্যধারায় কখন কোয়াশ হয়, কখন হয় না?

দীপজয় বড়ুয়া: আদালতের ক্ষমতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোন মামলার মাধ্যমে আসামীকে হাজতে দেয়া হলে। আইনত মামলাটি বাতিলযোগ্য এ প্রশ্ন তুলে, হাইকোর্ট বিভাগের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১ –ক ধারার আশ্রয় নেয়া যায়। সে সঙ্গে জামিন ও চাওয়া যায়।প্রচলিত আইনের ভাষায় এই আকারের চ্যালেঞ্জকে কোয়াশমেন্ট বলা হয়।

সাধারণ অর্থে বলা যায়, আদালতের ক্ষমতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোন মামলার মাধ্যমে যখন কোন আসামী কিংবা কোন বিচার প্রার্থীর অধিকার খর্ব করা হয় তখন ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১-ক ধারা মোতাবেক আদালতের উক্ত আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতায় আশ্র্য় নিয়ে প্রতীকার পাওয়া যায় তাই কোয়াশমেন্ট।

অধস্তন আদালত হতে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা স্থানান্তর

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ- ১১০ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত বিভাগের কোন অধঃস্তন আদালতের বিচারাধীন কোন মামলায় এই সংবিধানের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত আইনের এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা এমন জন-গুরুত্বসম্পন্ন বিষয় জড়িত রহিয়াছে, সংশ্লিষ্ট মামলার মীমাংসার জন্য যাহার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন, তাহা হইলে হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত আদালত হইতে মামলাটি প্রত্যাহার করিয়া লইবেন এবং
(ক) স্বয়ং মামলাটির মীমাংসা করিবেন; অথবা
(খ) উক্ত আইনের প্রশ্নটির নিষ্পত্তি করিবেন এবং উক্ত প্রশ্ন সম্বন্ধে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের নকলসহ যে আদালত হইতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হইয়াছিল, সেই আদালতে (বা অন্য কোন অধঃস্তন আদালতে) মামলাটি ফেরত পাঠাইবেন এবং তাহা প্রাপ্ত হইবার পর সেই আদালত উক্ত রায়ের সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া মামলাটির মীমাংসা করিতে প্রবৃত্ত হইবেন।

উচ্চ আদালত অন্তর্নিহিত ক্ষমতা তিনটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যথা-
১) ফৌজদারী কার্যবিধি মোতাবেক প্রদত্ত কোন আদেশ কার্যকরী করার জন্য,
২) আদালতের কার্যক্রমের যাতের অপব্যবহার না হয় তজ্জন্য, বা
৩) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকল্পে।

উপরোক্ত ধারা হাইকোর্ট বিভাগকে এই বিধিতে অন্তর্ভূক্ত নেই এরূপ আবেদন গ্রহণ করার ক্ষমতাও দেয়। আবেদনটি যদিও এই বিধির কোন বিধান অনুসারে পেশ করা হয়নি, তবুও হাইকোর্ট বিভাগ যদি মনে করেন যে, ন্যায়বিচারের খাতিরে এই আবেদন গৃহীত হওয়া উচিত, তাহলে হাইকোর্ট বিভাগ আবেদনটি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করবেন। কোন বিশেষ ব্যবস্থা বিহিতের যেখানে কোন বিধান নেই সেখানে হাইকোর্ট বিভাগ কোন আপীল বা রিভিশন দায়ের না করলেও উক্ত বিভাগ তার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করে ম্যাজিষ্ট্রেটের যে অভিমত ভিত্তিহীন হয়েছে কিনা সম্পূর্ণ ভ্রান্তিপূর্ণ হয়েছে, তা সংশোধন করতে পারেন।

মামলার কার্যধারায় কখন কোয়াশ হয়

38 DLR(AD) (1986) (AD)18 Farque Ahamed Vs. Abdul Quader মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “এজাহারে আসামীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কথা প্রকাশিত হলে মামলার কার্যধারা কোয়াশ করা যাবে না।যখন প্রাথমিক অবলোকনে মামলা দৃষ্টিগোচরে আসে এবং এর ভিত্তিতে অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ করা হয়, তখন সুপ্রীম কোর্ট মামলা কোয়াশ করতে অগ্রসর হন না”।

