হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারী-পুরুষ সমান অধিকার
অ্যাডভোকেট মোকাররামুছ সাকলান

উচ্চ আদালতের সম্বোধনে ‘𝗬𝗼𝘂𝗿 𝗛𝗼𝗻𝗼𝘂𝗿’ নাকি ‘𝗬𝗼𝘂𝗿 𝗟𝗼𝗿𝗱𝘀𝗵𝗶𝗽’ ?

মোকাররামুছ সাকলান:

আমাদের আইন ব্যবস্থার মূল গ্রথিত হয়েছে বৃটিশদের হাতে কিন্তু আমার বলতে ভালো লাগে বৃটিশদের মগজে। আমাদের ফৌজদারি কিংবা দেওয়ানী বিচার ব্যবস্থার আইন সমূহ বৃটিশ শাসনামলে তৈরী করা সেই নিয়মই এখনো আমরা আমাদের মত করে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে মেনে চলি। আইনের ইতিহাস পড়তে গিয়ে কিংবা বর্তমানে প্রচলিত আইন সমূহে কোথাও পাওয়া যায় না যে আদালতে একজন আইনজীবী সঠিক কোন শব্দগুলো ব্যবহার করে আদালতে সম্বোধন করবে।

The Bangladesh Legal Practitioner’s and Bar Council Order, 1972 এর ১০(সি) নং আদেশ অনুযায়ী আইনজীবীদের জন্য standard of professional conduct and etiquette কি হবে তা নির্ধারন করবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। ১৯৭২ সালের আইনের পর বার কাউন্সিল কর্তৃক নতুন কোন professional conduct and etiquette প্রনয়ন হয়নি। বর্তমানে আমরা যে professional conduct and etiquette মেনে চলি তা তৈরি হয়েছে ১৯৬৯ সালে। আমাদের বর্তমান professional conduct and etiquette এ লিখা আছে “[Framed in exercise of the power conferred on the Bangladesh Bar Council by Section 48(q) of the Legal Practitioners & Bar Council Act, 1965 and adopted by a resolution of the Bar Council on the 5th January, 1969.] [vide Article 44(g)]”

এই professional conduct and etiquette এ মোট অধ্যায় ৪ টি।

ক) Conduct with Regard to Other Advocates

খ) Conduct with Regard to Clients

গ) Duty to the Court.

ঘ) Conduct with Regard to the Public in General.

মোট ০৪টি অধ্যায়ে মাঝে ৩টি অধ্যায় Conduct সংক্রান্ত হলেও ৩য় অধ্যায়টি Duty সংক্রান্ত। অর্থাৎ আদালত সংক্রান্তে আইনজীবীগনকে কর্তব্য বা Duty পালনের কথা বলা হয়েছে। এখানে আদলাতের সাথে  আচরন বা Conduct কেমন হবে তার কোন বিবরন নেই।

আদালতের প্রতি Duty বা কর্তব্যের শুরুতেই বলা হয়েছে যে, “It is the duty of an Advocate to maintain towards the courts a respectful attitude, not for the sake of the temporary incumbent of the judicial office, but for the maintenance of its supreme importance”.

অর্থাৎ প্রত্যেক আইনজীবীকেই আদালতের প্রতি Supreme Importance বা সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে Respectful Attitude প্রকাশ করতে হবে। এটি যেকোন পরিস্থিতিতে প্রত্যেক আইনজীবীর জন্য কর্তব্য বা Duty.

এখানে ঠিক কি শব্দ ব্যবহার করলে আদালতের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে Respectful Attitude করা যাবে তার কোন বর্ননা নেই।

কিন্তু দীর্ঘ কাল ধরেই উচ্চ আদালতে বিশেষ করে সুপ্রীম কোর্টের উভয় বিভাগে আদালতের কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে আদালতকে আইনজীবীগন Your Lordship বলে সম্বোধন করে আসছে। অন্যদিকে জেলা জজ পর্যায়ের সকল আদালতে Your Hounour বা হুজুরের আদালত বা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন দেখা যায় আইনজীবীগন Sir বা স্যার বলে সম্বোধন করে আসছেন। জেলা জজ আদালতে Your Honour বলে আইনজীবী গন বক্তব্য শুরু করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আদালতকে Sir সম্বোধন করেই সাবমিশন শেষ করতে দেখা যায়।

সঠিক কোন আইনে আদালতকে কি বলে সম্বোধন করা হবে তার কোন সুস্পষ্ট লিখিত নিয়ম না থাকলেও প্রচলিত নিয়মেই উচ্চ আদালতে Your Lordship এবং জেলা পর্যায়ের আদালতে Your Honour প্রচলন হয়ে আসছে।