58 DLR(AD)(2006)63 A.H.S.Rahman Vs. The State মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “যেহেতু প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে প্রার্থী-আসামির বিরুদ্ধে প্রাথমিক মামলা(prima facie case) প্রকাশিত হয়েছে এবং ওই প্রেক্ষিতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে, সেহেতু প্রার্থীর মামলা কোয়াশ করার যৌক্তিকতা নেই”।

27 DLR(1975)93 মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “যেক্ষেত্রে আমলযোগ্য কোন অপরাধ প্রকাশ না পায় অথবা কোন ধরনের কোন অপরাধ প্রকাশিত না হয়, সেক্ষেত্রে পুলিশের তদন্ত শুরু করার কোন এখতিয়ার নেই। এরূপ মামলার কার্যধারা কোয়াশ হওয়ার যোগ্য”।
57 DLR(AD)(2005)114 মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর সমগ্র বক্তব্য গ্রহণ করে দেখা যায় যে, প্রাথমিক মামলা(prima facie case) প্রকাশিত হয়নি। ফলে মামলা কোয়াশ করা বেআইনি নয়”।

মামলার কার্যধারায় কখন কোয়াশ হয় না

3 LNJ(AD)(2014) 9 ACC Vs. MD.Bazlur Rashid & Others মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “মামলাটি যখন তদন্তাধীন তখন হাইকোর্ট বিভাগ মামলার কার্যধারা কোয়াশ করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় মামলার কার্যধারা কোয়াশ করা যায় না। মামলার মঞ্জরীর প্রক্রিয়াটি প্রশাসনিক কাজ এবং তা বিচারিক যাচাই সাপেক্ষ নয় বিধায় হাইকোর্ট বিভাগ কার্যধারা কোয়াশ করে মারাত্নক বেআইনি কাজ করেছেন।উপরোক্ত বিরোধীয় বিষয়টি বিচারের বিষয়”।

73 DLR(2021) 598 Safiqur Rahman Vandari Vs. The State মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “ যেক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ বিষয়াদি জড়িত রয়েছে এবং প্রাথমিক মামলা প্রকাশিত হয়েছে, সেক্ষেত্রে কার্যধারা কোয়াশ বা বাতিল করার সুযোগ নেই”।

66 DLR(2014)108 Mohidul Islam Vs. The State, 11 BLC(AD) (2006) 206 M.Sahabuddin Vs.The State মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “ কোয়াশিং কার্যধারায় আসামীপক্ষের তথ্য উপকরণ(দলিলপত্র) বিবেচ্য নয়”।

1 BLC(AD)(1996)176 Rahela Khatun Vs. Md.Abul Hassan মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “ আসামীপক্ষের তথ্য/মামলা যা প্রসিকিউশনের উপকরণের অংশ-ই হয়নি তার ভিত্তিতে কোনো ফৌজদারি কার্যধারা কোয়াশ করা যাবে না”।

তাই বলা যায় যে, আদালতের ক্ষমতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোন মামলার মাধ্যমে যখন কোন আসামী কিংবা কোন বিচার প্রার্থীর অধিকার খর্ব করা হয় তখন ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১-ক ধারা মোতাবেক আদালতের উক্ত আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতায় আশ্র্য় নিয়ে প্রতীকার পাওয়া যায় তাই কোয়াশমেন্ট।

লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।

তথ্য কণিকা : ফৌজদারী কার্যবিধি-১৮৯৮- জহিরুল হক, মোঃ মোসলেম উদ্দিন খান, ফৌজদারি কার্যবিধির ভাষ্য-গাজী শামসুর রহমান, উকিপিডিয়া, তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ম্যাজিষ্ট্রেটের করণীয়- বিচারপতি মোঃ আজিজুল হক, ফৌজদারী মামলা পরিচালনা পদ্ধতি-বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া।