জেলা জজ আদালতের পর্যায়ে Sir বা Your Honor যেমন ধারাবাহিক ভাবে ব্যবহৃত হয় তেমনি উচ্চ আদালতে Your Lordship ধারাবাহিকভাবে ব্যবহৃত হয়।

একভাবে বললে উচ্চ আদালতের সম্বোধনে Your Lordship বলা এখন Custom যা প্রচলিত আইন হিসাবেই হয়তো অধিকাংশ আইনজীবীগন বাধ্যকর হিসাবে মনে করেন। এক্ষেত্রে আদালতের প্রতি বিশেষ করে উচ্চ আদালতে সম্বোধনের ক্ষেত্রে Supreme Importance  বা সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে Respectful Attitude প্রকাশ করতে গিয়ে Your Lordship এর কোন বিকল্প কোন শব্দ আইনজীবী গন ব্যবহার করেন না।

এদিকে Notification No. 181-G  তারিখ. 22-10-2012 এর মাধ্যমে হাইকোর্ট রুলসে Chapter XVIA সংযুক্ত করা হয়েছে যেটির ১(৩) বিধিতে আদালতে পালনীয় ডেকোরাম এর মধ্যে বিচারককে সম্বোধনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিধান অনুসরণের কথা লেখা আছে- “Advocates or any other person addressing the Court must do so with utmost respect to the Court and in a disciplined manner maintaining the tradition so long prevailing and mode of address to the judge shall be the same irrespective of gender of the Judge”

২০১২ সালে হাইকোর্ট রুলসে আদালত বিশেষ করে উচ্চ আদালতকে সম্বোধন বা addressing এর জন্য maintaining the tradition so long prevailing অর্থাৎ দীর্ঘদিনের রীতিকে অনুসরন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অতএব দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী উচ্চ আদালতের সম্বোধনে Your Lordship বলাই এখন আইন।

কিন্ত ইদানীং ফেসবুকে কয়েকজন আইনজীবীর ওয়ালে ভিন্ন কথা।  সেখানে দেখছি দেখছি ৪ঠা অক্টোবর ১৯৮২ এর Notification No. 8026-G.- তে বলা হয়েছে যে “The Chief Justice of Bangladesh has been pleased to desire that on and from 10th October 1982, the Chief Justice, Judges of the Appellate Division and of the High Court Division of the Supreme Court should be addressed as “Your honour” instead of “My lord” or “Your lordship”. By order of the Chief Justice NAIMUDDIN AHMED, Registrar.

মূলত ৪ঠা অক্টোবর ১৯৮২ এর Notification No. 8026-G এর আইনগত মর্যাদা রয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা করা যেতে পারে Notification No. 181-G  তারিখ. 22-10-2012 এর আলোকে।

২০১২ সালের Notification No. 181-G কার্যকর হয় তখন লিখা ছিলো

“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৭(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে, হাইকোট বিভাগের রীতি ও পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রচলিত Supreme Court (High Court Division) Rules, 1973 সংশোধনক্রমে উহাতে আনীত সংযোজন, বিয়োজন, প্রতিস্থাপন ও পরিবর্তনসহ সমন্বিত আকারে Supreme Court of Bangladesh (High Court Division) Rules, 1973 নামে প্রকাশ করিল ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৭(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১৯৮২ এর Notification No. 8026-G পাশ হয়েছিলো কিনা তা দেখা প্রয়োজন। যদি আলোচনার খাতিরে ধরে নেই ১৯৮২ এর Notification No. 8026-G যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাশ হয়েছিলো তবে সেক্ষেত্রে ২০১২ সালের Notification No. 181-G এর পর তা (১৯৮২ এর নির্দেশনা) এখন আর কার্যকর নেই। কারন ২০১২ সালের সংশোধনী সুস্পষ্টতই ১৯৮২ সালের নির্দেশনাকে এড়িয়ে গেছে এবং maintaining the tradition so long prevailing অর্থাৎ দীর্ঘদিনের রীতিকে অনুসরন করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে বৃটিশ আমলের তৈরী আইন বলেই যে এই Your Lordship সম্বোধন করা যাবে না তা মনে করছি না। বরং Your Lordship এ সাচ্ছন্দ্য বোধ করি যা দীর্ঘদিন ধরে অনুসৃত প্রথা বা Custom. তাই সর্বোচ্চ আদালতের সম্বোধনে ২০১২ সালের সংশোধিত নির্দেশনা অনুযায়ী maintaining the tradition so long prevailing অর্থাৎ দীর্ঘদিনের রীতিকে অনুসরন করে Your Lordship ব্যবহার করছি।

লেখক- অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

(বিঃদ্রঃ আলোচনাটি সম্পূর্ণ আইনের বিশ্লেষণ পূর্বক আলোচনা। যে কেউ এর ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন ও স্বাধীন। আইনের সাধারণ ছাত্র হিসাবে আমি নিজের মত প্রকাশ করেছি মাত্র।)